কুমারখালী কুষ্টিয়া অঞ্চলের মধ্যে অপেক্ষাকৃত প্রাচীন জনপদ। পদ্ম গর্ভ থেকে এই অঞ্চলের উদ্ভব হয়েছে বলে ধারণা প্রচলিত আছে। কুমারখালীর বিস্তীর্ণ এলাকা যে একসময় নদী গর্ভে ছিল তার প্রমাণ মেলে ‘চড়াইকোল’যুক্ত গ্রামনাম এবং কোল ও বিলের আধিক্য থেকে।
প্রশাসনিক কাঠামো পরিবর্তনের কারণে কুমারখালীর অবস্থান ও মর্যাদা বারবার পরিবর্তিত হয়েছে। থানা থেকে মহকুমায় উন্নীত হয়ে কুমারখালীকে আবারও থানায় পরিনত হতে হয়। ইংরেজ শাসনের পূর্বে কুমারখালী অঞ্চল ফরিদপুর ও যশোরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীকালে থানা কিংবা মহকুমা হিসেবে কুমারখালী যথাক্রমে রাজশাহী, পাবনা, নদীয়া ও সবশেষে কুষ্টিয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৫৭ সালে পাবনা জেলার অধীনে কুমারখালী, খোকসা, পাংশা ও বালিয়াকান্দী থানা নিয়ে কুমারখালী মহকুমার জন্ম। কিন্তু ১৮৭১ সালে নদীয়া জেলার কুষ্টিয়া মহকুমার সামিল হয়ে কুমারখালী মহকুমার মর্যাদা হারিয়ে পুনরায় থানায় পরিনত হয়। কুমারখালী থানার সদর দফতর ছিল পার্শ্ববর্তী ভালুকা গ্রামে। কুমারখালী এক সময নাটোর-রাজ্যের অধীনে ছিল। পরে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর-জমিদারির অন্তর্ভুক্ত হয়। কুমারখালী অঞ্চলে রাণী ভবানী ও তাঁর উত্তরপুরুষদের নির্মিত মঠ-মন্দির এবং জনহিতকর কর্মের কিছু নিদর্শন এখনো আছে।
কুষ্টিয়া, যশোর, দৌলতপুর সাতক্ষীরা সড়ক পর্যন্ত খুলনা জেলা ও ফরিদপুরের কিছু অংশ ছিল 'সেক্টর নং ৮' এর অন্তর্ভুক্ত। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর আবু ওসমান চৌধুরী ও আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেজর এম এ মঞ্জুর। এই সেক্টরে ছিল ৭টি সাব-সেক্টর।
কুষ্টিয়া জেলা তিলের খাজা, কুলফি আইসক্রিম এর জন্য বিখ্যাত। এ জেলাটিকে আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়। এ জেলার মানুষ শুদ্ধ ভাষায় কথা বলে।
পাটকে স্থানীয় ভাষায় 'কোষ্টা' বা 'কুষ্টি' বলতো, যার থেকে কুষ্টিয়া নামটি এসেছে। কারো মতে ফারসি শব্দ 'কুশতহ' থেকে কুষ্টিয়ার নামকরণ হয়েছে যার অর্থ ছাই দ্বীপ। আবার সম্রাট শাহজাহানের সময় কুষ্টি বন্দরকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া শহরের উৎপত্তি বলেও একটি মত রয়েছে।
কুষ্টিয়া (মুজিবনগর) বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী। ১৮৬৯ সালে কুষ্টিয়ায় একটি পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। হ্যামিলটন'স গেজেট প্রথম কুষ্টিয়া শহরের উল্লেখ পাওয়া যায়। লালনের মাজার ছাড়াও এ জেলার শিলাইদহে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি ও মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা।