The Ballpen
পিরোজপুর জেলার ইতিহাস - theballpen

পিরোজপুর জেলার ইতিহাস

25th Dec 2022 | পিরোজপুর জেলা |

সুন্দরবনের কোলঘেঁষা কালীগঙ্গা, বলেশ্বর, দামোদর, সন্ধ্যা বিধৌত প্রাকৃতিক সবুজের লীলাভূমি পিরোজপুর জেলা। বৈচিত্র্যে ভরপুর পিরোজপুর জেলার উত্তরে গোপালগঞ্জ, উত্তর-পূর্বে বরিশাল ও ঝালকাঠী, দক্ষিণ-পশ্চিমে বাগেরহাট এবং দক্ষিণ-পূর্বে বরগুনা জেলা অবস্থিত। জেলার একদিকে লবণপানি অন্য দিকে মিঠা পানির অবস্থান। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে বাকেরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন নদী গর্ভে, মোহনায় ছোট ছোট দ্বীপাঞ্চল সৃষ্টি এবং এর দ্রুত বৃদ্ধি হতে থাকে। দক্ষিণাঞ্চলের সুন্দরবনের জঙ্গল কাটা হলে আবাদযোগ্য ভূমির আয়তনও ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ সময় ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ, দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক বিদ্রোহ, পিরোজপুরের কালীগঙ্গা, কচাঁ, বলেশ্বর প্রভৃতি নদীতে মগ জলদস্যুদের উপদ্রব, বিশেষত: ঐ সকল নদীতে চুরি, ডাকাতি, লুন্ঠনসহ বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে সাধারণ প্রশাসন এবং ভূমি প্রশাসনের সুবিধাজনক অধ্যায় সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং ফৌজদারি ও দেওয়ানি বিরোধের বিচারকার্য তড়িৎ সম্পাদনের লক্ষ্যে পিরোজপুর মহকুমা স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। বাকেরগঞ্জ তদানীন্তন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এইচ.এ.আর. আলেকজান্ডার ১৮৫৬ সালের ২৪ এপ্রিল পিরোজপুরে মহকুমা স্থাপনের প্রস্তাব দেন।

১৮৫৯ সালের ২৮ অক্টোবর পিরোজপুর মহকুমা স্থাপিত হয়। ঐ সময় বর্তমান বাগেরহাট জেলা (মোড়লগঞ্জ, কচুয়া) পিরোজপুর মহকুমার অর্ন্তগত ছিল। ১৮৬৩ সালে বাগেরহাট একটি মহকুমা হিসেবে যশোর জেলার অর্ন্তগত হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় এই জেলা থেকে কাঠালিয়া (ঝালকাঠী), বামনা (বরগুনা), পাথরঘাটা (বরগুনা), বানারীপাড়া (বরিশাল) উপজেলা এলাকাগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পিরোজপুর মহকুমা স্থাপনের সংগে সংগে প্রশাসনিক সুবিধার জন্য পাড়েরহাট বন্দর সংশ্লিষ্ট টগড়া হতে থানা এবং কাউখালী হতে মুন্সেফি আদালত পিরোজপুর সদরে স্থানান্তর করা হয়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন ১৭৯০ সালে গর্ভণর জেনারেল কর্ণওয়ালিশ ভারত শাসন সংস্কারের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটান। তৎপ্রেক্ষিতে বাকেরগঞ্জে ১০টি থানা স্থাপন করা হয়। তন্মধ্যে পিরোজপুরের অদূরে পাড়েরহাটের নিকটবর্তী টগরা থানা, কেওয়ারি থানা (বর্তমান নেছারাবাদ বা স্বরূপকাঠী ও বানারীপাড়া) এবং কাউখালী থানা অন্যতম। পরবর্তীতে কাউখালীতে একটি আবগারি অফিস ও সাব-রেজিষ্টার অফিস স্থাপন করা হয়।

মহকুমা প্রতিষ্ঠার পর একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং ডেপুটি কালেক্টরের উপর প্রশাসন কার্য এবং মুন্সেফের উপর দেওয়ানি বিচারের কার্যভার অর্পণ করা হয়। পিরোজপুর মহকুমা স্থাপনের প্রায় ৪বছর পর ১৮৬৩ সালে বেঙ্গল রেভিনিউ এবং টপোগ্রাফিক্যাল সার্ভে সমাপ্ত হলে কচুয়া এবং মোড়েলগঞ্জকে পিরোজপুর মহকুমা থেকে কেটে নিয়ে বাগেরহাটকে মহকুমার মর্যাদায় উন্নীত করা হয়। তখন পিরোজপুরের আয়তন সীমানা নির্ধারণ করা হয় ৭২৯ বর্গ মাইল। ১৮৬৫ সালের ১ এপ্রিল পিরোজপুর সাব-রেজিষ্টার অফিস, ১৮৬৫ সালে পিরোজপুর দাতব্য চিকিৎসালয়, ১৮৬৫ সালে পিরোজপুর মিনিসিপ্যালিটি, ১৮৮৭ সালে লোকাল বোর্ড, ১৮৬৫ সালে স্থাপিত মাইনর স্কুল ১৮৮২ সালে উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে রূপান্তর এবং ১৮৯৩ সালে নারী শিক্ষার জন্য আরবান ইংলিশ গালর্স হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।     

