এককালের প্রমত্তা স্রোতাস্বিনী লবলং, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষা, বানার, তুরাগ, বালু , মালদহ প্রভৃতির বিপুল জলরাশির কল্যানে গৈরিক মৃত্তিকার কোলে এক সমৃদ্ধ জনপথ গাজীপুর। যার ঐতিহাসিক সভ্যতার প্রমান মেলে আড়াই হাজার হতে তিন হাজার বছর পূর্বের জনপথ সাকেশ্বর, ভাকুরাই ছড়া ও টোক, কপালেশ্বর, দরদরিয়া একঢালা, বজ্রপুর (বর্তমান বক্তারপুর), চিনাসুখানিয়া, শৈলাট, দিঘলীর ছিট প্রভৃতি প্রাচীন প্রত্নস্থলে। কিন্তু নদী মাতৃক সেই শাল অরন্য বেষ্টিত সহস্র বছরের নিদর্শন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পট পরিবর্তনের কারণে পলিমাটির তলায় লুপ্ত হয়েছে।
মধ্যযুগে চৌড়া, ধীরাশ্রম, কাপাসিয়া, কালীগঞ্জ, জয়দেবপুর, কাশিমপুর, টঙ্গী প্রভৃতিস্থানে সমৃদ্ধ নগর কেন্দ্রিক কৃষি ও শিল্প-বাণিজ্য নির্ভর জনপথ গড়ে উঠে যার সমৃদ্ধির শেষ চিহ্ন এখনো ভগ্নদশা ইটের তৈরী প্রাচীরের গাত্রে লুকিয়ে রয়েছে। আবিষ্কারের অপেক্ষায় আছে বিলুপ্ত প্রায় মাটির গর্ভে প্রোথিত সেই জনপথগুলো।
গাজীপুর জেলা শতবর্ষের নানা ঐতিহ্যে লালিত এক সুপ্রাচীন ঐতিহাসিক জনপদ যার রয়েছে এক সমৃদ্ধ অতীত সম্রাট অশোকের আমলের সাকেশ্বর স্তম্ভ, বৌদ্ধ আমলের ভবাক ও ভাকুরাই নামে জনপদীয় শাসন, মৌর্জ শাসনামলে নির্মিত দরদরিয়া দূর্গ, ঢোল সমুদ্রের বৌদ্ধ বিহার জেলার প্রায় আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বাংলা ভাষায় প্রথম অভিধান ও ব্যকরণ ‘‘বাংলা পর্তুগীজ শব্দকোষ’’ ১৭৩৩ সনে ভাওয়াল নগরীতে বসে রচনা করেন পাদ্রী মনো এল দা আসসুম্পাসউঁ। তাছাড়া বাংলা গদ্যেরও সুতিকাগার এই গাজীপুর জেলা। বাংলা সাহিত্য ও ভাষা প্রথম গদ্য মুদ্রিত বই ‘‘ব্রাহ্মন রোমান ক্যাথলিক সংবাদ’’ ১৭৩৩ সালে পাদ্রী দোম অমেত্মানিয় দো রোজারিও রচনা করেন এ জেলাতেই। এছাড়া কাপাসিয়া তিতবাটি গ্রামে তৈরি হতো বাংলার শ্রেষ্ট মসলিন, বরমী বাজারের নিকটে ছিল দেশের সর্ববৃহৎ গ্রামীণ পণ্য বাজার।
গাজীপুর জেলা কাঁঠাল, পেয়ারার জন্য বিখ্যাত। ঢাকা বিভাগে অবস্থিত গাজীপুর জেলাটি বাংলাদেশের মধ্যামঞ্চলের একটি অঞ্চল। আয়তনে এ জেলাটি প্রায় ১৭৭০.৫৮ বর্গ কিমি।
গাজীপুরের মধ্যেই দেশের ৭৫ শতাংশ গার্মেন্টস শিল্প অবস্থিত। মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা টংগীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও সরকার স্বীকৃত একমাত্র জাতীয় উদ্যান ভাওয়াল গড় ও এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় সাফারি পার্ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক গাজীপুরে অবস্থিত।
গাজীপুর: ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর মুক্ত হয় গাজীপুর। ১৯শে মার্চ প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয় গাজীপুর থেকে। তাই ১৫ ডিসেম্বর গাজীপুর হানাদার মুক্ত দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে গাজীপুরের মানুষ। রোববার দিবসটি উপলক্ষে গাজীপুর শহরের উনিশে চত্বর মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।
কালিয়াকৈর ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যে ঢোল সমুদ্র দিঘি অন্যতম। থানার কৃতী সন্তান বিশ্বনন্দিত প্রয়াত বৈজ্ঞানিক ড. মেঘনাদ সাহা, যার নামে বিশ্বে কালিয়াকৈর পরিচিত।
সংস্কৃত ও হিব্রু ভাষায় তুলার অপর নাম কার্পাস। হিন্দি ভাষায় কার্পাস। খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দী থেকে এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে তুলা উৎপাদিত হতো। প্রচুর পরিমাণে কার্পাস বা তুলা উৎপাদন হওয়ায় এই স্থানের নাম করা হয় কাপাসিয়া।