চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষেরা বাংলাতে কথা বললেও তাদের উচ্চারণশৈলী প্রমিত বাংলা থেকে একটু আলাদা। তাদের কিছু শব্দের উচ্চারণ এখানে দেয়া হলঃ
অ্যাইগন্যা = উঠান, আইলস্যা = অলস, কাড়ি, আইড় = ধানের খড়, ইন্দারা/কুমহা = কুয়া, উফাদিক = উপাধিক/অকর্মন্য, উসকাঠী = রান্নার কাজে ব্যবহৃত একটি দন্ড যা দ্বারা জ্বালানী চুলার মধ্যে পাঠানো হয় (পাট গাছের কাণ্ড), কান্টা = বাড়ির পিছনের জায়গা, গঁঢ়্যা = ছোট ডোবা, ভূঁইশ = মহিষ, বল/আঁইড়্যা = ষাঁড়, বকরী = ছাগল, পাঘা = দড়ি, লাহি = নাভী, ঘুটা/নোন্দা = গরুর গোবর দিয়ে তৈরি এক প্রকার জ্বালানি, তহোমন = লুঙ্গী, সাঠা = এক ধরনের লাঠি, পির্হ্যান = পোশাক, ছুঁড়ি = কুমারী মেয়ে, ঘাঁটা = রাস্তা, গাঁটঠা/বেহুদ্দা= বদমাইশ, ড্যারমা/মোটাহুস/হুসমোটা = কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যক্তি, নাথ = গরুর নাখের ভিতর ফুটো করে দড়ি হিসাবে যেটা দেয়া হয়, গোলদান= গরুর গলায় যে দড়ি পরানো থাকে, ছাইনচ্যা = টিনের চালা বেয়ে যেখানে পানি পড়ে, সলহি = গরুর গাড়ির জোয়ালের দুই ফুটোর মধ্যে দেয়ার জন্য কাঠের লম্বা দন্ড, ঢুঁইড়া = খোঁজ করা, সানকি = রান্না ঘরে ব্যবহারিত মাটির পাত্র, ছেঁচকি = তরকারী নাড়ার জন্য ব্যবহারিত লোহার দন্ড, ঢাকুন = ঢাকনা, ডই = ডাল নাড়ার জন্য কাঠের দন্ড, হাইস্যা = হাসুয়া, পাইহ্যা = চাকা, লদ্দি = নদী, পোখর = পুকুর, গোহিল = গোয়াল, আইল = জমির কিনারা, হ্যালা = সাঁতার কাটা, কোচ্চুল= চামচ, লেহেলি = লেপ, পঁহাত = সকাল, কান্ধা = কিনারা, আড়া/আইল = জমির সীমানা/আল, জাফত = দওয়াত, ন্যাংটা= উলঙ্গ, টাপিয়্যা = দৌড়ে, তাম্বাস= ভাত উঠানো চামচ, প্যাইচ্ছা = ডালি, গুড়ল বাতি/গুললতি = গুলতি,লাহার়ী=নাস্তা,খইলহ্যা=অলস, হামি=আমি, হাঁকে/হামাকে=আমাকে, হাঁরঘে=আমাদের, তাঁহিস -জ্বালা, হাঁরাকে= আমাদেরকে, পিন্ধা= পরা, দুপ্পহার= দুপুর, রায়িত= রাত, আইন্যা= এনে/আনিয়া দেয়া, কর্যা লে= করে নে, কহা= বল(বলা অর্থে), কহলি= বললি, কহিল্যা= বললা, কহিলেন= বলিলেন, কাইদ্যা= কাস্তে, স্যাকারগন= মিষ্টি আলু, বাগুন= বেগুন, ভুঁই= জমি, কুনঠেকার= কোথাকার, কুনঠে= কোথায়, কুমহার= কুমার, ছুথাইর্যা= অপরিচ্ছন্ন, অপরিষ্কার। লম্ভা= লম্বা, ছুটু= ছোট, বিসোইদব্যার= বৃহস্পতিবার, আঘুন= অগ্রহায়ণ, সোরিল= শরীর, গতর= গা,দেহ। রাম পটল= ঢেড়স, খুচপুইচ্যা= অস্থির, লেও= নাও।
গম্ভীরা
গম্ভীরা বাংলাদেশের লোকসঙ্গীতের অন্যতম একটি ধারা। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও পশ্চিমবঙ্গের মালদহ অঞ্চলে গম্ভীরার প্রচলন রয়েছে। গম্ভীরা দলবদ্ধভাবে গাওয়া হয়। এটি বর্ণনামূলক গান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা অঞ্চলের গম্ভীরার মুখ্য চরিত্রে নানা-নাতি খুব জনপ্রিয়। ধারণা করা হয় যে, গম্ভীরা উৎসবের প্রচলন হয়েছে শিবপূজাকে কেন্দ্র করে। শিবের এক নাম ‘গম্ভীর’, তাই শিবের উৎসব গম্ভীরা উৎসব এবং শিবের বন্দনাগীতিই হলো গম্ভীরা গান। গম্ভীরা উৎসবের সঙ্গে এ সঙ্গীতের ব্যবহারের পেছনে জাতিগত ও পরিবেশগত প্রভাব রয়েছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রহনপুর তথা গোমস্তাপুর উপজেলার এই এলাকা ৭ নং সেক্টরের অধীন ছিল। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৯৭১ এ পাকিস্তানি বাহিনী তাদের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলো।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নামটি সাম্প্রতিকালের। জেলাবাসীর দাবির মুখে ২০০১ সালের ১লা আগস্ট সরকারিভাবে নবাবগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাখা হয়। পূর্বে এই এলাকা 'নবাবগঞ্জ নামে পরিচিত ছিল।
কালাই রুটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় খাবার৷ এটি পুষ্টিকর ও মুখরোচক খাবারও বটে। এক সময় কালাই এর সহজলভ্যতার কারণে এই অঞ্চলে এই রুটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। এই এলাকার প্রত্যেক মেয়েই জানে জানে কীভাবে এই রুটি বানাতে হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত, কারণ গ্রীষ্মকালীন এই ফলটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অর্থনীতির প্রধান উৎস।
রাজধানী ঢাকা থেকে ৩২০ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং রাজশাহী থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অবস্থিত।