পাথরঘাটা উপজেলায় দুই ধরনের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। সমগ্র বরগুনা জেলা গাঙ্গেয় জোয়ারভাটা প্লাবনভূমির অন্তর্ভুক্ত। তবে পাথরঘাটার দক্ষিণ-পশ্চিমের কিছু অংশ (যেমন- হরিণঘাটা বন) সুন্দরবনের বিচ্ছিন্ন অংশ হওয়ায় এটি এই প্লাবনভূমি বহির্ভূত। এ অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতিকে সুন্দরবন অঞ্চল বলা হয়।
গাঙ্গেয় প্লাবনভূমির বৈশিষ্ট্য হলো, স্থানীয় ভূমির উচ্চতার পার্থক্য সাধারণত ১ মিটারেরও কম, যেখানে গাঙ্গেয় প্লাবনভূমিতে এই পার্থক্য ২ থেকে ৩ মিটারের মতো। ভূমি গঠনকারী পলল প্রধানত চুনবিহীন কর্দম জাতীয়, তবে নদী তীরসমূহে এবং পূর্বদিকে লোয়ার মেঘনা প্লাবনভূমি সংলগ্ন অবস্থান্তরিত অঞ্চল পলিকণাসমৃদ্ধ এবং সামান্য পরিমাণে চুনযুক্ত। গঙ্গা নদী সারাবছর উত্তর-পূর্ব এবং পূর্বদিকে স্বাদুপানি বহন করলেও লবণাক্ত পানি স্থলভাগের দিকে শুষ্ক মৌসুমে পশ্চিমে এবং প্রায় সারা বছরই কিংবা বছরের বেশিরভাগ সময় ধরে দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে ক্রমেই অনুপ্রবেশ করছে। গঙ্গার শাখানদীসমূহ এবং লোয়ার মেঘনা নদী উচ্চ প্লাবনমাত্রায় থাকাকালীন অবস্থায় প্রধানত বৃষ্টির পানি ভূভাগে আবদ্ধ হয়ে পড়ার কারণে মৌসুমি ঋতুতে পরিমিত গভীরতার বন্যা সংঘটিত হয়। এছাড়া সারাবছর অথবা মৌসুমি ঋতুতে ভরা জোয়ারের সময় প্রধানত অগভীর প্লাবন সংঘটিত হয়ে থাকে। তবে যেসকল বিস্তৃত এলাকায় বাঁধ বা পোল্ডার দিয়ে জোয়ারসৃষ্ট বন্যা প্রতিরোধ করা হয়েছে, সেসকল এলাকা এর ব্যতিক্রম। অনেক সময় অবশ্য বাঁধের অভ্যন্তরে আবদ্ধ বৃষ্টির পানি দ্বারা সাময়িক বন্যা সংঘটিত হয়। শুষ্ক মৌসুমে পাথরঘাটা অঞ্চলের মাটি অতি মাত্রায় লবণাক্ত হয়ে পড়ে।
পাথরঘাটা উপজেলার অধিকাংশ এলাকা সুন্দরবন উচ্ছেদ করে গড়ে উঠেছে। এ অঞ্চল অত্যধিক নিম্নভূমি অঞ্চল। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা মাত্র ০.৯১ মিটার। ধারণা করা হয়, ভূ-অবনমন প্রক্রিয়া এই এলাকার অত্যধিক নিম্ন হওয়ার পেছনে ভূমিকা পালন করেছে। এই ধারণার পেছনে সাক্ষ্য-প্রমাণও রয়েছে, যেমন, এ এলাকায় বৃহৎ ধ্বংসাবশেষের অস্তিত্ব রয়েছে। পাথরঘাটার কিছু এলাকায় এখনো পলি দ্বারা চাপা পরে যাওয়া গাছের গুঁড়ি পাওয়া যায়।
বরগুনা জেলা নারিকেল ও সুপারির জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও বরগুনার বিখ্যাত খাবার -চুইয়া পিঠা, চ্যাবা পিঠা, মুইট্টা পিঠা, আল্লান, বিসকি, তালের মোরব্বা, শিরনি, নাড়িকেলের সুরুয়া, চালের রুটি, ইলিশ মাছ, মিষ্টি।
প্রেক্ষাপট মুক্তিযুদ্ধে বরগুনা ছিল নবম সেক্টরের বুকাবুনিয়া উপ-সেক্টরের অধীন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পরে বরগুনার মুক্তিকামী সহস্রাধিক তরুণ বাঁশের লাঠি, গুটি কয়েক রাইফেল, বন্দুক নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করে। এরই মধ্যে পাকবাহিনী দুর্বল প্রতিরোধকে উপেক্ষা করে পার্শ্ববর্তী পটুয়াখালী জেলা দখল করে ফেলে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুসারে ০৬/০৫/২০১০ তারিখে আমতলী উপজেলা ভেঙ্গে তালতলীকে উপজেলা হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
বরগুনা-৩ বাংলাদেশের একটি বিলুপ্ত সংসদীয় আসন। বাংলাদেশের বরগুনা জেলার আমতলী ও তালতলী উপজেলা নিয়ে এ সংসদীয় আসন গঠিত হয়েছিল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনী গেজেটে এই আসনটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। এই আসনের সর্বশেষ সাংসদ ছিলেন শেখ হাসিনা।
বরগুনা দক্ষিণাঞ্চলের জেলা। এর দক্ষিণে পটুয়াখালী ও বঙ্গোপসাগর, উত্তরে ঝালকাঠি, বরিশাল, পিরোজপুর ও পটুয়াখালী; পূর্বে পটুয়াখালী এবং পশ্চিমে পিরোজপুর ও বাগেরহাট।
জেলা সদরে বরগুনা শহর। একটি পৌরসভা। ৯ ওয়ার্ড ও ১৮ মহল্লা।