পাথরঘাটা উপজেলা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ৯ নম্বর সেক্টরের বুকাবুনিয়া সাব সেক্টরের আওতায় ছিলো। বরগুনা মহাকুমায় থানাভিত্তিক যুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য কয়েকটি দল গঠন করা হয়েছিল। উপ কমান্ডার মেহেদী আলী ইমাম এ দল গঠন করেন। এর মধ্যে বরগুনায় জুলফিকার আহম্মেদ জলফু এবং আঃ ছত্তারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। বেতাগীতে দায়িত্ব দেয়া হয় নায়েক সুবেদার আঃ মোতালেব, হুমায়ুন কবির হিরুকে। বামনায় মোবারক মল্লিক, আঃ মজিদ মিয়া এবং পাথরঘাটায় আলতাফ ও আঃ খালেক, আমতলীর দায়িত্বে ছিলেন সুবেদার হাতেম ও আনসার কমান্ডার আলতাফ হোসেন। সুবেদার হাতেমের ক্যাম্প ছিল আগাঠাকুর পাড়ায়। হঠাৎ কলাপাড়া থেকে আসা পাক সেনারা নীলগঞ্জ নদী হতে আগাঠাকুর পাড়ার ক্যাম্পে আক্রমণ চালালে সুবেদার হাতেমের নেতৃত্বে সেখানে ভয়াবহ সম্মুখ যুদ্ধ হয়। অপর দিকে বেতাগী থানার বদনীখালীতে সুবেদার আঃ মোতালেবের নেতৃত্বে পাক সেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ হয়।
১৯৭১ সালের ১লা ডিসেম্বর রাতের প্রথম প্রহরেই পাথরঘাটা আক্রমণ করে উপজেলাটিকে হানাদার মুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরে মুক্তিযোদ্ধারা তিনটি ট্রুপে ভাগ হয়ে ভোররাতে আক্রমণ করে। প্রথমে পার্শ্ববর্তী বিষখালী নদীর অপরতীর থেকে আক্রমণ শুরু হয়। পরে শহরের তিন দিক থেকে এক যোগে ফায়ারিং শুরু হলে রাজাকার সহ পাকিস্তান হানাদারবাহিনীর দোসররা পলিয়ে যায়। বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিনের বক্তব্য অনুযায়ী ২ ডিসেম্বর পাথরঘাটা হানাদানার মুক্ত হয়। পরবর্তীকালে বিষখালী নদী পার হয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় কিছু রাজাকার, আলবদর, শান্তি কমিটির সদস্য ও তাদের দোসরদের আটক করে পাথরঘাটা থানার উন্মুক্ত মাঠে গণ আদালতে তাদের হাজির করা হয়। গণ আদালতে যুদ্ধকালিন সময়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে তাদের গুলি দিয়ে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে হাতেম রশেদী, সেকান্দার ডাক্তার, হাসেম হাজী অন্যতম।
বরগুনা জেলা নারিকেল ও সুপারির জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও বরগুনার বিখ্যাত খাবার -চুইয়া পিঠা, চ্যাবা পিঠা, মুইট্টা পিঠা, আল্লান, বিসকি, তালের মোরব্বা, শিরনি, নাড়িকেলের সুরুয়া, চালের রুটি, ইলিশ মাছ, মিষ্টি।
প্রেক্ষাপট মুক্তিযুদ্ধে বরগুনা ছিল নবম সেক্টরের বুকাবুনিয়া উপ-সেক্টরের অধীন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পরে বরগুনার মুক্তিকামী সহস্রাধিক তরুণ বাঁশের লাঠি, গুটি কয়েক রাইফেল, বন্দুক নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করে। এরই মধ্যে পাকবাহিনী দুর্বল প্রতিরোধকে উপেক্ষা করে পার্শ্ববর্তী পটুয়াখালী জেলা দখল করে ফেলে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুসারে ০৬/০৫/২০১০ তারিখে আমতলী উপজেলা ভেঙ্গে তালতলীকে উপজেলা হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
বরগুনা-৩ বাংলাদেশের একটি বিলুপ্ত সংসদীয় আসন। বাংলাদেশের বরগুনা জেলার আমতলী ও তালতলী উপজেলা নিয়ে এ সংসদীয় আসন গঠিত হয়েছিল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনী গেজেটে এই আসনটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। এই আসনের সর্বশেষ সাংসদ ছিলেন শেখ হাসিনা।
বরগুনা দক্ষিণাঞ্চলের জেলা। এর দক্ষিণে পটুয়াখালী ও বঙ্গোপসাগর, উত্তরে ঝালকাঠি, বরিশাল, পিরোজপুর ও পটুয়াখালী; পূর্বে পটুয়াখালী এবং পশ্চিমে পিরোজপুর ও বাগেরহাট।
জেলা সদরে বরগুনা শহর। একটি পৌরসভা। ৯ ওয়ার্ড ও ১৮ মহল্লা।