১৮৫৯ সালের ২৮ অক্টোবর পিরোজপুর মহকুমা ১৯৮৪ সালে জেলায় রূপান্তরিত হয়। ১৮৮৫ সালে পিরোজপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। পিরোজপুর নামকরণের একটা সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। নাজিরপুর উপজেলার শাখারী কাঠির জনৈক হেলালউদ্দীন মোঘল নিজেকে মোঘল বংশের শেষ বংশধর হিসেবে দাবী করেছিলেন। তাঁর মতে বাংলার সুবেদার শাহ্ সুজা আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার নিকট পরাজিত হয়ে বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলে এসেছিলেন এবং আত্মগোপনের এক পর্যায়ে নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর পারে একটি কেল্লা তৈরি করে কিছুকাল অবস্থান করেন। মীর জুমলার বাহিনী এখানেও হানা দেয় এবং শাহ্ সুজা তার দুই কন্যাসহ আরাকানে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি অপর এক রাজার চক্রান্তে নিহত হন। পালিয়ে যাওয়ার সময় তার স্ত্রী  এক শিশু পুত্রসহ থেকে যায়। পরবর্তীতে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে ধীরে ধীরে পশ্চিমে চলে এসে বর্তমান পিরোজপুরের পার্শ্ববর্তী দামোদর নদীর মুখে আস্তানা তৈরি করেন। এ শিশুর নাম ছিল ফিরোজ এবং তার নাম অনুসারে নাম হয় ফিরোজপুর। কালে ভাষার পরিবর্তনে নাম হয়েছে পিরোজপুর।

‘‘পলি মাটির ঊর্বরা ক্ষেত শ্যামল সবুজ শষ্য ভরা,

মৎস্য, কৃষি, ফল সম্পদে এ জেলা তাই সবার সেরা।’’





Related

পিরোজপুর জেলা কি জন্য বিখ্যাত?

 পিরোজপুর জেলা নারিকেল, সুপারি, পেয়ারা, আমড়া এর জন্য বিখ্যাত।

প্রবাদ প্রবচন ও বিয়ের গানের জন্য পিরোজপুর বিখ্যাত। বর্তমানে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, দিশারী শিল্পী গোষ্ঠী,সংগীতা, ধ্বনি শিল্পী গোষ্ঠী, রুপান্তর নাট্য গোষ্ঠী, পিরোজপুর থিয়েটার, কৃষ্ণচুড়া থিয়েটার, বলাকা নাট্যম্ প্রভৃতি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী আঞ্চলিক ঐতিহ্য লালন পালন ও প্রচারে একাগ্র প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।



Related

পিরোজপুর কত নম্বর সেক্টরে ছিল?

মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুর ছিল মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টরের অধীন সুন্দরবন সাব-সেক্টর মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ এর কমান্ডের আওতায়।



Related

পিরোজপুর জেলার ভৌগোলিক সীমানা

পিরোজপুরের উত্তরে বরিশাল জেলা ও গোপালগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে বরগুনা জেলা, পূর্বে ঝালকাঠি জেলা ও বরগুনা জেলা এবং পশ্চিমে বাগেরহাট জেলা ও সুন্দরবন অবস্থিত। পশ্চিমে বলেশ্বর নদী পিরোজপুরকে বাগেরহাটের থেকে আলাদা করেছে।



Related

পিরোজপুর জেলার জনসংখ্যা কত?

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পিরোজপুর জেলার মোট জনসংখ্যা ১১,১৩,২৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫,৪৮,২২৮ জন এবং মহিলা ৫,৬৫,০২৯ জন। মোট পরিবার ২,৫৬,০০২টি।



Related

পিরোজপুর জেলার ভূ-ভাগের গঠন

পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক মতে, ঋগবেদের আমলেও বঙ্গের দক্ষিণভাগ ছিল অতল সমুদ্রে নিমজ্জিত। মৌর্যযুগে পলল সংযোগে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ গড়ে ওঠলে ভূ-তাত্ত্বিকভাবে ক্রমশ পিরোজপুর ভূ-ভাগের পলল উত্থান ঘটে। পৌরাণিক নদী গঙ্গার পূর্বগামী শাখা নলিনী, হলদিনী, পাবনী নামে পরিচিত ছিল। পৌরাণিক নদীর উত্তরসূরী আধুনিক গঙ্গা, পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, সুগন্ধার পলিরেণু গাঙ্গেয় বদ্বীপে যে সব দ্বীপ তথা নব্য ভূ-ভাগ সৃষ্টি করে, পিরোজপুর জেলার জনপদ সে সব দ্বীপেরই অংশবিশেষ। তবে জনপদ হিসেবে গড়ে ওঠেছে আরও পরে। ঐতিহাসিকদের ধারণায় পাল ও সেন আমলে বিচ্ছিন্নভাবে জনবসতি গড়ে উঠতে শুরু করলেও মূলত মোগল ও সুলতানি আমলে এ অঞ্চলে ব্যাপক জনবসতি গড়ে ওঠে। তবে উনিশ শতক পর্যন্ত পিরোজপুর জেলার একটি অংশ ছিল জলাশয়। এর মধ্যে স্বরূপকাঠির সাতলা, নাজিরপুরের বিল ও ভান্ডারিয়া অঞ্চলে চেচরি-রামপুর বিল অন্যতম।