চৌগাছায় প্রধানত দু’টি নদীর সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। একটি হলো কপোতাক্ষ নদ আর একটি বুড়ি ভৈরব। এছাড়া মুক্তেশ্বরী নামক নদী যার নামানুসারে চৌগাছার একটি অঞ্চলের নাম মুক্তারপুর করা হয়েছে। এ নদীটি মুক্তারপুরের ভেতর দিয়ে প্রবাহমান ছিল কিন্তু বর্তমানে এ নদীটিতে কাল ক্রমে পলি জমে নদীটি কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দুটি নদীই বৃটিশ আমল থেকে চৌগাছার মানুষের উন্নয়ন ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। মহা কবি মাইকেল মধূসূদনের স্মৃতিধন্য কপোতাক্ষ নদ একদা প্রখর প্রবল সোতস্বিনিতে জোয়ার ভাটায় উত্থিত হত।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বহুযুগ ধরে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। বানিজ্যিক ক্ষেত্রে রেখেছে অগ্রগামী ভূমিকা। কপোতাক্ষ নদের নামকরণ এসেছে এভাবে- ‘‘কপোতের ন্যায় অক্ষি যার’’ অর্থ্যাৎ কপোতাক্ষ। নীল চাষের আমলে এই কপোতাক্ষ নদই ছিল নীল ব্যবসায়ীদের বাসনা গৃহ। বিদেশী শাসকরা এদেশের একশ্রেণীর মানুষদেরকে ক্ষমতাবান করে (জমিদার) তাদের মাধ্যমে তারা নীল ব্যবসা করতো। চৌগাছার ভগবানপুরের নীল কুঠি কপোতাক্ষ পাড়ে আজো পুরাতণ স্মৃতিবহন করে। ইট আর চুনসুরটিগুলো জংলী জঙ্গল আকৃতিতে পড়ে আছে। শুধু তাই নয়! চৌগাছা কুঠিবাড়ী এই কপোতাক্ষের কুল ঘেষা। চাষাবাদের ক্ষেত্রে এই নদ এখনও পর্যমত্ম বিশেষ ভূমিকা রাখছে এ অঞ্চলে। কপোতাক্ষের কূল দিয়ে বয়ে যাওয়া রবি ঋতুর হুলদ আলতা রাঙা রৌদ্রগুলো, রঙ কুয়াশার শস্য ক্ষেত্র সমূহ দেখতে আসলেই চমৎপ্রদ। সত্যিই অপূর্ব সৌন্দর্য্যের লীলানিকেতন।
কপোতাক্ষের পাড়ে তাইতো গড়া জেলা পরিষদ ‘‘ডাকবাংলো’’, কপোতাক্ষের পাড়ে চৌগাছার অন্যতম প্রধান মহিলা কলেজ ‘‘চৌগাছা মৃধা পাড়া মহিলা কলেজ’’। সবর্ণালী বর্নালী স্বপ্ন সম্ভাষনে সাজানো মহিলা করেঝের চমকচত্ত্বর, স্বপ্নীল ঘাষের সিড়ি বেয়ে চলা কপোতাক্ষের জল তরঙ্গের ভাগাড়, কারই বা মন কাড়ে ঐ রূপ দেখবার তরে। হতে পারে এখানে পিকনিক কর্ণার কিংবা পর্যটক কেন্দ্র সরকারী কিংবা বেসরকারী উদ্যোগে।
মহাকবি মাইকেল মধূসূদনের ধ্বনি- প্রতিনধ্বনি তান আমরা স্বপনে শুনি। কিন্তু বাসত্মবে যে নদী ভাটা-
যশোর জেলা খই, খেজুর গুড় ও জামতলার মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। তাছাড়া যশোর জেলাটিকে বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী বলা হয়।
যশোরের বিখ্যাত খাবার হকদানা, ছাক্কা, ডিমের খাট্টা, কাঁঠালের বিচি দিয়ে কুকড়োর (মুরগি) মাংস, চুই ঝাল খাসির মাংস যশোর অঞ্চলের শত বছরের রান্নার ইতিহাসকে সমুজ্জ্বল রেখেছে। যশোরের প্রায় সবার প্রিয় খাবার ঘাটকোল। প্রচলিত নাম ঘেঁটকচু।হকদানা, ছাক্কা, ডিমের খাট্টা, কাঁঠালের বিচি দিয়ে কুকড়োর (মুরগি) মাংস, চুই ঝাল খাসির মাংস যশোর অঞ্চলের শত বছরের রান্নার ইতিহাসকে সমুজ্জ্বল রেখেছে। যশোরের প্রায় সবার প্রিয় খাবার ঘাটকোল। প্রচলিত নাম ঘেঁটকচু।
জামতলার মিষ্টি হলো বাংলাদেশের যশোর জেলার জামতলা বাজারে উৎপন্ন একটি বিখ্যাত মিষ্টি। এটি ছানা দিয়ে তৈরি গোলাকৃতির একটি মিষ্টি যা ঘন চিনির রসে ডুবানো থাকে। এই মিষ্টি রসগোল্লার একটি প্রকরণ। এটি দেখতে কিছুটা লালচে বা বাদামী রংয়ের হয়ে থাকে। জামতলা বাজারের সাদেক আলী নামক জনৈক ব্যক্তি এই মিষ্টি তৈরি করেন বলে এটি সাদেক গোল্লা নামেও পরিচিত।
যশোর কে ফুলের রাজধানী বলা হয় কেননা যশোরের গদখালি থেকে বাংলাদেশের ৮০% ফুল সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশের সব থেকে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল যশোরে অবস্থিত। যশোরে বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে যশোর বিমানবন্দর নির্মিত হয়েছিল যা এখন আন্তর্জাতিকীকরণের কাজ চলছে।
ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে গৌড়ের শাসনকর্তা দাউদের একজন বিশ্বস্ত সহযোগী শ্রীহরি ১৫৭৪ সালের যশোরের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং স্বাধীন যশোর রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।