বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে সারা দেশের মানুষের পাশাপাশি গাবতলী উপজেলার মানুষ অনন্যা ভুমিকা পালন করেছে। গাবতলী উপজেলা ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়। উপজেলা সদরের অতি সন্নিকটে রেল স্টেশন এবং গাবতলী উপজেলা পার্শবর্তী সারিয়াকান্দি উপজেলায় যাবার একমাত্র মাধ্যম হওয়ায় হানাদার বাহিনীর কাছে এই উপজেলার ভৌগোলিক গুরত্ব ছিল অপরিসীম। এর জন্য উপজেলায় হানাদর বাহিনীর আনাগোনা ছিল সবচেয়ে বেশি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষনের পর থেকেই গাবতলীতে স্বাধীনতার প্রস্তুতি শুরু হয়। উপজেলার মুক্তিকামী মানুষজন ধীরে ধীরে সংগঠিত হতে থাকে। ২৫ মার্চ কালো রাত্রিতে পাকহানাদার বাহিনী দেশের নিরস্ত মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। ঐদিনই পাক হানাদার বাহিনী রংপুর থেকে বগুড়া শহরে প্রবেশ করে এবং আক্রমণ চালায়। সারা বগুড়া জেলার মানুষ যখন আতঙ্কিত, দ্বিধাগ্রস্থ তখন বগুড়া জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমিনুল ইসলাম পিন্টু সরকারের নেতৃত্বে মু্ক্তিযোদ্ধারা বন্দুক সংগ্রহ করে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে থাকে। এ যুদ্ধে বগুড়া ২ নং রেলগেটে টিটু নামে এক মুক্তিযোদ্ধ শহীদ হন। পরবর্তীতে গাবতলীতে মুক্তিযোদ্ধাকালীন গ্রুপ কমান্ডার হুমায়ন আলম চান্দুর নেতৃত্বে মরহুম মোর্তেজা আলী মজনু, মোজাহার আলী, খলিলুর রহমান, মনজুর মোর্শেদ সাজু, অানোয়ারুল ইসলাম রন্টু, ইব্রাহীম আলী, মতিউর রহমান, সেকেন্দার আলী, মরহুম সাবেদ আলী সহ আরও অনেক মুক্তিযোদ্ধা ভারতের দার্জিলিং এর মূর্তি ক্যাম্পে(মুজিব ক্যাম্প) ২৮ দিনের অস্ত্র প্রশিক্ষন গ্রহণ করেন এবং রংপুরের বুড়িমারী ৬ নং সেক্টরে যোগদান করেন। এর কিছুদিন পর তারা গেরিলা যুদ্ধ করার জন্য গাবতলীতে চলে আসেন। শুরু হয় গাবতলীতে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ইতিহাস। মুক্তিযোদ্ধারা গাবতলী নাড়ুয়ামালা রেলব্রিজের কাছে পাহাড়ারত হানাদার ও রাজাকারদের উপর গভীর রাতে হামলা চালান এবং তাদের সেখান থেকে পিছু হটতে বাধ্য করেন। মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলার সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় গাবতলী ও সুখানপুকুর রেলস্টেশনের মাঝামাঝি ডওর এলাকায় রেললাইন উপরে ফেলে রংপুরের সাথে বগুড়ার রেল যোগাযোগ বিছিন্ন করে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধারা রেলপথের বিভিন্ন জায়গায় ও রেল ব্রীজে প্রহরারত রাজাকারদের ধরে নিয়ে আসে। সুখানপুকুর রেলস্টেশনে অবস্থান নেওয়া রাজাকারদের উপর হুমায়ল আলম চান্দু, মিজানুর রহমান বাদশা, আলমগীর রহমান, রবিউল করিম, মোস্তাফিজার রহমান পটল, আনোয়ারুল ইসলাম, মোসলেম উদ্দিন, অনসার আলী সহ নাম না জানা আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আক্রমণ করে বসেন। ঐ যুদ্ধের সময় উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হন। তার দুটি আঙ্গুল শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল আক্রমণের মুখে হানাদার বাহিনী গাবতলী থানার দিকে পালিয়ে যায়। তারপর মুক্তিযোদ্ধারা গাবতলী থানা, সিও অফিস ও রেল