The Ballpen
পিরোজপুর জেলার প্রথম পুলিশী থানা - theballpen

পিরোজপুর জেলার প্রথম পুলিশী থানা

25th Dec 2022 | পিরোজপুর জেলা |

এ সব পরগণা থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব এবং লবণ খাত থেকে আদায়কৃত শুল্কের নিরাপত্তার জন্য এ অঞ্চলে একটি পুলিশী থানা স্থাপন ছিল জরুরি। তাছাড়া অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে বলেশ্বর ও কচুয়া নদীতে নৌ-ডাকাতি ছিল নৈমিত্তিক ব্যাপার। এ সময় বলেশ্বর নদীপথে কলকাতার সঙ্গে ঢাকা-সিলেট আসাম ও কাছাড় পথে নৌ-যাতায়াত ছিল। লিন্ডসে নামক সিলেটের একজন কালেক্টর ও ম্যাজিস্ট্রেট কলকাতা থেকে নৌ-পথে সিলেট যাওয়ার পথে কচা নদীতে নৌ-ডাকাতের কবলে পড়েন। ফলে ফোর্ট উইলিয়াম থেকে ঢাকার প্রাদেশিক কাউন্সিলের কাছে নির্দেশ আসে বলেশ্বর নদীতে জল থানা স্থাপন করার।

১৭৯০ সালে গভর্নর লর্ড কর্নওয়ালিশ ভারত শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটান এবং জেলা সৃষ্টি করেন। ১৭৯৭ সালে ঢাকা-জালালপুর জেলা থেকে আলাদা করে বাখরগঞ্জ জেলা সৃষ্টি করা হয় এবং বৃহত্তর জেলাগুলোতে সার্কেল থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি থানা স্থাপন করা হয়। বাখরগঞ্জ জেলা সৃষ্টি করে যে ১০টি থানা স্থাপিত হয়েছিল তার মধ্যে বর্তমান পিরোজপুর অঞ্চলে টগরা, কাউখালী ও কেওয়ারী থানা ছিল অন্যতম। কালীগঙ্গা নদীতীরে ছিল কেওয়ারী থানার অবস্থান। স্বরূপকাঠি, নাজিরপুর, বানারীপাড়া এবং ঝালকাঠির একাংশ ছিল এ থানার অন্তর্গত। নদীভাঙ্গনে কেওয়ারী থানাই পরবর্তীতে স্বরূপকাঠিতে স্থানান্তরিত হয়। পক্ষান্তরে, পাড়েরহাটে ছিল টগরা থানার প্রধান কেন্দ্র। বর্তমান পিরোজপুর, ভাণ্ডারিয়া, কাঠালিয়া, বামনা, পাথরঘাটা, মঠবাড়িয়া ছিল এ থানার অন্তর্গত।

পরে ১৮৫৯ সালে মঠবাড়িয়ায় আলাদা থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান কাউখালী, রাজাপুর ও ঝালকাঠির একাংশ নিয়ে ছিল কাউকালী থানা। মোগল আমল থেকেই কাউখালী ছিল মোগলদের লবণ শুল্ক কেন্দ্র। কথিত আছে যে, ১৬২৮ সালে যুবরাজ শাহাজাহান ঢাকা সফরকালে কাউখালী আসেন এবং সেলিমাবাদ পরগনার জমিদার মদন মোহন তার সাথে দেখা করেন। এ সময় ঝালকাঠির লুত্ফাবাদ ছিল সেলিমাবাদ পরগনার সদর দফতর। ১৬৫৮ সালে রায়ের কাঠির জঙ্গল আবাদ করে জমিদার রুদ্র নারায়ণ রায় লুত্ফাবাদ থেকে পিরোজপুরের রায়ের কাঠিতে এসে বসবাস শুরু করলে রায়েরকাঠিকে কেন্দ্র করেই পিরোজপুর অঞ্চলের নতুন নতুন আবাদ ও সমৃদ্ধি ঘটতে শুরু করে। ঝালকাঠির সন্নিকটে সুতালরি বন্দর, রায়ের কাঠির নিকটস্থ বন্দর কুমারখালী ও পার্শ্ববর্তী রাজগঞ্জ বা রাজারহাট, বাখরগঞ্জ, বারৈকরন ও নলছিটি ছিল অষ্টাদশ শতকে সেলিমাবাদ পরগনার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র।

ফলে এ অঞ্চল মোগল নবাব, অমাত্য ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিসহ দেশি-বিদেশি বণিকদের নজরে আসে। লবণ ব্যবসার পাশাপাশি চালের ব্যবসাও ছিল লাভজনক। বহু আর্মেনিয়ান, পর্তুগীজ ব্যবসায়ী, ঢাকার লৌহজং-এর পাল চৌধুরী, কুণ্ডু ও ঢাকার নবাব পরিবারের ইউরোপীয়দের সাথে লবণ ব্যবসা উনিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তাছাড়া লবণ শুল্ক আদায়ের জন্য চরখালী, রমনা-বামনা ও গুলশাখালীতে ছিল লবণ চৌকি। ১৮২৯ সনে এ এলাকা ঢাকা বিভাগের 'কমিশনার অব রেভিনিউ'-এর অধীনে আসে। তবে অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে ব্যবসা দেখাশুনার জন্য বারৈকরণে কোম্পানির রেসিডেন্ট বসবাস করতো ও ১৭৭০ এবং ১৭৮৭ সালের দুর্ভিক্ষের সময়ে বহু দেশীয় ও ইংরেজ বণিক সেলিমাবাদ অঞ্চলে চালের ব্যবসায় ঝুঁকে পড়ে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রেকর্ডে দেখা যায় জনৈক আর্মেনিয়ান খাজা কোয়ার্ক বা 'কাউ' সাহেবের লবণ ব্যবসা ছিল কাউখালীতে। তার নামেই কাউখালীর নামকরণ হয়েছে। তাদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য এ অঞ্চলে কোম্পানির বরকন্দাজ নিয়োগ করা হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশী থানা স্থাপন না করা পর্যন্ত কোন স্থায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না।





Related

পিরোজপুর জেলা কি জন্য বিখ্যাত?

 পিরোজপুর জেলা নারিকেল, সুপারি, পেয়ারা, আমড়া এর জন্য বিখ্যাত।

প্রবাদ প্রবচন ও বিয়ের গানের জন্য পিরোজপুর বিখ্যাত। বর্তমানে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, দিশারী শিল্পী গোষ্ঠী,সংগীতা, ধ্বনি শিল্পী গোষ্ঠী, রুপান্তর নাট্য গোষ্ঠী, পিরোজপুর থিয়েটার, কৃষ্ণচুড়া থিয়েটার, বলাকা নাট্যম্ প্রভৃতি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী আঞ্চলিক ঐতিহ্য লালন পালন ও প্রচারে একাগ্র প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।



Related

পিরোজপুর কত নম্বর সেক্টরে ছিল?

মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুর ছিল মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টরের অধীন সুন্দরবন সাব-সেক্টর মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ এর কমান্ডের আওতায়।



Related

পিরোজপুর জেলার ভৌগোলিক সীমানা

পিরোজপুরের উত্তরে বরিশাল জেলা ও গোপালগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে বরগুনা জেলা, পূর্বে ঝালকাঠি জেলা ও বরগুনা জেলা এবং পশ্চিমে বাগেরহাট জেলা ও সুন্দরবন অবস্থিত। পশ্চিমে বলেশ্বর নদী পিরোজপুরকে বাগেরহাটের থেকে আলাদা করেছে।



Related

পিরোজপুর জেলার জনসংখ্যা কত?

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পিরোজপুর জেলার মোট জনসংখ্যা ১১,১৩,২৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫,৪৮,২২৮ জন এবং মহিলা ৫,৬৫,০২৯ জন। মোট পরিবার ২,৫৬,০০২টি।



Related

পিরোজপুর জেলার ভূ-ভাগের গঠন

পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক মতে, ঋগবেদের আমলেও বঙ্গের দক্ষিণভাগ ছিল অতল সমুদ্রে নিমজ্জিত। মৌর্যযুগে পলল সংযোগে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ গড়ে ওঠলে ভূ-তাত্ত্বিকভাবে ক্রমশ পিরোজপুর ভূ-ভাগের পলল উত্থান ঘটে। পৌরাণিক নদী গঙ্গার পূর্বগামী শাখা নলিনী, হলদিনী, পাবনী নামে পরিচিত ছিল। পৌরাণিক নদীর উত্তরসূরী আধুনিক গঙ্গা, পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, সুগন্ধার পলিরেণু গাঙ্গেয় বদ্বীপে যে সব দ্বীপ তথা নব্য ভূ-ভাগ সৃষ্টি করে, পিরোজপুর জেলার জনপদ সে সব দ্বীপেরই অংশবিশেষ। তবে জনপদ হিসেবে গড়ে ওঠেছে আরও পরে। ঐতিহাসিকদের ধারণায় পাল ও সেন আমলে বিচ্ছিন্নভাবে জনবসতি গড়ে উঠতে শুরু করলেও মূলত মোগল ও সুলতানি আমলে এ অঞ্চলে ব্যাপক জনবসতি গড়ে ওঠে। তবে উনিশ শতক পর্যন্ত পিরোজপুর জেলার একটি অংশ ছিল জলাশয়। এর মধ্যে স্বরূপকাঠির সাতলা, নাজিরপুরের বিল ও ভান্ডারিয়া অঞ্চলে চেচরি-রামপুর বিল অন্যতম।