নলছিটির অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করে রেখেছে তার নদী বন্দরের জন্য । নলছিটি একটি প্রসিদ্ধ নদী বন্দর। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষরা এখানে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে। সেহেতু এখানে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটা ক্ষুদ্র শিল্প। এ শিল্পগুলোর মধ্যে লবন বিশুদ্ধকরণ শিল্প অন্যতম, ব্যক্তিগত কর্মদ্যোগভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান বহুল আকারে গড়ে উঠেছে ঝালকাঠিতে। বঙ্গোপসাগরের লবনাক্ত জল থেকে উৎপন্ন অপরিশোধিত লবন চট্টগ্রামের সাম্পানের মাঝিরা ঝালকাঠির লবন শিল্পে যোগান দেয়। এখানে চট্টগ্রাম থেকে অপরিশোধিত লবন এনে পরিশোধিত করে বাংলার বহু জেলার চাহিদা মেটানো হয়। সারা দক্ষিণ বাংলা ছাড়াও খুলনা,মাদারীপুর,সাতক্ষীরা,চালনা যশোর,বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জে এ লবন সরবরাহ করা হয়। চট্টগ্রাম,চাদপুর ও ঝালকাঠির অর্থনীতির আয়কে বাড়িয়ে তুলছে এ শিল্প। অন্যদিকে বেকারের কর্মসংস্থানকরে দিয়েছে।
অত্র উপজেলায় তাঁত শিল্প অর্থনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ন স্থান দখল করে আছে। এ উপজেলার বেশ কিছু লোক তাতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে চলছে। এ তাতের উৎপাদিত পন্যের মধ্যে লুঙ্গি,গামছা এবং শাড়ীই প্রধান। আজও রাজধানী ঢাকাতে ঝালকাঠি তাতীতের গামছা বিশেষভাবে সমাদৃত। কুটির শিল্পের আর একটি বিরাট অবদান রাখছে, উৎপাদিত পন্যের মধ্যে শীতলপাটি এক বিরাট স্থান দখল করে এসেছে। দুর-দুরান্ত থেকে মানুষ শীতলপাটি কিনতে গ্রীষ্মকালে ঝালকাঠি সদরে আসে। যারা পাটি তৈরী করে তাদের বলা হয় পাটিকর।
চাল এ অঞ্জলের ব্যবসা-বানিজ্যে এক গুরুত্বপূর্ন স্থান দখল করে আছে। পূর্বে চাল ব্যবসা সুষ্ঠভাবে বর্ধিত হারে চালানোর জন্য বহু ধান কল এখানে বিদ্যমান ছিল। আজও চাল এখানকার ব্যবসার প্রদান অংগ। আড়ৎদারী ব্যবসা ঝালকাঠির ব্যবসায়ী অংগনে এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে। ডাল,মরিচ,হলুদ,গুড়, আটা,ময়দা,তেল,কাপড়,সুতা,ঔষধ-পত্র,জুতা ও মসল্লাদি ঝালকাঠির ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে আমদাণীকৃত হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে চলছ।
১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে ঝালকাঠি জেলা প্রতিষ্ঠিত হলে ঝালকাঠি শহরকে জেলা শহরের মর্যাদা দেওয়া হয়।
একাত্তরের ২৩ নভেম্বর ৯নং সেক্টরের মধ্যে এ জনপদ সবার প্রথম হানাদার মুক্ত হয়েছিলো।
নদী বন্দরের জন্য ঝালকাঠি সবসময় ইউরোপীয়দের আকর্ষণ করেছে। ফলে বিভিন্ন সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ডাচ ও ফরাসিরা এখানে ব্যবসা কেন্দ্র খুলেছিল। বাণিজ্যিক গুরুত্বের জন্য ঝালকাঠিকে দ্বিতীয় কলকাতা বলা হত। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঝালকাঠি সদর উপজেলার রেজাউল করিম ২৪ সদস্য বিশিষ্ট মানিক বাহিনী গড়ে তোলেন।
ঝালকাঠির জনপ্রিয় খাবার: ঝালকাঠি প্রাকৃতিক ফল যেমন আম, কলা, জলপাই, কাঠাল, তাল, লিচু, নারিকেল, আমড়া, পেয়ারা।
শহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২২.৬৪০৮৯৩° উত্তর ৯০.১৯৮৮০৩° পূর্ব। সমুদ্র সমতল থেকে শহরটির গড় উচ্চতা ১১ মিটার। ঝালকাঠী শহর ঢাকা থেকে ১৯৫ কি.মি. দক্ষিণে এবং বরিশাল বিভাগীয় শহর থেকে ২০ কি.মি. পশ্চিমে সুগন্ধা নদীর তীরে অবস্থিত। সুগন্ধা নদী থেকে বাসন্ডা খাল নামে একটি শাখা নদী উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে শহরকে দু'ভাগে বিভক্ত করেছে। শহরের ভিতরে আরও ১২টি খাল প্রবহমান রয়েছে।