স্টেশনে স্থাপিত পাক বাহিনীর ক্যাম্পে আক্রমণের জন্য অগ্রসর হলে পাকবাহিনী মর্টার শেল নিক্ষেপ শুরু করে। তখন মুক্তিযোদ্ধারা আত্বরক্ষার্থে পিছু হটে আসে। ৪ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। ভারতীয় বিমান বাহিনী গাবতলী রেলস্টেশনে স্থাপিত মর্টারের উপর বোমা নিক্ষেপ শুরু করলে মুক্তিযোদ্ধারা স্থল পথে যুদ্ধ করতে করতে থানার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১৪ ডিসেম্বর গাবতলী থানা ও সিও অফিস এলাকায় পাক বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে প্রচন্ড গোলাগুলি শুরু হয়। আক্রমণে পাক সেনারা থানা এলাকা ছেড়ে দক্ষিণ দিকে পালিয়ে যেতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারাও হাল না ছেড়ে তাদের পিছু ধাওয়া করতে থাকে। এক পর্যায়ে পাক সেনারা ক্ষিদ্রপেরী নামক গ্রামের এক জঙ্গলে আত্বগোপন করে। মুক্তিযোদ্ধারা খবর পেয়ে তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে এবং প্রচন্ড গুলি বর্ষন করে। গাবতলী থানা থেকে পালিয়ে আসা সাতজন পাক সেনা সেখানে নিহত হয় বাকিরা পালিয়ে যায়। ঐ দিনই গাবতলী উপজেলা মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করা হয়। চারিদিকে আনন্দের বাতাস বইতে থাকে। আবাল বৃদ্ধ বনিতা সবাই সেদিন রাস্তায় নেমে বিজয় উল্লাস করতে থাকে।
৮৮.৫০ ডিগ্রী পূর্ব থেকে ৮৮.৯৫ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে এবং ২৪.৩২ ডিগ্রী উত্তর থেকে ২৫.০৭ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশে বগুড়া সদর উপজেলা অবস্থিত।
বগুড়ার উত্তরে গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট, উত্তর পশ্চিমে জয়পুরহাটের অংশবিশেষ,পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিমে নওগাঁ, দক্ষিণে নাটোর ও সিরাজগঞ্জের অংশবিশেষ এবং দক্ষিণ পূর্বে সিরাজগঞ্জের অবশিষ্ট অংশ বিদ্যমান। বগুড়ার পূর্বে জামালপুর থাকলেও এর স্থলভাগ সংযুক্তভাবে অবস্থিত নয়।
বগুড়া ভৌগোলিকভাবে ভূমিকম্পের বিপজ্জনক বলয়ে অবস্থিত। তাছাড়া বগুড়া জেলা বরেন্দ্রভূমির অংশবিশেষ যা ধূসর ও লাল বর্ণের মাটির পরিচিতির জন্য উল্লেখ্য।
বগুড়া জেলার জনসংখ্যা মোট: ৩৭,৩৪,৩০০ জন
পুরুষ:৪৯.৬০%
মহিলা:৫০.৪০%|উত্তরবঙ্গের ১৬ টি জেলার মধ্য জনসংখ্যায় বৃহত্তম জেলা হচ্ছে বগুড়া। এবং সারা বাংলাদেশে ষষ্ঠ বৃহত্তম জেলা।
খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতকে বগুড়া মৌর্য শাসনাধীনে ছিল। মৌর্য এর পরে এ অঞ্চলে চলে আসে গুপ্তযুগ । এরপর শশাংক, হর্ষবর্ধন, যশোবর্ধন পাল, মদন ও সেনরাজ বংশ ।
সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলবনের পুত্র সুলতান নাসির উদ্দিন বগড়া ১,২৭৯ থেকে ১,২৮২ পর্যন্ত এ অঞ্চলের শাসক ছিলেন। তার নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম হয়েছিল বগড়া (English:Bogra)। ইংরেজি উচ্চারন 'বগড়া' হলেও বাংলায় কালের বিবতর্নে নামটি পরিবর্তিত হয়ে 'বগুড়া' শব্দে পরিচিতি পেয়েছে। ২ এপ্রিল ২০১৮ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠকে বগুড়ার ইংরেজি নাম Bogura করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বগুড়া জেলার সংসদীয় আসন :৭টি