১৭৬৫ সালে মোঘল অধিকৃত সিলেট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৭৮২ সালের ৩ জানুয়ারি সিলেট ঢাকা প্রশাসন স্বতন্ত্র হয়ে পড়ায় সিলেটকে ১০টি রাজস্ব জেলায় বিভক্তির সুপারিশ করা হয়। বিয়ানীবাজার লাতু রাজস্ব জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৭৪ সালে ১২ সেপ্টেম্বর সিলেটকে আসামের সাথে সংযুক্ত করা হয়। আসাম ভুক্তির পর ১৮৭৮ সালে করিমগঞ্জ মহকুমা সৃষ্টি করা হলে বিয়ানীবাজার করিমগজ্ঞ মহকুমার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৭৯৩সালের ২২শে মে লর্ড কর্নওয়ালিসের সময় থানা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হলে জলঢুপ(বর্তমানে থানা বাজার নামে পরিচিত) থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হলে বিভক্ত ভারতের কোন অংশে সিলেট যোগদান করবে তা নির্ধারণের জন্য গণভোট হয়। ৬ ও ৭ জুলাই দু’দিনের গণভোটে সিলেটবাসী পাকিস্তানের পক্ষে রায় দেয়।
কিন্ত গণরায়কে উপেক্ষা করে রেড ক্লিফের রোয়েদাদ করিমগঞ্জ মহকুমার মুসলিম প্রধান তিনটি থানা (পাথার কান্দি,রাতাবাড়ি,বদরপুর ও করিমগঞ্জের অধিকাংশ অঞ্চল) পাকিস্তানের হাত ছাড়া হয়ে ভারতে থেকে যায়। এদিকে পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার ও মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানাকে নিয়ে ’জলঢুপ’ নামে একটি থানা গঠিত হয়। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বে ১৯৪০ সালের ২৮ মে সরকারি নোটিফিকেশনএর মাধ্যমে জলঢুপ’ থানাকে ভেঙে বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা নামে দু’টি থানা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সেখান থেকেই এই ’ বিয়ানীবাজার’ স্বতন্ত্র থানা হিসাবে পরিচিত হয়।পরে ১৯৮৩ সালের ১ আগস্ট তৎকালীন স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী জেনারেল শামসুল হক আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ানীবাজারকে উপজেলায় উন্নীত করেন।
সিলেট জেলা কমলালেবু, চাপাতা, সাতকড়ার আচার এবং সাত রঙের চা এর জন্য বিখ্যাত। সিলেট জেলাটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত।
মৌলভীবাজার এর অর্থনীতির প্রধান ভীত হলো চা শিল্প ও রাবার শিল্প । এ জেলায় প্রচুর পরিমানে চা ও রাবার উৎপাদিত হয় । এ ছাড়াও এ জেলার অর্থনীতিতে এই জেলার পর্যটন শিল্পও বিশেষ ভাবে উল্ল্যেখযোগ্য, তা ছাড়াও এখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের ছোট বড় শিল্প যা মৌলভীবাজার জেলার অর্থনীতিকে করছে সমৃদ্ধশালী ।
ইতিহাস গবেষক দেওয়ান নুরুল আনওয়ার জালালাবাদের কথা গ্রন্থে লিখেছেন খ্রিস্টিয় সপ্তম শতক পর্যন্ত সিলেট কামরুপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল।
সবচেয়ে প্রচলিত ধারণাটি হলো, শিলা মানে পাথর। আর পাথরের প্রাচুর্যের কারণেই এ এলাকার নাম সিলেট। এ ধারণার পালে আর একটু হাওয়া দিয়ে বলা হয়ে থাকে, সিলেট শব্দের অনুসর্গ সিল মানে শীল বা পাথর আর উপসর্গ হেট মানে হাট বা বাজার। প্রাচীনকাল থেকে এ জেলায় পাথর ও হাটের আধিক্য থাকায় শব্দ দু'টি মিলে সিলেট নামের উৎপত্তি।
সিলেট জেলার ভৌগোলিক অবস্থান ২৪° ৪০’ থেকে ২৫° ১১’’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১° ৩’’ থেকে ৯২° ৩’’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সিলেট জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয় ও খাশিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড়, পূ্র্বে ভারতের আসাম, দক্ষিণে মৌলভীবাজার জেলা ও পশ্চিমে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা অবস্থিত। এই জেলার আয়তন ৩,৪৯০.৪০ বর্গ কিমি। বাৎসরিক সর্বচ্চো তাপমাত্রা ৩৩.২° সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৬° সেলসিয়াস। বাৎসরিক বৃষ্টিপাত ৩৩৩৪ মিলিমিটার। প্রধান নদী সুরমা ও কুশিয়ারা। হাওড় সংখ্যা ৮২ টি। সংরক্ষিত বনাঞ্চল ২৩৬.৪২ বর্গ কিলোমিটার। ভারতের খাশিয়া-জয়ান্তা পাহারের কিছু অংশ এই জেলায় পরেছে। এছাড়াও কিছু ছোট পাহাড় ও টিলা রয়েছে এখানে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জৈন্তাপুর (৫৪ মাইল), সারি টিলা (৯২ মাইল), লালখান টিলা (১৩৫ মাইল), ঢাকা দক্ষিণ টিলাসমূহ (৭৭.৭ মাইল)।