চাঁদপুর জেলার নদী গুলো :
ডাকাতিয়া নদীর দৈর্ঘ্য-২০৭ কিলোমিটার। বাংলাদেশের কুমিল্লা, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত এই নদী। নদীটি ভারতের ত্রিপুরা পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লা-লাকসাম চাঁদপুর হয়ে মেঘনা নদীতে মিশেছে। যা লক্ষ্মীপুরের হাজিমারা পর্যন্ত বিস্তৃত। চাঁদপুর থেকে এই ডাকাতিয়া নদী যোগ হয়েছে কুমিল্লার গোমতীর সঙ্গে ইহা ২৩০.২০ অক্ষাংশে এবং ৯১০.৩১ দ্রাঘিমা বিস্তৃত। যা বামদিকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে ফেনী নদীতে মিশেছে।
পদ্মা বাংলাদেশের একটি প্রধান নদী। এটি হিমালয়ে উৎপন্ন গঙ্গানদীর প্রধান শাখা এবং বাংলাদেশের ২য় দীর্ঘতম নদী। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর রাজশাহী এই পদ্মার উত্তর তীরে অবস্থিত। পদ্মার সর্বোচ্চ গভীরতা ১,৫৭১ ফুট(৪৭৯ মিটার) এবং গড় গভীরতা ৯৬৮ফুট(২৯৫ মিটার)। রাজা রাজবল্লভের কীর্তি পদ্মার ভাঙ্গনের মুখে পড়ে ধ্বংস হয় বলে পদ্মার আরেক নাম কীর্তিনাশা । উৎপত্তিস্থল হতে ২২০০ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দে যমুনা নদীর সাথে মিলিত হয়ে মিলিত প্রবাহ পদ্মা নামে আরো পূর্ব দিকে চাঁদপুর জেলায় মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। সবশেষে পদ্মা-মেঘনার মিলিত প্রবাহ মেঘনা নাম ধারণ করে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হয়।
মেঘনা নদী বাংলাদেশ এর একটি অন্যতম প্রধান নদী। পূর্ব ভারতের পাহাড় থেকে উদ্ভূত মেঘনা নদী সিলেট অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে চাঁদপুরের কাছে পদ্মা নদীর সাথে মিলিত হয়ে মেঘনা নামে বঙ্গোপসাগর এ প্রবাহিত হয়েছে।চাঁদপুরের উপর দিয়ে দেশের ৯০ ভাগ নদ নদীর পানি বঙ্গপোসাগরে প্রবাহিত হয়। ফলে মেঘনা মোহনা বর্ষার এই সময়টাতে হয়ে উঠে ভয়ংকর। কারো কারো মতে এই স্থানটি আফ্রিকার বার্মুডা ট্রায়াঙ্গালের চাইতেও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে বর্ষায়। প্রতি সেকেন্ডে এখানে বর্তমানে পানির তীব্রতা ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ২৩°০০´ থেকে ২৩°৩০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩২´ থেকে ৯১°০২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে চাঁদপুর জেলার অবস্থান। রাজধানীঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ৯৬ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ২০৮ কিলোমিটার। এ জেলার দক্ষিণে লক্ষ্মীপুর জেলা ও নোয়াখালী জেলা; পূর্বে কুমিল্লা জেলা, উত্তরে কুমিল্লা জেলা, মেঘনা নদী ও মুন্সীগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে মেঘনা নদী, মুন্সীগঞ্জ জেলা, শরীয়তপুর জেলা ও বরিশাল জেলা অবস্থিত। পদ্মা ও মেঘনা নদী দুটি চাঁদপুর শহরের কাছে এসে মিলেছে।
২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী চাঁদপুর জেলার মোট জনসংখ্যা ২৬,৩৫,৭৪৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২,২৮,৭৭৪ জন এবং মহিলা ১৪,০৫,৬৮২ জন। মোট পরিবার ৬,৩৫,৪৫৮টি।
চাঁদপুর জেলায় ধর্মবিশ্বাস-২০২২
ইসলাম (৯৪.৩৭%)
হিন্দু ধর্ম (৫.৫৫%)
অন্যান্য ধর্ম (০.০৮%)
ধর্মবিশ্বাস অনুসারে এ জেলার মোট জনসংখ্যার ৯৪.৩৭% মুসলিম, ৫.৫৫% হিন্দু, ০.০১% বৌদ্ধ এবং ০.০২% খ্রিষ্টান ও ০.০৫% অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। এছাড়া কিছু সংখ্যক ত্রিপুরা উপজাতি জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে এ জেলায়।
বার ভূঁইয়াদের আমলে চাঁদপুর অঞ্চল বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদরায়ের দখলে ছিল। এ অঞ্চলে তিনি একটি শাসনকেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। ঐতিহাসিক জে এম সেনগুপ্তের মতে, চাঁদরায়ের নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম হয়েছে চাঁদপুর।
অন্যমতে, চাঁদপুর শহরের (কোড়ালিয়া) পুরিন্দপুর মহল্লার চাঁদ ফকিরের নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম চাঁদপুর। কারো মতে, শাহ আহমেদ চাঁদ নামে একজন প্রশাসক দিল্লী থেকে পঞ্চদশ শতকে এখানে এসে একটি নদী বন্দর স্থাপন করেছিলেন। তার নামানুসারে নাম হয়েছে চাঁদপুর।
মুক্তিযুদ্ধের সময় চাঁদপুর ২নং সেক্টরের অধীনে ছিল। ১৯৭১ সালের ১২ মে পাকবাহিনী হাজীগঞ্জ উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের ৫০ জন লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করে এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। এ গণহত্যার পর মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালালে পাকবাহিনীর ১৭ জন সৈন্য নিহত এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। শাহরাস্তি উপজেলার নাওড়া, সূচীপাড়া এবং উনকিলার পূর্বাংশে বেলপুরের কাছে মিত্র বাহিনীর সাথে পাকবাহিনীর সংঘর্ষে মিত্র বাহিনীর ১৩ জন সৈন্য এবং পাকবাহিনীর ৩৫ জন সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় মতলব উত্তর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়।
চাঁদপুর জেলায় মোট ৮টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হল: