এই উপজেলা বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের মাঝে হওয়ায় এবং উপজেলার মধ্যে তালোড়া ও আলতাফনগর রেলওয়ে স্টেশন থাকায় একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে এই উপজেলা নানাভাবেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল দুপুরে বগুড়া পতন হয় অর্থাৎ বগুড়া দখলে নেয় পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী। ২২ এপ্রিল সন্ধ্যায় দুপচাঁচিয়া থানা সদরে পাকহানাদার বাহিনী দখল নেয়া শুরু করে। পরের দিন ২৩ এপ্রিল সকালে দুপচাঁচিয়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় ওষুধ ব্যবসায়ী সতীশ চন্দ্র বসাককে তাঁর দোকানে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে পাকিস্তানি দখলদারবাহিনী জীবন্ত হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধ চলাকালীন দুপচাঁচিয়া চৌধুরীপাড়ার চৌধুরীবাড়িতে নির্মম গণহত্যা অনুষ্ঠিত হয়। গণহত্যার দু’দিন অতিক্রম হবার পর আনুমানিক ১৯/২০ জনের জন্যে গণকবর খুঁড়ে লাশগুলো সমাধিস্থ করা হয় চৌধুরীবাড়ির শ্যাম সরোবরের সন্নিকটে।
নয় মাসে সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কালে এ উপজেলার প্রায় দেড়শ মুক্তিযোদ্ধা ভারত ও দেশের অভ্যন্তরে প্রশিক্ষণ নিয়ে শত্রু সেনাদের প্রতিরোধ ও তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন এফ এফ ( ফ্রিডম ফাইটার বা মুক্তিযোদ্ধা) এবং মুজিব বাহিনী। মুজিব বাহিনীর নেতৃত্ত্বে ছিলনেএ, বি, এম শাহজাহান। এ, বি, এম শাহজাহান ভারতে গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে এ এলাকায় আসার আগে এই উপজেলার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩/৪ টি দল (প্রতি দলে ১২-১৫ জন করে) বিভিন্ন অবস্থানে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু অপারেশনে অংশ নিচ্ছিল। এ, বি, এম শাহজাহান প্রশিক্ষণ শেষে এলাকায় আসার পর গোবিন্দপুর, তালোড়া, গুনাহার ইউনিয়ন সহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা কাহালু, আদমদীঘি ও নন্দীগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা এ, বি, এম শাহজাহানের সমন্বিত নেতৃত্ত্বে চলে আসেন। মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলার বড় চাপরা রেলওয়ে ব্রীজ ৭১ এর আগস্ট মাসের প্রথম দিকে, জিয়ানগরের আক্কেলপুরে রায়কালী রাস্তার উপরের ব্রীজ আগস্ট মাসের শেষ দিকে, কাহালু ব্রীজ ধ্বংস করা সহ বেশ কিছু অপারেশনে অংশ গ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হাসান আলী তালুকদারও মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত ও প্রশিক্ষণের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে খণ্ড খণ্ড যুদ্ধে এই উপজেলার চার জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাঁরা হলেন শহীদ নজরুল ইসলাম, পিতা-নজাবত আলী, সাং-ডিমশহর; শহীদ নিজাম উদ্দিন, পিতা-হালিম উদ্দিন প্রাং, সাং-গোবিন্দপুর; শহীদ মুনছুর রহমান, পিতা-আব্বাস আলী, সাং-গাড়ী বেলঘড়িয়া; শহীদ গোলাম মোস্তফা, পিতা-মেছের আলী ফকির, সাং-পাঁচথিতা, দুপচাঁচিয়া, বগুড়া। এছাড়া পদ্মপুকুর ও চৌধুরীপাড়া বধ্যভূমিতে আরও নাম জানা অজানা অনেকেই হত্যা করা হয়।
৮৮.৫০ ডিগ্রী পূর্ব থেকে ৮৮.৯৫ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে এবং ২৪.৩২ ডিগ্রী উত্তর থেকে ২৫.০৭ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশে বগুড়া সদর উপজেলা অবস্থিত।
বগুড়ার উত্তরে গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট, উত্তর পশ্চিমে জয়পুরহাটের অংশবিশেষ,পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিমে নওগাঁ, দক্ষিণে নাটোর ও সিরাজগঞ্জের অংশবিশেষ এবং দক্ষিণ পূর্বে সিরাজগঞ্জের অবশিষ্ট অংশ বিদ্যমান। বগুড়ার পূর্বে জামালপুর থাকলেও এর স্থলভাগ সংযুক্তভাবে অবস্থিত নয়।
বগুড়া ভৌগোলিকভাবে ভূমিকম্পের বিপজ্জনক বলয়ে অবস্থিত। তাছাড়া বগুড়া জেলা বরেন্দ্রভূমির অংশবিশেষ যা ধূসর ও লাল বর্ণের মাটির পরিচিতির জন্য উল্লেখ্য।
বগুড়া জেলার জনসংখ্যা মোট: ৩৭,৩৪,৩০০ জন
পুরুষ:৪৯.৬০%
মহিলা:৫০.৪০%|উত্তরবঙ্গের ১৬ টি জেলার মধ্য জনসংখ্যায় বৃহত্তম জেলা হচ্ছে বগুড়া। এবং সারা বাংলাদেশে ষষ্ঠ বৃহত্তম জেলা।
খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতকে বগুড়া মৌর্য শাসনাধীনে ছিল। মৌর্য এর পরে এ অঞ্চলে চলে আসে গুপ্তযুগ । এরপর শশাংক, হর্ষবর্ধন, যশোবর্ধন পাল, মদন ও সেনরাজ বংশ ।
সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলবনের পুত্র সুলতান নাসির উদ্দিন বগড়া ১,২৭৯ থেকে ১,২৮২ পর্যন্ত এ অঞ্চলের শাসক ছিলেন। তার নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম হয়েছিল বগড়া (English:Bogra)। ইংরেজি উচ্চারন 'বগড়া' হলেও বাংলায় কালের বিবতর্নে নামটি পরিবর্তিত হয়ে 'বগুড়া' শব্দে পরিচিতি পেয়েছে। ২ এপ্রিল ২০১৮ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠকে বগুড়ার ইংরেজি নাম Bogura করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বগুড়া জেলার সংসদীয় আসন :৭টি