চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলা একটি উল্লেখযোগ্য ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। জীবননগর বাজারটি অনেক বড়। এশিয়ার বৃহত্তর কৃষি ফার্ম দত্তনগর কৃষি খামার জীবননগর শহর থেকে অনতি দূরে অবস্থিত হবার কারণে বরাবরই এ উপজেলা কৃষি উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। ধান ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে এ উপজেলা সারাদেশে পরিচিত। জীবননগর বাজারে কৃষিপণ্যাদিসহ অন্যান্য ব্যবসার বড়বড় আড়ত এবং দোকান আছে। বিভিন্ন কোম্পানীর টিভি,ফ্রিজ,মোটর সাইকেল এবং অন্যান্য যানবাহনের অনেকগুলো শোরুম আছে। জীবননগর ধানের হাটটি অত্যন্ত বড়।
হাটের দিন সারা শহর ধান এবং অন্যান্য ফসলের গাড়িতে ভরে যায়। দেশের বিভিন্ন এলাকার চাউল ব্যবসায়ীরা এ হাট থেকে ধান কিনে নিয়ে যায়। এখানে চাউল উৎপাদনের বড়বড় চাতল গড়ে উঠেছে। উৎপাদিত চাউল প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় ও বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এ উপজেলায় প্রচুর খেজুর গাছ জন্মে। প্রচুর পরিমাণ খেজুর গুড়ও উৎপাদিত হয়ে থাকে। এ অঞ্চলের খেজুর গাছের রস খুব মিষ্টি ও সুস্বাদু। এর আহরিত রস দ্বারা উৎপাদিতগুড় সুদুর অতীত থেকে এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশে ও বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
ইদানিং জীবননগর উপজেলা পোলট্রি শিল্প বেশ বিস্তার লাভ করেছে। গ্রামে গ্রামে ব্যক্তি উদ্যোগে পোলট্রিফার্ম গড়ে উঠেছে। এর পাশাপাশি বর্তমান বিভিন্ন এলাকায় গরু মোটাতাজাকরণ একটি ব্যবসা উল্লেখযোগ্যভাবে গড়ে উঠার প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। গ্রামের গরীব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকজনকে বাড়িতে ১/২টি করে ছোট বাছুর গরু কিনে মোটা তাজা করে বিক্রয়ের মাধ্যমে আর্থিক ভাবে লাভবান হতে দেখা যাচ্ছে। এ কারণে ইদানিং গাভী পালনের প্রবণতা অনেকটাই কমে গিয়েছে। দেশের নাম করা শিয়ালমারী পশু হাটটি এ উপজেলায় অবস্থিত।
এ উপজেলা একটি সীমান্ত বর্তী উপজেলা। স্বাধীনতার পর বন্ধ হয়ে যাওয়া চ্যাংখালী স্থল বন্দরটি চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। জীবননগর থেকে ভারতের কলকাতা শহর বেনাপোল বা দর্শনা বন্দর থেকে অনেক নিকটবর্তী। একসময় চ্যাংখালী স্থল বন্দর চলমান থাকায় তখন থেকে এ বন্দর দিয়ে দু’দেশের মাঝে যোগাযোগের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রসস্ত সড়ক বিদ্যমান আছে। বন্দরটি পুন: চালূ করা হলে এ উপজেলা দেশের একটি অন্যতম ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে বলে আশা করা যেতে পারে। জীবননগর উপজেলার আম দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানী করা হয়ে থাকে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা ভুট্টা, তামাক ও পানে, খেজুরের গুড় এর জন্য বিখ্যাত। এ জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুল এবং আম উৎপাদন করে থাকে। তাছাড়া বাংলাদেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশনটি চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন।
চুয়াডাঙ্গার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার নথিপত্রে দেখা গেছে, ১৯৮৭ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা অনুয়ায়ী চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বমোট মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ১১০০ জন। ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৫ সালে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০০। এরপর ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালে তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সর্বশেষ নাম ওঠে প্রায় ১৮০০ জনের।
সমুদ্র থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
চুয়াডাঙ্গা: স্বাধীনতা যুদ্ধের সুতিকাগার বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী চুয়াডাঙ্গা। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে চুয়াডাঙ্গা শত্রুমুক্ত করেন বাংলার মুক্তিসেনারা।
১৮৬২ সালে ১৫ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন চালু হয়। চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন চালু হলে ১৮৬২ সালে মহকুমা সদর দপ্তর দামুড়হুদা থেকে চুয়াডাঙ্গায় স্থান্তরীত হয়। যার ফলে চুয়াডাঙ্গা তখন নদীয়া জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ মহকুমা এবং বড় ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।