দীঘিনালা উপজেলায় চাকমা,মারমা ও ত্রিপুরা নৃ-গোষ্ঠীসহ বাঙ্গালী জনগণের বসবাস রয়েছে।চাকমা,মারমা ও ত্রিপুরাসহ পার্বত্য এলাকার অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর লোকজন প্রাচীন মংগোলীয় শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত। এ এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসমুহের প্রত্যেকের নিজস্ব সমৃদ্ধ ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। চাকমা ভাষার সাথে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ত্রিপুরা ও মারমা জনগোষ্ঠীর ভাষা তুলনামুলক কঠিন ও দূর্বোধ্য। নিজস্ব ভাষায় কথা বললেও লেখা-লেখি খুবই কম। সাম্প্রতিককালে শিশুদেরকে নিজস্ব বর্ণমালার প্রাথমিক ধারণা প্রদানের প্রয়াস গৃহীত হয়েছে।প্রায় সকল চাকমা ও মারমা জনগণ বৌদ্ধ এবং ত্রিপুরারা হিন্দু ধর্মাবলম্বী। চাকমা,মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর প্রধান উৎসব 'বৈসাবি' বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে উদযাপিত হয়। বৈসাবি মানে বৈশাখী,সাংগ্রাই ও বিজু যা যথাক্রমে চাকমা,ত্রিপুরা ও মারমারা উদযাপন করে। ত্রিপুরা পুরুষদের গড়িয়া নাচ এবং মেয়েদের বোতল নৃত্য উল্লেখযোগ্য বিনোদন পারফর্ম্যান্স।
এখানকার বাংগালীদের ভাষা, সংস্কৃতি ও খাদ্যাভ্যাস সমতলের বাংগালীদের মতোই। বাংগালীদের মধ্যে আছে মুসলিম,হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।
২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী খাগড়াছড়ি জেলার মোট জনসংখ্যা ৫,২৫,৬৬৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২,৭৭,৬১৪ জন এবং মহিলা ২,৪৮,৩৫০ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১৯৫ জন।
খাগড়াছড়ির ধর্মবিশ্বাস-২০১১
ইসলাম (৪৫.৭১%)
বৌদ্ধ (৩৯.২৮%)
হিন্দু ধর্ম (১৪.২৪%)
খ্রিস্ট ধর্ম (০.৭৭%)
ধর্মবিশ্বাস অনুসারে এ জেলার মোট জনসংখ্যার ৪৫.৭১% মুসলিম, ১৪.২৪% হিন্দু, ৩৯.২৮% বৌদ্ধ এবং ০.৭৭% খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। এ জেলায় বাঙালী জনসাধারণের পাশাপাশি চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা প্রভৃতি আদিবাসী ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ২২°৩৮´ থেকে ২৩°৪৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৪৪´ থেকে ৯২°১১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে খাগড়াছড়ি জেলার অবস্থান। রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ২৭০ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ১১১ কিলোমিটার। এ জেলার পূর্বে রাঙ্গামাটি জেলা, দক্ষিণে রাঙ্গামাটি জেলা ও চট্টগ্রাম জেলা, পশ্চিমে চট্টগ্রাম জেলা ও ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ এবং উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ অবস্থিত।
খাগড়াছড়ি একটি নদীর নাম। নদীর পাড়ে খাগড়া বন থাকায় পরবর্তী কালে তা পরিষ্কার করে জনবসতি গড়ে উঠে, ফলে তখন থেকেই এটি খাগড়াছড়ি নামে পরিচিতি লাভ করে।
১৮৬০ সালের ২০ জুন রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান- এই তিন পার্বত্য অঞ্চলকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা সৃষ্টি হয়। জেলা সৃষ্টির পূর্বে এর নাম ছিল কার্পাস মহল। পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা থেকে ১৯৮১ সালে বান্দরবান এবং ১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়ি পৃথক জেলা সৃষ্টি করা হয়।