জনশ্রুতি আছে যে, বৃটিশ শাসন আমলে কাঠালিয়ায় বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠালের হাট বসতো। তাই এর নামকরণ করা হয় কাঠালিয়া। তবে নামকরণ নিয়ে ভিন্নমতও রয়েছে। অনেকে মনে করেন এ এলাকায় কাঠ সংগ্রহ করতে বিভিন্ন জায়গা হতে কাঠুরিয়ারারা আসত, কাঠুরিয়া হতে এ এলাকার নাম কাঠালিয়া হয়েছে। এছাড়া এ এলাকার বিভিন্ন খাল-বিল ও নদীতে প্রাপ্ত হলদে ডিমওয়ালা কাঠালি চিংড়ি হতে কাঠালিয়া উপজেলার নামকরন হয়েছে বলে অনেক প্রবিন ব্যক্তি মনে করেন।
এ এলাকা বৃটিশ আমলের পূর্বে মোগল আমলে সৈয়দপুর পরগণার অংশ ছিল। একজন সুপার অব নায়েবের মাধ্যমে কাঠালিয়া, ভান্ডারিয়া, বামনা, বেতাগী, মঠবাড়িয়া ও বাকেরগঞ্জ উক্ত পরগণার অধীনে ছিল। এক সময় কাঠালিয়া-পিরোজপুর মহাকুমার অধীনে ছিল। তখন কাঠালিয়া-ভান্ডারিয়া মিলে একটি নির্বাচনী এলাকা ছিল। পরে ঝালকাঠি মহাকুমা উন্নীত করায় তখন কাঠালিয়া-ঝালকাঠি মহাকুমার অধীনে আসে এবং কাঠালিয়া-রাজাপুর একটি নির্বাচনী এলাকা হিসেবে পরিচালিত হয়। বর্তমানে কাঠালিয়া উপজেলার অধীন আমুয়া ইউনিয়নে একটি জলথানা ছিলো, প্রশাসনিক অফিসগুলোর মধ্যে খাদ্যগুদাম, হাসপাতাল, সাব রেজিষ্ট্রার অফিস আমুয়াতে ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস কাঠালিয়া সদরে স্থানান্তর করা হয় এবং খাদ্যগুদাম ও হাসপাতাল আমুয়ায় বিদ্যমান। ঐ এলাকায় চোর ডাকাতের উৎপাত সৃষ্টি হওয়ায় উক্ত জলথানা কাঠালিয়ায় স্থানান্তর করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৩৭ সনে কাঠালিয়া পুলিশ স্টেশন স্থাপিত হয়। ১৯৮৬ সনে উপজেলা সৃষ্টি হয়।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে কাঠালিয়ার স্বাধীনতাকামী মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থান এবং ৭০ এর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৎকালীন সাংসদ মোঃ এনায়েত হোসেন খান ও মোঃ নুরুল ইসলাম ভান্ডারী কাঠালিয়ার বীরজনতাকে সুসংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে কাঠালিয়ার বীরমুক্তিযোদ্ধাগণ ভারত ও সুন্দরবনে চলে যান এবং সেখান থেকে গ্রুপ গঠন করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর বেশ কিছু যুদ্ধ হয়। ১৯৭১ সালে ০২ নভেম্বর বীরমুক্তিযোদ্ধারা কাঠালিয়া থানা আক্রমণ করে থানার সকল অস্ত্র নিয়ে যান।
স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী এ উপজেলায় ব্যপক গণহত্যা চালায়। কাঁঠালিয়া উপজেলার বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে রয়েছে: আমুয়ার বাঁশবুনিয়া দাশেরবাড়ি বধ্যভূমি ও আওরাবুনিয়া হাইস্কুল মাঠ বধ্যভূমি। তবে উপজেলার আওরাবুনিয়া হাইস্কুল মাঠ বধ্যভূমির অবস্থান সুনির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করা যায়নি।১৯৭১ সালের ২৫ মে আমুয়া ইউনিয়নের বাঁশবুনিয়া এলাকায় ব্যপক গণহত্যায় ৪০ জন লোক শহীদ হন বলে জানা যায়। ১৯৭১ সালের ২৩ জুন কাঠালিয়ার আওরাবুনিয়া এলাকায় পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাকান্ডে শহীদ হন ২৯ জন। এছাড়াও কাঠালিয়ার চাদের হাট বাজার সংলগ্ন এলাকায় পাক হানাদার বাহিনী হামলা আরো ৫ জন শহীদ হন।
১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে ঝালকাঠি জেলা প্রতিষ্ঠিত হলে ঝালকাঠি শহরকে জেলা শহরের মর্যাদা দেওয়া হয়।
একাত্তরের ২৩ নভেম্বর ৯নং সেক্টরের মধ্যে এ জনপদ সবার প্রথম হানাদার মুক্ত হয়েছিলো।
নদী বন্দরের জন্য ঝালকাঠি সবসময় ইউরোপীয়দের আকর্ষণ করেছে। ফলে বিভিন্ন সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ডাচ ও ফরাসিরা এখানে ব্যবসা কেন্দ্র খুলেছিল। বাণিজ্যিক গুরুত্বের জন্য ঝালকাঠিকে দ্বিতীয় কলকাতা বলা হত। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঝালকাঠি সদর উপজেলার রেজাউল করিম ২৪ সদস্য বিশিষ্ট মানিক বাহিনী গড়ে তোলেন।
ঝালকাঠির জনপ্রিয় খাবার: ঝালকাঠি প্রাকৃতিক ফল যেমন আম, কলা, জলপাই, কাঠাল, তাল, লিচু, নারিকেল, আমড়া, পেয়ারা।
শহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২২.৬৪০৮৯৩° উত্তর ৯০.১৯৮৮০৩° পূর্ব। সমুদ্র সমতল থেকে শহরটির গড় উচ্চতা ১১ মিটার। ঝালকাঠী শহর ঢাকা থেকে ১৯৫ কি.মি. দক্ষিণে এবং বরিশাল বিভাগীয় শহর থেকে ২০ কি.মি. পশ্চিমে সুগন্ধা নদীর তীরে অবস্থিত। সুগন্ধা নদী থেকে বাসন্ডা খাল নামে একটি শাখা নদী উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে শহরকে দু'ভাগে বিভক্ত করেছে। শহরের ভিতরে আরও ১২টি খাল প্রবহমান রয়েছে।