কলাপাড়া পটুয়াখালী জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। উপজেলা শহর খেপুপাড়া নামেও পরিচিত। এর আয়তন ৪৯২.১০২ বর্গ কিলোমিটার । উত্তর ও পশ্চিমে আমতলী উপজেলা, পূর্বে রাবনাবাদ চ্যানেল ও গলাচিপা উপজেলা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা এই উপজেলায় অবস্থিত। জেলা শহর থেকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের দূরত্ব প্রায় ৭০.৫০ কিলোমিটার। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখার বিরল সুযোগ থাকায় কুয়াকাটা বিশ্বের অনন্য পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
বাঙ্গালি সংস্কৃতির পাশাপাশি আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এ উপজেলাকে আরও বেশী বৈচিত্র্যময়, আকর্ষণীয় ও সমৃদ্ধ করে তুলেছে।
১৯০৬ সালে কলাপাড়া থানা গঠিত হয় এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। কলাপাড়া উপজেলা মোট ১২ টি ইউনিয়ন ও ২ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। ইউনিয়নের নাম হলো- চাকামইয়া, টিয়াখালী, লালুয়া, মিঠাগঞ্জ, নীলগঞ্জ, মহিপুর, লতাচাপলী, ধানখালী, ধুলাসার, বালিয়াতলী, ডালবুগঞ্জ ও চম্পাপুর এবং পৌরসভার নাম হল কলাপাড়া ও কুয়াকাটা।
কলাপাড়ার একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। সমবায়ের মাধ্যমে কলাপাড়ায় বৃটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম বায়ু চালিত ধান ভাঙানো কল। ,তেল কল, ম্যাচ ফ্যাক্টরি, ছাপাখানা, সিনেমা হল, সমবায় মার্কেট ও আরো অনেক প্রতিষ্ঠান। সমবায় আন্দোলন এখন ঝিমিয়ে পড়েছে।
দেশের চারটি রাডার স্টেশনের একটি কলাপাড়ায় অবস্থিত। ১৯৭৬ সালে কলাপাড়ায় বিদ্যুৎ পৌঁছে। টেলিফোন সুবিধাও পৌঁছে গেছে একই সময়ে। বাংলাদেশের চারটি ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রের একটি কলাপাড়ার অন্ধারমানিক নদীর মোহনায় অবস্থিত। কলাপাড়া মৎস্যবন্দর হিসেবেও খ্যাত।
বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের রূপকল্প-২০২১ এর লক্ষ্য অর্জন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে সেবার মান বৃদ্ধি ও জনগণের দোরগোড়ায় তথ্য ও সেবা পৌঁছে দিতে এবং প্রশাসনিক কাজে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষে উপজেলা প্রশাসন 'কলাপাড়া উপজেলা তথ্য বাতায়ন' নামে একটি ওয়েবসাইট খুলেছে। উপজেলার অধিবাসীসহ দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ এ উদ্যোগের মাধ্যমে উপকৃত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন ৯নং সেক্টরের অধীন তৎকালীন পটুয়াখালী জেলা একটি সাব-সেক্টর। পটুয়াখালী-বরগুনার ১০টি থানা নিয়ে গঠিত এই পটুয়াখালী সাব-সেক্টর।
১৮৬৭ সালের ২৭ মার্চ কলিকাতা গেজেটে পটুয়াখালী মহকুমা সৃষ্টির ঘোষণা প্রকাশিত হয়। ১৮৭১ সালে পটুয়াখালী মহকুমায় রূপান্তরিত হয়
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ। নদী বিধৌত পটুয়াখালী জেলার খাল-বিল, পুকুর, নালা, নিম্নভূমি গুলো মৎস্য সম্পদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই জেলার নদী মোহনাগুলো ইলিশ মাছের জন্য বিখ্যাত। পটুয়াখালী জেলার বনাঞ্চলের পরিমাণ খুবই কম।
পটুয়াখালী জেলার বিখ্যাত খাবার মহিষের দই, বাপ্পি এবং কুয়াকাটা জন্য বিখ্যাত। পটুয়াখালী জেলাটি বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক অঞ্চল, এটি আমাদের দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। আয়তনে এ জেলাটি প্রায় ৩২২০.১৫ বর্গ কিমি।
দীর্ঘ ৮ মাস পাক-হানাদারদের হাতে অবরুদ্ধ থাকার পর একাত্তরের ৮ ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদার মুক্ত হয় এই জেলা। এইদিনে একদিকে স্বজন হারানোর বিয়োগ ব্যাথার দীর্ঘশ্বাস, অন্যদিকে মুক্তির আনন্দে উদ্বেল, আর সৃষ্টি সুখের উল্লাস । হৃদয় উজাড় করে বরণ করে নেয় পটুয়াখালীবাসী হানাদার মুক্ত এই দিনটিকে।