প্রত্যেক উপজেলা বা অঞ্চলের স্বকীয়তার আঙ্গিকে বিশেষভাবে স্থান ভিত্তিক বৈশিষ্ট্যমন্ডিত একটি ভাষা থাকে, সে ভাষাটি কথ্য ভাষা। সাধারণত কথ্যভাষা আঞ্চলিক ভাষানামে পরিচিত। অভয়নগরের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যমন্ডিত অঞ্চলিক ভাষা থাকলে্ও বাংলা ভাষার সাথে এর পার্থক্য সামান্য। ফলে আঞ্চলিক ভাষাকে সাধারণ ভাষাভাষী আগন্তকের কাছে দুর্বোধ্য করে তোলেনি।
চট্টগ্রাম, নোয়াখালী কিংবা সিলেটের আঞ্চলিক ভাষা শুনে সহজে বলা যায় কোন অঞ্চলের ভাষা কিন্ত অভয়নগরের আঞ্চলিক ভাষা দিয়ে এরুপ কোন অনুমান করা যায় না। অভয়নগরের অধিবাসীর ভাষা বাংলা হলেও আঞ্চলিক ভাষায় আরবি ও ফারসি ভাষার ছাপ সুষ্পষ্ট। এ অঞ্চলের উপভাষার মতো অধিকসংখ্যক আরবি, ফারসি, উর্দু ও হিন্দি শব্দের ব্যবহার বাংলাদেশের তেমন বেশি অঞ্চলে লক্ষ্য করা যায় না।
আদি কাল হতে অভয়নগরের মানুষ সাংস্কৃতিক ও সংগঠনমনা হিসেবে পরিচিত। সম্মিলিত প্রয়াস তাদের মজ্জাগত। সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিকাশের পর হতে অভয়নগরের সচেতন জনগণ নিজেদের পরিস্ফুটনে সমন্বিত প্রয়াস অব্যাহত রেখে আসছেন। সামগ্রীক উন্নয়নে জাতিধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একচ্ছত্রে, একগুচ্ছে, সম্মিলিতভাবে কোনরুপ মতভেদ ব্যতিরেকে কাজ করেন। প্রাচীন আমলে সোমসপুর ও ভাটপাড়া গ্রামে পরিকল্পিত সমাজ সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের সমন্বিত যাত্রার শুভ সুচনা।
এরপর বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও আর্থনৈতিক সংগঠন গড়ে ওঠে। বর্তমানে উপজেলায় ৫টি পাবলিক লাইব্রেরী, ২২টি গ্রামীন ক্লাব, ৩টি সাহিত্য সমিতি, ৭টি নাট্যদল ও ৩২টি খেলার মাঠ সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার বিকাশে শুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে। ১৭৯৭ খ্রিঃ হুগলী হতে আগত জমিদার বনমালী বসুর উদ্যোগে শ্রীধরপুর জমিদার বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠিত শ্রীধরপুর নাট্যঙ্গণ; ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত আজাদ স্পোটিং ক্লাব; ১৯৫৭ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠিত হয় রোটারী ক্লাব অব নওয়াপাড়া; ১৯৪০ খ্রিঃ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মশিয়াহাটী সাংস্কৃতিক পরিষদ। এগুলো অভয়নগরের কয়েকটি উল্ল্যেখযোগ্য সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
যশোর জেলা খই, খেজুর গুড় ও জামতলার মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। তাছাড়া যশোর জেলাটিকে বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী বলা হয়।
যশোরের বিখ্যাত খাবার হকদানা, ছাক্কা, ডিমের খাট্টা, কাঁঠালের বিচি দিয়ে কুকড়োর (মুরগি) মাংস, চুই ঝাল খাসির মাংস যশোর অঞ্চলের শত বছরের রান্নার ইতিহাসকে সমুজ্জ্বল রেখেছে। যশোরের প্রায় সবার প্রিয় খাবার ঘাটকোল। প্রচলিত নাম ঘেঁটকচু।হকদানা, ছাক্কা, ডিমের খাট্টা, কাঁঠালের বিচি দিয়ে কুকড়োর (মুরগি) মাংস, চুই ঝাল খাসির মাংস যশোর অঞ্চলের শত বছরের রান্নার ইতিহাসকে সমুজ্জ্বল রেখেছে। যশোরের প্রায় সবার প্রিয় খাবার ঘাটকোল। প্রচলিত নাম ঘেঁটকচু।
জামতলার মিষ্টি হলো বাংলাদেশের যশোর জেলার জামতলা বাজারে উৎপন্ন একটি বিখ্যাত মিষ্টি। এটি ছানা দিয়ে তৈরি গোলাকৃতির একটি মিষ্টি যা ঘন চিনির রসে ডুবানো থাকে। এই মিষ্টি রসগোল্লার একটি প্রকরণ। এটি দেখতে কিছুটা লালচে বা বাদামী রংয়ের হয়ে থাকে। জামতলা বাজারের সাদেক আলী নামক জনৈক ব্যক্তি এই মিষ্টি তৈরি করেন বলে এটি সাদেক গোল্লা নামেও পরিচিত।
যশোর কে ফুলের রাজধানী বলা হয় কেননা যশোরের গদখালি থেকে বাংলাদেশের ৮০% ফুল সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশের সব থেকে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল যশোরে অবস্থিত। যশোরে বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে যশোর বিমানবন্দর নির্মিত হয়েছিল যা এখন আন্তর্জাতিকীকরণের কাজ চলছে।
ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে গৌড়ের শাসনকর্তা দাউদের একজন বিশ্বস্ত সহযোগী শ্রীহরি ১৫৭৪ সালের যশোরের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং স্বাধীন যশোর রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।