বরগুনা নামের ইতিহাসের সুনির্দিষ্ট কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় নি। তবে বরগুনা নামের ব্যাখ্যা বিভিন্ন সুধীজন কোথাও কোথাও বিভিন্ন ভাবে উলেস্নখ করেছেন। বরগুনা মূলত বাকলা চন্দ্রদ্বীপের একটি অংশ। বর্তমানে বরিশালের অধিকাংশ এলাকাই এক সময় বাকলা চন্দ্রদ্বীপ নামে অবহিত ছিল।
এলাকায় বরগুনা নামের ব্যাখ্যা স্থানীয় জনগণের মুখে মুখে প্রচারিত আছে। তবুও এর নাম করণের কয়েকটি ব্যাখ্যা লিখিত আকারেও লিপি বদ্ধ আছে। যেমনঃ ‘বরগোনা’ থেকে বরগুনা, বড় গুনা থেকে বরগুনা , ‘বড় গুনাহ’ থেকে বরগুনা, বারগু অথবা বারগুইন নামের এক রাখাইন বা বাওয়ালীর নাম অনুসারে বরগুনা এবং বড় গুনের লোকদের সমাগমের জন্য এলাকার নাম বরগুনা হয়েছে।
এক সময় বরগুনাতে একমাত্র নৌকা ছাড়া কোন যানবাহন ছিল না। বাওয়ালীরা বড় বড় কাঠামো নৌকা নিয়া এক গোনে পৌঁছাত খাকদন নদীতে। খাকদন নদীর তীরেই বরগুনা শহরটি অবস্থিত। এক সময় খাকদন নদীটি খাক ও নলখাগড়া দিয়ে ভর্তি ছিল বলে এ নদীটির নাম খাকদন রাখা হয়েছে বলে জনশ্রম্নতি আছে। বিষখালী নদী ও খাকদন নদীর মিলিতস্থানের কিছু ভিতরে খাকদন নদীর তীরে নৌকাগুলি পরবর্তী গোনের জন্য অপেÿা করত। গোন মানে জোয়ার ভাটার সময় স্রোতের অনুকুল প্রবাহ। আর নৌকা চালানর জন্য ব্যবহার হতো বৈঠা, লগি, দাঁড়,পাল, গুন ইত্যাদি। অনুকুল প্রভাহে নৌকা চালতে মাঝি মালস্নার শ্রম লাগত কম। এ বড় গোনের জন্য অপেÿার স্থানে ছোট খাট দোকান গড়ে উঠেছিল। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে দÿÿণ অঞ্চলে সমুদ্র উপকূলে গড়ে উঠেছিল একটি জনপদ। হয়তো বা বাঁওয়ালীরা সেটির নাম রেখেছিল বড় গোনা। কালের বিবর্তনে সে নাম হয়ে যায় বরগুনা। এছাড়া এলাকার প্রবীণদেরও কিছু কিছু পুসত্মকে অনুরূপ বর্ণনা পওয়া য়ায়।
এ ধারনার পাশা পাশি অন্য ধারনাও আছে। যেমন প্রতিকুল প্রবাহে বাওয়ালীরা নৌকা চালাতে ব্যবহার করত বড় গুন দড়ি। গুন দড়ি মানে লম্বা রশি। প্রতিকুল স্রোতে একজন মাঝি হাল ধরে থাকত আর অন্যরা নদী বা খালের তীরে গুন দড়ি টেনে নৌকা এগিয়ে যেত। নৌকার আকার ও ধরনের উপর গুনদড়ির দৈর্ঘ্য নির্ভর করত। ছোট খাট নদীতে কাছাকাছি দূরত্ব অতিক্রের জন্য ছোট গুন আর বড় গোনের প্রয়োজনে মাঝিরা ব্যবহার করত বড় গুন। উত্তরাঞ্চল থেকে এ এলাকায় পৌঁছাতে বড় গুনের ব্যবহারকে কেন্দ্র করেও বড়গুন এবং পরবর্তীতে বড়গুন থেকে বরগুনা নাম হতে পারে।
বরগুনা নামের আর একটি ধারনা দেন এলাকার প্রবীনরা। সেটি গর্বের এবং ঐতিহ্যের। এ এলাকার লোকদের একটি গুন ছিল আগত অতিথিকে অতিথি পরায়নতা। আত্মীয় বা অনাত্মীয় কেহ গৃহসত্মবাড়ী বাড়ী এলে তাকে বিভিন্ন প্রকার খাওয়া দাওয়া -যেমন দুধ কলা, নারিকেল ও গুড় দিয়ে আপ্যায়ন করাতো। এখনও এলাকায় মেহমানদারী করা একটি ঐতিহ্যে ব্যাপার হয়ে আছে। উত্তরাঞ্চল থেকে আসা এখানে বাওয়ালীদের এই অতিথি পরায়নতা মুগ্ধ করত বলে হয়তোবা এলাকার নাম করন হতে পারে বড়গুনা। যা কালের পরিক্রমায় বরগুনা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
পাশাপাশি আর একটি বদনামের কারণে এলাকার নাম হতে পারে বরগুনা । এলাকায় পাপের কাজের আর একটি নাম ‘গুনাহ’। হেনরি বেভারিন্দ, খোশাল চন্দ্র রায়, সিরাজ উদ্দিন আহমেদ ছাড়াও পাশ্ববর্তী জেলা সমূহের ইতিহাস পাঠে জানা যায় এক সময় এ এলাকা ছিল পর্তুগীজ ও মগ জল দস্যুদের অভয়ারণ্য। এছাড়া মোগল ও বৃটিশ আমলে তাদের বিদ্রোহীরা এখানে আত্মগোপন করত। বরগুনা এক সময় বিপস্নবীদের আশ্রয়স্থল, কুখ্যাত জলদস্যু, ডাকাত বা সমাজ বিরোধীদের আশ্রয়ছিল বলে প্রমান পাওয়া যায় বিভিন্ন লেখায় ও বাসত্মব অবস্থায়। বড় বড় গুনাহ প্রকৃতির লোকের আশ্রয়স্থল ছিল বলে এলাকার নাম হতে পারে বড় গুনাহ , যা পরবর্তীতে ‘‘বড়গুনা’’হিসেবে পরিচিত হয়েছে।
বরগুনা নামের সর্বশেষে মতামত হচ্ছে ‘‘বারগু’’বা ‘‘বারগুইন’’থেকে বরগুনা । বিভিন্ন লেখায় ‘‘বারগু’’এক মগের নাম হিসেবে, অন্যদিকে ‘‘বারগুইন’’শব্দটি কেউ কেউ উলেস্নখ করেছেন এ অঞ্চলে বৃটিশ রাজ্যের প্রথম প্রতিনিধি হিসেবে। আবার কেউ কেউ ‘‘বারগু’’শব্দটিকে বাওয়ালী নেতার নাম হিসেবেও উলেস্নখ করেছেন। এসব বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে বরগুনা নাম করণের প্রথম দু’ টি মতামতেরই বেশী সমর্থন পাওয়া যায়।
বরগুনা জেলা নারিকেল ও সুপারির জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও বরগুনার বিখ্যাত খাবার -চুইয়া পিঠা, চ্যাবা পিঠা, মুইট্টা পিঠা, আল্লান, বিসকি, তালের মোরব্বা, শিরনি, নাড়িকেলের সুরুয়া, চালের রুটি, ইলিশ মাছ, মিষ্টি।
প্রেক্ষাপট মুক্তিযুদ্ধে বরগুনা ছিল নবম সেক্টরের বুকাবুনিয়া উপ-সেক্টরের অধীন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পরে বরগুনার মুক্তিকামী সহস্রাধিক তরুণ বাঁশের লাঠি, গুটি কয়েক রাইফেল, বন্দুক নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করে। এরই মধ্যে পাকবাহিনী দুর্বল প্রতিরোধকে উপেক্ষা করে পার্শ্ববর্তী পটুয়াখালী জেলা দখল করে ফেলে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুসারে ০৬/০৫/২০১০ তারিখে আমতলী উপজেলা ভেঙ্গে তালতলীকে উপজেলা হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
বরগুনা-৩ বাংলাদেশের একটি বিলুপ্ত সংসদীয় আসন। বাংলাদেশের বরগুনা জেলার আমতলী ও তালতলী উপজেলা নিয়ে এ সংসদীয় আসন গঠিত হয়েছিল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনী গেজেটে এই আসনটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। এই আসনের সর্বশেষ সাংসদ ছিলেন শেখ হাসিনা।
বরগুনা দক্ষিণাঞ্চলের জেলা। এর দক্ষিণে পটুয়াখালী ও বঙ্গোপসাগর, উত্তরে ঝালকাঠি, বরিশাল, পিরোজপুর ও পটুয়াখালী; পূর্বে পটুয়াখালী এবং পশ্চিমে পিরোজপুর ও বাগেরহাট।
জেলা সদরে বরগুনা শহর। একটি পৌরসভা। ৯ ওয়ার্ড ও ১৮ মহল্লা।