সম্রাট আকবরের আমলে মোগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করদ মিত্র রাজ্য হিসেবে চন্দ্রদ্বীপ রাজা কন্দর্পনারায়ণ শাসন করতেন। চন্দ্রদ্বীপের পশ্চিমে বৃহৎ এক অঞ্চল এমনিতে পড়ে ছিল। দিল্লির সম্রাটপুত্র শাহজাদা সেলিম বিদ্রোহ করে এ অঞ্চলে পালিয়ে আসেন সঙ্গীসাথী নিয়ে। অনাবাদি এ অঞ্চলের নাম তিনি রাখেন সেলিমাবাদ। এ অঞ্চলের অধিকাংশ অংশ এর পূর্বে সুগন্ধা নদীর মধ্যে ছিল, ধীরে ধীরে তা জেগে ওঠে। সুগন্ধা নদীর বুকে জেগে ওঠা এ জনপদকে ‘সোন্ধার কূল’ নামে অভিহিত করা হয়। সোন্ধারকূলের সেই নদীই বানারীপাড়ার বুক চিরে প্রবাহিত হওয়া সন্ধ্যা নদী। ১৭০০ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে জানকী বল্লভ রায় চৌধুরী মুর্শিদাবাদের নবাবদের থেকে জমিদারী লাভ করেন। এরপর তিনি বানারীপাড়া এসে বসতি স্থাপন করেন।[৩] ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি এবং জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর এ জমিদারগণ ভারতে চলে যান।
বানারীপাড়া উপজেলা আয়তনের দিক দিয়ে বরিশালের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। এই উপজেলার নামকরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মত রয়েছে।
এখানে এক সময় বনিক সম্প্রদাইয়ের বানিয়াতী ব্যবসা ছিল। তারা এখানে বসবাস করতেন। বানীয়া শব্দ থেকে বানারীপাড়া শব্দটির প্রচলন হতে পারে। এছাড়া "বান" এবং "অরি" শব্দের সমন্বয়ে বানারীপাড়া নামকরণ হয়েছে বলে তথ্য প্রমাণ রয়েছে। ব্রিটিশ শাসনামলে প্রশাসন বানারীপাড়া থানা গঠিত হয় ১৯১৩ সালে এবং স্বাধীনতার পর ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় এই উপজেলার গাভায় ব্যাপক গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নির্যাতন পরিচালিত হয়। এ উপজেলার গাভা গ্রামে পাকবাহিনী প্রায় ২১২ জনকে হত্যা করে। বিশেষ করে দক্ষিণ গাভা নরের কাঠী বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয় শতাধিক ব্যক্তিকে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে সর্বদাই বানারীপাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৫৮৫ সালের ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি সাধন হয়। ১৭৮৭ সালের বন্যা এবং ১৮২২ ও ১৮৬৯ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে অনেক জীবনহানি ঘটে এবং মৎস্য, গবাদিপশু ও ফসলের ক্ষতি হয়। পরবর্তীতে ১৯১৯ সালের বন্যা এবং ১৯৬০ ও ১৯৬৫ সালের ঘূর্ণিঝড়েও ছিল ভয়াবহ। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় ও প্লাবনে (ঘণ্টায় ১২০-১৪০ মাইল) উপজেলার অনেক লোক প্রাণ হারায় এবং মৎস্য, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
তৎকালীন সময়ের প্রভাবশালী জমিদার আগা বাকের খানের নামানুসারে এ জেলার নামকরণ হয়। ১৮০১ সালের ১লা মে স্যার জন শ্যোর এ জেলার সদর দপ্তর বর্তমানে বরিশাল শহরে স্থানান্তরিত করেন। পরবর্তীতে বরিশাল নামেই এ জেলা পরিচিতি পায়। ১৮১৭ সালে এই জেলা একটি কালেক্টরেটে পরিণত হয়।
পাকিস্তান আমলেই পটুয়াখালী মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৪ সালে বাকি চারটি মহকুমা জেলায় রূপান্তরিত হয় এবং বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ভোলা ও ঝালকাঠী এই ছয়টি জেলা নিয়ে ১৯৯৩ সালের ১লা জানুয়ারি বরিশাল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়।
সাক্ষরতার হারের এ চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জনশুমারি ও গৃহগণনা, ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে। জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাক্ষরতার হারে সবচেয়ে এগিয়ে ঢাকা বিভাগ, হার প্রায় ৭৯। এর পরে রয়েছে বরিশাল, ৭৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
বরিশাল জেলা আমড়া এর জন্য বিখ্যাত। তাছাড়া বরিশালকে বাংলার ভেনিস বলা হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৪ সালে বাকি চারটি মহকুমা জেলায় রূপান্তরিত হয় এবং বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ভোলা ও ঝালকাঠী এই ছয়টি জেলা নিয়ে ১৯৯৩ সালের ১লা জানুয়ারি বরিশাল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়।