গাঙ্গেয় উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় জনপদ বৃহত্তর বরিশালের রয়েছে এক গৌরবময় ঐতিহাসিক অধ্যায়। সমৃদ্ধশালী সেই ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে এখানকার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শনের এক বিশাল সম্ভার।
বাংলার বারো ভুঁইয়াদের অন্যতম রাজা কন্দর্পনারায়ণের পুত্র রামচন্দ্র কর্তৃক পঞ্চদশ শতকের শেষ দিকে বরিশাল শহরের অনতিদূরে মাধবপাশা নামক স্থানে বাকলার রাজধানী স্থাপিত হয়। রামচন্দ্র মাধবপাশার নতুন নামকরণ করেন শ্রীনগর। নতুন রাজধানীতে সুদৃশ্য অট্টালিকা, বিভিন্ন দেব-দেবীর মন্দির, মঠ ও দীঘি খনন করে রামচন্দ্র আপন কীর্তিকে প্রসারিত করেন। আজ সেই প্রাচীন রাজবাড়ি ও মন্দিরসমূহের ধ্বংসাবশেষ কালের সাক্ষী হয়ে ইতিহাসের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
বরিশাল শহরের উত্তর দিকে গৌরনদীর কসবা নামক স্থানে বহু গম্বুজ বিশিষ্ট একটি প্রাচীন মসজিদ রয়েছে। এই মসজিদটির সঙ্গে বাগেরহাটের নয় গম্বুজ মসজিদ ও খুলনার মসজিদকুড়ের মসজিদের সাদৃশ্য রয়েছে। কোনো শিলালিপি না থাকলেও এই বিখ্যাত স্থাপনাটি পঞ্চদশ শতাব্দীতে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়।
বাকেরগঞ্জের অদূরে শিয়ালগুনি মসজিদ এই অঞ্চলের আরেকটি বিখ্যাত প্রাচীন মসজিদ। কালের নির্মম পেষণে বর্তমানে দৈন্যদশা প্রাপ্ত হলেও এই মসজিদের কারুকার্য এখনো দর্শনীয়। বলা হয়ে থাকে নসরত শাহ এই মসজিদের নির্মাতা।
বরিশালের অদূরে শোলক গ্রামে নবাবী আমলের অট্টালিকা, মঠ ও মন্দির রয়েছে। গৈলা-ফুলশ্রী গ্রামেও অনেক প্রাচীন অট্টালিকা, মঠ ও মন্দির আছে। নথুল্লাবাদে দক্ষিণ চক্র, বিরূপাক্ষ ও কালী মন্দির আছে।
এ অঞ্চলে প্রাক-ইসলাম ও তার পরবর্তী সময়ের বেশ কিছু মূর্তি ও বিগ্রহ পাওয়া গেছে। এ-সবের মধ্যে রয়েছে মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের বিগ্রহ ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বুদ্ধমূর্তি। বরিশালে প্রাপ্ত মূর্তিগুলোর মধ্যে গৌরনদীর লক্ষ্মণকাঠির বিষ্ণুমূর্তিটি অন্যতম। এগারো শতকের একটি গরুড় মূর্তি গৌরনদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এই মূর্তিটি এখন জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। বাকেরগঞ্জের বারো আউলিয়ার দরগায় সেন আমলের একটি চার ফুট উঁচু স্তম্ভ রক্ষিত আছে।
তৎকালীন সময়ের প্রভাবশালী জমিদার আগা বাকের খানের নামানুসারে এ জেলার নামকরণ হয়। ১৮০১ সালের ১লা মে স্যার জন শ্যোর এ জেলার সদর দপ্তর বর্তমানে বরিশাল শহরে স্থানান্তরিত করেন। পরবর্তীতে বরিশাল নামেই এ জেলা পরিচিতি পায়। ১৮১৭ সালে এই জেলা একটি কালেক্টরেটে পরিণত হয়।
পাকিস্তান আমলেই পটুয়াখালী মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৪ সালে বাকি চারটি মহকুমা জেলায় রূপান্তরিত হয় এবং বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ভোলা ও ঝালকাঠী এই ছয়টি জেলা নিয়ে ১৯৯৩ সালের ১লা জানুয়ারি বরিশাল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়।
সাক্ষরতার হারের এ চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জনশুমারি ও গৃহগণনা, ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে। জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাক্ষরতার হারে সবচেয়ে এগিয়ে ঢাকা বিভাগ, হার প্রায় ৭৯। এর পরে রয়েছে বরিশাল, ৭৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
বরিশাল জেলা আমড়া এর জন্য বিখ্যাত। তাছাড়া বরিশালকে বাংলার ভেনিস বলা হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৪ সালে বাকি চারটি মহকুমা জেলায় রূপান্তরিত হয় এবং বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ভোলা ও ঝালকাঠী এই ছয়টি জেলা নিয়ে ১৯৯৩ সালের ১লা জানুয়ারি বরিশাল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়।