১৯৪৭ সালের পূর্ব পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নদিয়া জেলার চুয়াডাঙ্গা মহকুমার একটি থানা ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর এটি চুয়াডাঙ্গা মহকুমার একটি থানা হিসাবে বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার অন্তর্ভূক্ত হয়। ১৯৮৪ সালের ২৬ ফ্রেব্রুয়ারী চুয়াডাঙ্গা মহকুমাকে জেলা এবং ১৯৮২ সালে চুয়াডাঙ্গা সদর থানাকে মনোন্নীত থানায় রুপান্তর করা হয়, যা বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা হিসাবে পরিচিত। ১৯৮৪ সালের ১ ফ্রেব্রুয়ারী এক ঘোষনার মাধ্যমে মনোন্নীত চুয়াডাঙ্গা থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়।“চুয়াডাঙ্গা” নামকরণের যে তথ্যদি পাওয়া যায় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী প্রচলিত ও নির্ভরযোগ্য ধারনা হচ্ছে চুঙ্গো মল্রিক নামে জনৈক ব্যবসায়ী মাথাভাঙ্গা নদীর পূর্ব তীরে প্রথম বসতি স্থাপন করে।
তার নামের ফার্সি অংশ চুঙ্গো থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের সময় উচ্চারনের বিক্রিতি বা অপভ্রংশের কারনে সম্ভবত চুঙ্গোডাঙ্গা হতে চুয়াডাঙ্গা নামটি এসেছে। মুশীর্দকুলি খান বাংলাকে ৯৩টি চাকলায় বিভক্ত করলে চুয়াডাঙ্গা যশোর চাকলার অর্ন্তভূক্ত হয়। ১৮৫৫ সালের রেকর্ড অনুযায়ী ২৮৯.২০বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট চুয়াডাঙ্গা ৬টি পরগনায় অর্ন্তভূক্ত ছিল। যেগুলি হচ্ছে- ফতেজংপুর,শাহউজিয়াল,রাজপুর,মাহমুদশাহি,উঘরা,ও মাটিয়ারী।
মাটিয়ারী শব্দটির অপভ্রংশ হিসাবে মেটেরী কথাটি প্রচলিত হতে পারে বরে অনেকে ধারনা করেন। ১৮৫৯ সালে মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে তার সদর দপ্তর স্থাপিত হয় দামুড়হুদা। ১৮৬৯ সালে মহকুমা সদর দপ্তর চুয়াডাঙ্গায় স্থান্তরীত হয়। ১৮৯২ সালে এই মহকুমাকে বিলুপ্ত করে মেহেরপুরের সাথে সংযুক্ত করা হয়। পরর্তিতে ১৮৯৭ সালের ১৫ মার্চ চুয়াডাঙ্গা মহকুমা পুর্ঃ স্থাপিত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর চুয়াডাঙ্গা সদর থানা রাজশাহি বিভাগের অধীন ছিল। ১৯৫২ সালে খুলনা বিভাগ গঠীত হওয়ার পর চুয়াডাঙ্গা খুলনা বিভাগের অর্ন্তভূক্ত হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা ভুট্টা, তামাক ও পানে, খেজুরের গুড় এর জন্য বিখ্যাত। এ জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুল এবং আম উৎপাদন করে থাকে। তাছাড়া বাংলাদেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশনটি চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন।
চুয়াডাঙ্গার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার নথিপত্রে দেখা গেছে, ১৯৮৭ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা অনুয়ায়ী চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বমোট মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ১১০০ জন। ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৫ সালে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০০। এরপর ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালে তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সর্বশেষ নাম ওঠে প্রায় ১৮০০ জনের।
সমুদ্র থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
চুয়াডাঙ্গা: স্বাধীনতা যুদ্ধের সুতিকাগার বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী চুয়াডাঙ্গা। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে চুয়াডাঙ্গা শত্রুমুক্ত করেন বাংলার মুক্তিসেনারা।
১৮৬২ সালে ১৫ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন চালু হয়। চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন চালু হলে ১৮৬২ সালে মহকুমা সদর দপ্তর দামুড়হুদা থেকে চুয়াডাঙ্গায় স্থান্তরীত হয়। যার ফলে চুয়াডাঙ্গা তখন নদীয়া জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ মহকুমা এবং বড় ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।