গাংনী নামের সাথে যুক্ত হয়ে আছে এ অঞ্চলের ভৌগোলিক পরিবেশের পরিচয়। গাংনী পদটিই এখানে প্রধান। নদী বা নদীর মৃতপ্রায় ধারাকে এ এলাকার মানুষ গাং বা গাঙ বলে। অনুমান করা হয় যে, গাঙ্গেয় অববাহিকার এ এলাকায় প্রথম বসতি স্থাপনকারী মানুষেরা অন্যদের বসবাসে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ‘এ এলাকায় গাং অর্থাৎ নদী নেই’- এমন ঘোষণা দেয়।
‘গাং নেই’ পরবর্তীকালে হয়ে যায়- ‘গাংনী’। এ এলাকার মানুষেরা নেই বুঝাতে ‘নি’ উচ্চারণ করে। গাংনী নামকরণে ভিন্ন আর একটি যুক্তিও পাওয়া যায়। পশ্চিমে কাজলা নদী এবং পূর্বে মাথাভাঙ্গা নদীর মধ্যবর্তী দোয়ার অঞ্চলে এ থানার অবস্থান। সেই অর্থে এ নদীর প্রধান উৎস গঙ্গা। গঙ্গার কন্যা মনে করার কারণে খরস্রোতা মাথাভাঙ্গাকে একসময় এ এলাকার মানুষ ‘গাংগীনি’ বলে ডাকত। গাংগীনি থেকে গাঙ্গনী বা গাংনী শব্দের উৎপত্তি। গাংনী নামকরণে মুলত এ অঞ্চলের নদী সম্পৃক্ততার পরিচয় ফুটে উঠেছে।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়ে করিমপুর,তেহট্ট ও চাপড়া ভারতে অন্তর্ভুক্ত হয়, শুধুমাত্র গাংনী ও মেহেরপুর সদর নিয়ে মেহেরপুর মহাকুমা গঠিত হয়। ১৯৮৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মেহেরপুর পূর্ণাঙ্গ জেলার মর্যাদা লাভ করেন। ২০০০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মেহেরপুর সদর উপজেলা বিভক্ত হয়ে মুজিবনগর উপজেলার সৃষ্টি হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের সূতিকাগার হচ্ছে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল এই জায়গার নামকরণ করা হয় 'মুজিবনগর'। বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ গর্বের সঙ্গে এই নামকরণ করেছিলেন। তখন সরকারি নথিতে লেটার হেডে লেখা থাকত 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, মুজিবনগর'।
মুজিবনগর সরকার (যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকার বা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার নামেও পরিচিত) মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল জনগনের রায়ে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল এই সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা বৈদ্যনাথতলায় (বর্তমান মুজিবনগর) শপথ গ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর ১০ এপ্রিল এ সরকার গঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে।