২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এ উপজেলার জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৬.৪৪%, ব্যবসা ১৩.৮৪%, চাকরি ৪.৪৩%, পরিবহন ও যোগাযোগ ৩.৯৭%, অকৃষি শ্রমিক ২.৭৭%, শিল্প ০.৭৪%, নির্মাণ ০.৬৫%, ধর্মীয় সেবা ০.১২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৬৫% এবং অন্যান্য ৬.৩৯%। এখানকার প্রধান রপ্তানিদ্রব্যধান, চাল, বিস্কুট, মাছ ও দুধ।অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পণ্যঃ
কৃষিপণ্যঃ দুপচাঁচিয়া উপজেলার কৃষিপণ্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। খাদ্যশস্য জাতীয়- ধান, গম, আলু, সরিষা। শাক সবজি-লাউ, শিম, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাল শাক, পালং শাক, ঢেঁড়স, ডাটা শাক, সজিনা, বরবটি, কচু। মসলা- পিঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, মরিচ।
খোলাশ খেলনা শিল্পঃ উপজেলার আড়াই কিঃ মিঃ উত্তরে ঐতিহাসিক ধাপসুলতানগঞ্জ হাটের পরেই খোলাশ গ্রাম। এ গ্রামের মোন্না পাড়ায় বহু পরিবার খেলনা শিল্পের সাথে জড়িত। শুরুতে এখানে টমটম, ঘিরনি সহ ৭/৮ ধরনের খেলনা তৈরি হত। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্লাস্টিক খেলনা তৈরিতে জড়িয়ে পড়েছে এসব শিল্পীরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ এলাকার খেলনার কদর রয়েছে। খোলাশ গ্রামের এই খেলনা তৈরির ঐতিহ্য প্রায় ৬০ বছরের।
এলুমিনিয়াম ফ্যাক্টরিঃ তালোড়ায় ১৯৫৪ সালে উত্তর বঙ্গের প্রথম এলুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি স্থাপিত হয়। লাদুরাম আগারওয়ালা নামে এক মারোয়ারী খেতওয়াত এলুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি চালু করেন। পরবর্তীতে আরও বেশ কয়েকটি এলুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি এখানে গড়ে উঠে। এসব ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত মালামাল উত্তরবঙ্গ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সমাদৃত।
মিল-চাতালঃ উত্তরবঙ্গের মধ্যে দুপচাঁচিয়া উপজেলার চাল প্রসিদ্ধ। এ উপজেলার চাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে সুনামের সাথে বিক্রি হয়। এ উপজেলায় ৫ শতাধিক চাতাল ও চাউলকল স্থাপিত রয়েছে। উপজেলা সদর, তালোড়া, চৌমুহনী ও সাহারপুকুরে এ ধরনের মিল চাতাল বেশি।
তাঁত শিল্পঃ দুপচাঁচিয়া উপজেলার তাঁত শিল্পের ইতিহাস বহু পুরাতন। দুপচাঁচিয়া থানা সৃষ্টির অনেক আগে তাঁত শিল্প গড়ে উঠেছিল। তাঁত শিল্পের তৈরি ধূপছায়া নামক শাড়ি এ অঞ্চলে প্রসিদ্ধ ছিল। কালক্রমে ধূপছায়া শাড়ীর নাম থেকেই দুপচাঁচিয়া নামকরণ করা হয়েছে বলে কথিত আছে। পরে তাঁত শিল্পের বিলুপ্তি ঘটে। এ তাঁত সূত্র ধরেই উপজেলার দেবখন্ড তাঁতিপাড়া, নলঘড়িয়া, ডাকাহার গ্রাম, তারাজুন গ্রাম, চান্দাইল গ্রাম, নূরপুর গ্রাম, নওদাপাড়া, ফুটানিগঞ্জ গ্রামের প্রায় ৩ শত পরিবার এ তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। এসব তাঁত শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে গায়েরচাদর, গামছা, লুঙ্গি, বিছানার চাদর উল্লেখযোগ্য।
মৎস্য চাষঃ দুপচাঁচিয়া উপজেলায় প্রায় ৩,৫০০ টি পুকুর ও ৪৪৬ টি জলাশয় রয়েছে। উপজেলার খাস পুকুরগুলো সরকারীভাবে লিজ দিয়ে মাছ চাষ করা হয়। এছাড়াও ব্যক্তিগত পর্যায়ে পুকুরগুলোকে ব্যবসায়ের কেন্দ্র হিসেবে ব্যাপকভাবে মাছ চাষ করা হয়। উপজেলার অধিকাংশ পুকুর ও জলাশয়ে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, পাংগাস মাছ ব্যাপকহারে চাষ করা হয়ে থাকে। ব্যাপকভাবে মাছ চাষ বিস্তার লাভ করায় মাছের পোনার চাহিদা পূরণের জন্য অনেক মৎস্য বীজাগার অত্র এলাকায় গড়ে উঠেছে।
গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগী পালনঃ ২০০৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী উপজেলা পশু পালন অফিস সূত্রে জানা যায় গরুর সংখ্যা ২৭১৫০ টি, মহিষের সংখ্যা ৩১২০ টি, ছাগলের সংখ্যা ২৪,৭৮৬ টি, ভেড়ার সংখ্যা ৫২৪২ টি, মোরগ-মুরগীর সংখ্যা ৪৫,৬৮২ টি, হাঁসের সংখ্যা ৪৮৩০২ টি। উপজেলায় ২৬ টি ডেইরী ফার্ম ও ২৯ টি মুরগীর ফার্ম গড়ে উঠেছে।
দুপচাঁচিয়া উপজেলাতে সরকারী ও বেসরকারী মিলেয়ে ব্যাংকের সংখ্যা ১১টি।
৮৮.৫০ ডিগ্রী পূর্ব থেকে ৮৮.৯৫ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে এবং ২৪.৩২ ডিগ্রী উত্তর থেকে ২৫.০৭ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশে বগুড়া সদর উপজেলা অবস্থিত।
বগুড়ার উত্তরে গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট, উত্তর পশ্চিমে জয়পুরহাটের অংশবিশেষ,পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিমে নওগাঁ, দক্ষিণে নাটোর ও সিরাজগঞ্জের অংশবিশেষ এবং দক্ষিণ পূর্বে সিরাজগঞ্জের অবশিষ্ট অংশ বিদ্যমান। বগুড়ার পূর্বে জামালপুর থাকলেও এর স্থলভাগ সংযুক্তভাবে অবস্থিত নয়।
বগুড়া ভৌগোলিকভাবে ভূমিকম্পের বিপজ্জনক বলয়ে অবস্থিত। তাছাড়া বগুড়া জেলা বরেন্দ্রভূমির অংশবিশেষ যা ধূসর ও লাল বর্ণের মাটির পরিচিতির জন্য উল্লেখ্য।
বগুড়া জেলার জনসংখ্যা মোট: ৩৭,৩৪,৩০০ জন
পুরুষ:৪৯.৬০%
মহিলা:৫০.৪০%|উত্তরবঙ্গের ১৬ টি জেলার মধ্য জনসংখ্যায় বৃহত্তম জেলা হচ্ছে বগুড়া। এবং সারা বাংলাদেশে ষষ্ঠ বৃহত্তম জেলা।
খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতকে বগুড়া মৌর্য শাসনাধীনে ছিল। মৌর্য এর পরে এ অঞ্চলে চলে আসে গুপ্তযুগ । এরপর শশাংক, হর্ষবর্ধন, যশোবর্ধন পাল, মদন ও সেনরাজ বংশ ।
সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলবনের পুত্র সুলতান নাসির উদ্দিন বগড়া ১,২৭৯ থেকে ১,২৮২ পর্যন্ত এ অঞ্চলের শাসক ছিলেন। তার নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম হয়েছিল বগড়া (English:Bogra)। ইংরেজি উচ্চারন 'বগড়া' হলেও বাংলায় কালের বিবতর্নে নামটি পরিবর্তিত হয়ে 'বগুড়া' শব্দে পরিচিতি পেয়েছে। ২ এপ্রিল ২০১৮ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠকে বগুড়ার ইংরেজি নাম Bogura করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বগুড়া জেলার সংসদীয় আসন :৭টি