পিরোজপুরের সন্নিকটে দক্ষিণদিকে বঙ্গোপসাগর। অন্যদিকে অসংখ্য নদ-নদী বেষ্টিত, খাল-বিল-ঝিল পূর্ণ জল মেখলা ভূষিত পিরোজপুর। বিশাল জলভাগ সংশিস্নষ্ট পিরোজপুরের নদনদীতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টার দু’বার জোঁয়ার-ভাটা হয়। জোঁয়ার-ভাটার স্থায়িত্বকাল প্রতিবারে ৬ ঘন্টা। পিরোজপুর অঞ্চলে বর্ষাকালীন সময়ে জোয়ারের বেগে ১০-১৫ ফুট পানির স্ফীতি বা ফুলে ওঠা পরিলক্ষিত হয়। বছরে অন্যান্য সময় জোয়ার-ভাটার বেগ এবং স্থায়িত্বের সময় দীর্ঘায়িত হয়। নিমণ অঞ্চল আষাড় মাস থেকে অক্টোবর পর্যমত্ম পানিমগ্ন থাকে। পিরোজপুরের অঞ্চলের প্রাচীন নদীগুলো সংকুচিত হয়ে বহু সংখ্যক বিলের সৃষ্টি হয়েছে। এ জেলার বিল-ঝিলের মধ্যে নেছারবাদ থানার (স্বরূপকাঠী) ‘আটঘর’ এবং ‘কুড়িয়ানা’ এবং নাজিরপুর থানার ‘দেউলবাড়ী-দোবড়া ও ঝনঝনিয়া’ প্রধান। প্রাকৃতিক কারণে বিল-ঝিলের সৃষ্টি হয়েছে বলে ঐতিহাসিকগণ অনুমান করেছেন। ঐতিহাসিকগণ এইচ, বিভারিজ আরও অনুমান করেছেন যে, ১৭৬৩ সালে ঝড় এবং ভূমিকম্পে ভান্ডারিয়া থানার চেচরীরামপুরে বিলের সৃষ্টি হয়েছে।
পিরোজপুর জেলা নারিকেল, সুপারি, পেয়ারা, আমড়া এর জন্য বিখ্যাত।
প্রবাদ প্রবচন ও বিয়ের গানের জন্য পিরোজপুর বিখ্যাত। বর্তমানে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, দিশারী শিল্পী গোষ্ঠী,সংগীতা, ধ্বনি শিল্পী গোষ্ঠী, রুপান্তর নাট্য গোষ্ঠী, পিরোজপুর থিয়েটার, কৃষ্ণচুড়া থিয়েটার, বলাকা নাট্যম্ প্রভৃতি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী আঞ্চলিক ঐতিহ্য লালন পালন ও প্রচারে একাগ্র প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুর ছিল মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টরের অধীন সুন্দরবন সাব-সেক্টর মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ এর কমান্ডের আওতায়।
পিরোজপুরের উত্তরে বরিশাল জেলা ও গোপালগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে বরগুনা জেলা, পূর্বে ঝালকাঠি জেলা ও বরগুনা জেলা এবং পশ্চিমে বাগেরহাট জেলা ও সুন্দরবন অবস্থিত। পশ্চিমে বলেশ্বর নদী পিরোজপুরকে বাগেরহাটের থেকে আলাদা করেছে।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পিরোজপুর জেলার মোট জনসংখ্যা ১১,১৩,২৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫,৪৮,২২৮ জন এবং মহিলা ৫,৬৫,০২৯ জন। মোট পরিবার ২,৫৬,০০২টি।
পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক মতে, ঋগবেদের আমলেও বঙ্গের দক্ষিণভাগ ছিল অতল সমুদ্রে নিমজ্জিত। মৌর্যযুগে পলল সংযোগে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ গড়ে ওঠলে ভূ-তাত্ত্বিকভাবে ক্রমশ পিরোজপুর ভূ-ভাগের পলল উত্থান ঘটে। পৌরাণিক নদী গঙ্গার পূর্বগামী শাখা নলিনী, হলদিনী, পাবনী নামে পরিচিত ছিল। পৌরাণিক নদীর উত্তরসূরী আধুনিক গঙ্গা, পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, সুগন্ধার পলিরেণু গাঙ্গেয় বদ্বীপে যে সব দ্বীপ তথা নব্য ভূ-ভাগ সৃষ্টি করে, পিরোজপুর জেলার জনপদ সে সব দ্বীপেরই অংশবিশেষ। তবে জনপদ হিসেবে গড়ে ওঠেছে আরও পরে। ঐতিহাসিকদের ধারণায় পাল ও সেন আমলে বিচ্ছিন্নভাবে জনবসতি গড়ে উঠতে শুরু করলেও মূলত মোগল ও সুলতানি আমলে এ অঞ্চলে ব্যাপক জনবসতি গড়ে ওঠে। তবে উনিশ শতক পর্যন্ত পিরোজপুর জেলার একটি অংশ ছিল জলাশয়। এর মধ্যে স্বরূপকাঠির সাতলা, নাজিরপুরের বিল ও ভান্ডারিয়া অঞ্চলে চেচরি-রামপুর বিল অন্যতম।