বিশ্বনাথ থানা প্রতিষ্ঠার পূর্বে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ১৮৮৫ সালে লোকাল সেলফ গর্ভমেন্ট আইনে ইউনিয়ন বোর্ড এবং ১৯১৯ সালে ইউনিয়ন বোর্ড বাতিল হলে পুনরায় ‘‘ বেঙ্গল ভিলেজ সেলফ গর্ভমেন্ট ’’ আইনে ইউনিয়ন বোর্ড হিসেবে এখানকার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে। এক্ষেত্রে এক পর্যায়ে ১৯২২ সালের ১লা জানুয়ারি তৎকালীন সরকারের ১৭৫ নং জি. জে. গেজেট নোটিফিকেশনে বিশ্বনাথে ‘‘থানা’’ প্রতিষ্ঠা হয়। থানা শুধু আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী অর্থাৎ পুলিশ সম্পর্কিত কার্যক্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এর আগে প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখানে ১৯০৮ সালে ব্রিটিশ সরকারের রেজিষ্ট্রেশন আইনের আওতায় শুধুমাত্র রেজিষ্ট্রি অফিস স্থাপিত হয়।
১৯২৮ সালের মে মাসে বিশ্বনাথে প্রধান কার্যালয় স্থাপিত হওয়ার পর থেকে পুলিশি কার্যক্রম ছাড়াও সামগ্রিক প্রশাসনিক কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়; প্রায় ৪০ বছর এ ব্যবস্থা কার্যকরী ছিল। পাকিস্তান সৃষ্টির ১২ বছর পর; ১৯৫৯ সালে তৎকালীন সরকারের একটি আদেশের বলে স্থানীয় সরকারগুলো এসময় পুনরায় পুর্নগঠিত হয় এবং স্থানীয় সংস্থার নাম ইউনিয়ন বোর্ডের স্থলে ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হয়। এ ব্যবস্থার প্রায় ১২ বছর দেশ চলার পর ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয় এবং ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির এক আদেশের বলে স্থানীয় এ সংস্থাটির নামকরণ হয় ইউনিয়ন পঞ্চায়েত । এরপর ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির অপর এক আদেশের বলে এটাকে ইউনিয়ন পরিষদ নামকরণ করা হয়, যা ১৯৭৬ সালে লোকাল গর্ভমেন্ট(ইউনিয়ন পরিষদ) অর্ডিন্যান্স হিসেবে কার্যকর হয়। এ সময় একবার ইউনিয়ন পরিষদের নিচে ‘ গ্রাম সরকার ’ নামে একটি প্রশাসনিক সত্ত্বার সৃষ্টি করা হয়।
কিন্তু পরবর্তীতে তা স্থগিত করা হয়। এভাবে স্থানীয় সংস্থাগুলোকে পরিচালিত করার পর ১৯৮২ সালের ৭ই নভেম্বর হতে স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশের আওতায় স্থানীয় সংস্থার মাধ্যমে থানা পরিষদগুলো মান উন্নীত থানা করার প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং এ বছর ৭৫৯ নং গেজেট নোটিফিকেশনে বিশ্বনাথকে মানোন্নীত থানায় উন্নীত করা হয়। ১৯৮৩ সালের ২৪শে মার্চ তৎকালীন নৌবাহিনীর প্রধান রিয়াল এডমিরাল মাহবুব আলী খান এ সময় বিশ্বনাথ থানাকে মানোন্নীত থানা হিসেবে উদ্বোধন করেন । একই বছর স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশ সংশোধন করে মানোন্নীত থানা গুলোকে উপজেলা পরিষদ নামকরণ করা হয়। উপজেলা পরিষদ অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে জনগণের সরাসরি ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচনের প্রক্রিয়া চালু হয় ।
সিলেট জেলা কমলালেবু, চাপাতা, সাতকড়ার আচার এবং সাত রঙের চা এর জন্য বিখ্যাত। সিলেট জেলাটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত।
মৌলভীবাজার এর অর্থনীতির প্রধান ভীত হলো চা শিল্প ও রাবার শিল্প । এ জেলায় প্রচুর পরিমানে চা ও রাবার উৎপাদিত হয় । এ ছাড়াও এ জেলার অর্থনীতিতে এই জেলার পর্যটন শিল্পও বিশেষ ভাবে উল্ল্যেখযোগ্য, তা ছাড়াও এখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের ছোট বড় শিল্প যা মৌলভীবাজার জেলার অর্থনীতিকে করছে সমৃদ্ধশালী ।
ইতিহাস গবেষক দেওয়ান নুরুল আনওয়ার জালালাবাদের কথা গ্রন্থে লিখেছেন খ্রিস্টিয় সপ্তম শতক পর্যন্ত সিলেট কামরুপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল।
সবচেয়ে প্রচলিত ধারণাটি হলো, শিলা মানে পাথর। আর পাথরের প্রাচুর্যের কারণেই এ এলাকার নাম সিলেট। এ ধারণার পালে আর একটু হাওয়া দিয়ে বলা হয়ে থাকে, সিলেট শব্দের অনুসর্গ সিল মানে শীল বা পাথর আর উপসর্গ হেট মানে হাট বা বাজার। প্রাচীনকাল থেকে এ জেলায় পাথর ও হাটের আধিক্য থাকায় শব্দ দু'টি মিলে সিলেট নামের উৎপত্তি।
সিলেট জেলার ভৌগোলিক অবস্থান ২৪° ৪০’ থেকে ২৫° ১১’’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১° ৩’’ থেকে ৯২° ৩’’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সিলেট জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয় ও খাশিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড়, পূ্র্বে ভারতের আসাম, দক্ষিণে মৌলভীবাজার জেলা ও পশ্চিমে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা অবস্থিত। এই জেলার আয়তন ৩,৪৯০.৪০ বর্গ কিমি। বাৎসরিক সর্বচ্চো তাপমাত্রা ৩৩.২° সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৬° সেলসিয়াস। বাৎসরিক বৃষ্টিপাত ৩৩৩৪ মিলিমিটার। প্রধান নদী সুরমা ও কুশিয়ারা। হাওড় সংখ্যা ৮২ টি। সংরক্ষিত বনাঞ্চল ২৩৬.৪২ বর্গ কিলোমিটার। ভারতের খাশিয়া-জয়ান্তা পাহারের কিছু অংশ এই জেলায় পরেছে। এছাড়াও কিছু ছোট পাহাড় ও টিলা রয়েছে এখানে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জৈন্তাপুর (৫৪ মাইল), সারি টিলা (৯২ মাইল), লালখান টিলা (১৩৫ মাইল), ঢাকা দক্ষিণ টিলাসমূহ (৭৭.৭ মাইল)।