এ নদী তীরে গড়ে ওঠা কাঠালিয়ার সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য ভ্রমণ পিপাসুরা বারবার ছুটে আসে এক অজানা আকর্ষণে। শুধু ভ্রমণ পিপাসুদেরকেই নয়,-বিষখালীর সুস্বাদু ইলিশ ভোজন রসিকদেরও সমভাবে আকর্ষণ করে।
ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, কাঠালিয়ার চেচরীরামপুর ইউনিয়নে টেন্ডুর খা নামে একজন বিখ্যাত জমিদার ছিলেন। তিনি বিহারের সা সা রামের শেরশাহের বংশধর ছিলেন। তিনি বিহার থেকে এসে কাঠালিয়ার চেঁচরীরামপুরে বসতি স্থাপন করেন। মোঘল আমলের বিভিন্ন নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই উপজেলায়। আওরাবুনিয়ার জমাদ্দার বাড়ির ঐতিহাসিক মসজিদটি মোঘল আমলের প্রতীক হিসেবে আজো মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে।
কাঠালিয়া উপজেলার মানুষ তাদের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে বেশি পছন্দ করে। ভাষাগত ঐতিহ্যে ও স্বাতন্ত্রে বরিশালের আঞ্চলিক ভাষা মানুষের মনকে বিশেষ ভাবে আকর্ষণ করে। এরই ধারাবহিকতায় কাঠালিয়া অধিবাসীরা এ আঞ্চলিক ভাষাতেই কথা বলে থাকেন।এ ছাড়াও এ অঞ্চলের অধিবাসীদের সংস্কৃতিতে জারি, সারি, ভাটিয়ালী, মুর্শিদী, লালন গীতি, পুঁথিপাঠ বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। যা বাংলার লোকজ সাহিত্যের প্রাণ।
১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে ঝালকাঠি জেলা প্রতিষ্ঠিত হলে ঝালকাঠি শহরকে জেলা শহরের মর্যাদা দেওয়া হয়।
একাত্তরের ২৩ নভেম্বর ৯নং সেক্টরের মধ্যে এ জনপদ সবার প্রথম হানাদার মুক্ত হয়েছিলো।
নদী বন্দরের জন্য ঝালকাঠি সবসময় ইউরোপীয়দের আকর্ষণ করেছে। ফলে বিভিন্ন সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ডাচ ও ফরাসিরা এখানে ব্যবসা কেন্দ্র খুলেছিল। বাণিজ্যিক গুরুত্বের জন্য ঝালকাঠিকে দ্বিতীয় কলকাতা বলা হত। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঝালকাঠি সদর উপজেলার রেজাউল করিম ২৪ সদস্য বিশিষ্ট মানিক বাহিনী গড়ে তোলেন।
ঝালকাঠির জনপ্রিয় খাবার: ঝালকাঠি প্রাকৃতিক ফল যেমন আম, কলা, জলপাই, কাঠাল, তাল, লিচু, নারিকেল, আমড়া, পেয়ারা।
শহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২২.৬৪০৮৯৩° উত্তর ৯০.১৯৮৮০৩° পূর্ব। সমুদ্র সমতল থেকে শহরটির গড় উচ্চতা ১১ মিটার। ঝালকাঠী শহর ঢাকা থেকে ১৯৫ কি.মি. দক্ষিণে এবং বরিশাল বিভাগীয় শহর থেকে ২০ কি.মি. পশ্চিমে সুগন্ধা নদীর তীরে অবস্থিত। সুগন্ধা নদী থেকে বাসন্ডা খাল নামে একটি শাখা নদী উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে শহরকে দু'ভাগে বিভক্ত করেছে। শহরের ভিতরে আরও ১২টি খাল প্রবহমান রয়েছে।