ভেড়ামারা উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে পদ্মানদী, যাহা দেশের বড় নদীগুলোর মধ্যে একটি । এই পদ্মা নদীতে বহু প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় ,য়ার উপর অনেক জেলে জীবিকা নির্বাহ করে
এই উপজেলার মধ্যে দিয়ে হিসনা নদী ও বয়ে চলেছে।
নদীটির নাম হিসনা। এক সময় ওর প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ছিল পদ্মার সাথে। আসলে পদ্মা ওর মা। নদী যখন তার সন্তানের প্রন্তানকে প্রসারিত করে, তার চলার পথের দুধারে তখন ধারণ করে প্রমত্তা রূপ। পাড়ির কোন একটা অংশের বিপুল ভাঙন স্ফীত করে তার শরীর। তারপর সেই স্ফীত অংশটাকে চিরে দিয়ে প্রসারিত করে তার শাখা- প্রশাখা। হিসনাও নাকি কোন একসময় ছিল পদ্মার প্রত্যক্ষ শাখা নদী। যদিও এখন তাকে দেখে বোঝার আর কোন উপায় নেই সেও কখনও নদী ছিল। তার বুকেও উড়েছে হাজারও পাল।
হিসনা নদীকে আদতে আজ আর নদী বলে মনে হয়না। তার গতি পথের শুরুটাই সংযোগ হারিয়ে ফেলেছে পদ্মার সাথে। সেও বোধহয় দু-একশ বছর আগের কথা।
হিসনা পদ্মার থেকে কিছুটা পশ্চিমে মুখি ভাবে যাত্রা শুরু করে প্রবাহিত হয়েছিল দক্ষিন দিকে। সেই প্রবাহমানতা এখন নেই তবে নদীর রেখা চিহ্ন মুছে যায়নি পুরোপুরি। উৎসমূখ যদিও সম্পর্ন বিলুপ্ত তবে ভেড়ামারা হতে বাহাদুরপুর অভিমুখে রাস্তায় ব্যাঁকাপুল (বাঁকাপুল) বলে যে জায়গাটা রয়েছে সেখানটা দেখলে মনে হয় শ খানেক বছর আগে যখন হিসনার উৎসমুখের কিছু দুরেই তার বুকের ওপর দিয়ে চলিয়া দেওয়া রেল লাইন। আর সেখানেই হিসনা হারিয়েছিল তার মায়ের বন্ধন। সমান্তরাল সেই রেল লাইন ছুরির মতে কেটে দিয়েছিল হিসনার সাথে পদ্মার নাড়ীর সূত্রটি।
ব্যাঁকাপুলের পূর্বদিকে হিসনার কোন চিহ্ন এখন আর চোখে পড়ে না। তবে পশ্চিমে তার অস্তিত্ব এখনও স্পষ্ট বিদ্যমান। যদিও হিসনা এক মরা নদী, যদিও বুকের ওপর দিয়ে জায়গার তৈরী হয়েছে চলাচলের পথ। তবুও ভেড়ামারা বাসির ঘরের নদী হিসনা। আর পদ্মা ? সেতো ভেড়ামারার পরিচয়।
পদ্মা বাংলাদেশ ঢোকার পর রাজশাহীর পাশ দিয়ে নিম্নমুখী ধারায় রয়েছে। রাজশাহী অতিক্রম করার কিছু পরেই পদ্মা নির্ধারণ করেছে পাবনা আর কুষ্টিয়া জেলার সীমানা। রাজশাহী জেলার দক্ষিন প্রান্ত ঘেঁষে পদ্মার প্রবাহিত হয়ে দক্ষিন-পূর্ব মুখী। এরপর সারদা-চারঘাট এলকায় এসে হয়েছে দক্ষিন কিছুটা চলার পর ডানে জলঙ্গী(ভারত) আর বামে বাঘা, বিলমারিয়া আর লালপুর ঘেঁষে পদ্মা আবার সর্বমুখী হয়ে কিছু দূর পরে ঈশ্বরদীর উত্তর-পশ্চিম কোনায় দিয়েছে সজোরে ধাক্কা। এই ধাক্কার পর আবার প্রবাহিত হয়েছে দক্ষিন দিকে। এই দক্ষিনমুখী প্রবাহটির একপাশে ঈশ্বরদী আরেকপাশে ভেড়ামারা।
গতিপথে বড় একটা বাঁকের পরে এই দক্ষিণমুখী স্রোত কিছুটা সরু বলেই প্রায় সোয়াশ বছর আগে এখানে ব্রিটিশরা তৈরি করেছিল হার্ডিজ্ঞ ব্রীজ। যা যুক্ত করেছিল ভেরামারা আর ঈশ্বরদীকে। বৃহৎ অর্থে রাজশাহী আর খুলনা কে। অর্থাৎ উত্তর আর দক্ষিন বঙ্গকে।
ভেড়ামারা একটি উপশর যার গড়ে ওঠার নিমিত্ত পদ্মা নদীর ওপর গড়ে ওঠা হার্ডিজ্ঞ ব্রীজ আর তার পূর্ববর্তী রেল স্টেশন। ভেড়ামারার নাম কেন ভেড়ামারা হল ? মৃত্যু শব্দটি কোন আনন্দের দ্যোতনা তৈরি করেনা। শোনা যায় ব্রিটিশ রেল কোম্পানীর লাইন বসানোর পর একবার এক ভেড়ার পাল চরে বেড়াচ্ছিলে লাইনের ওপর দিয়ে। একটি ট্রেন নিহত করেছিল সে পালের বেশ কিছু ভেড়া। ক্ষতি পূরণের স্টেশন টার নামই নাকি হয়ে যায় ভেরামারা যাওয়া স্টেশন। আসলে এই নামকরণের কোন শক্তপোক্ত ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই।
তবে রেল ট্র্যাকের বয়স বিবেচনায় ভেড়ামারার নাম করণে ভেড়ার অপঘাতে মৃত্যুর গল্পটি সত্য না হাওয়া সম্ভবনাই বেশী। এমনও শোনা যায় এই এলাকায় জমিদারী নিয়ে কোন এক জমিদারের দুই মেয়ে জবাইয়ের শত্রুতার জের ধরে এক জন আরেক জনকে খুন করে। ভায়রা মেরে জমীদারী দখল থেকেই নাকি এসেছে এই নাম। তবে সময় ও নামের সূত্র খুঁজে পাওয়া না যাওয়ায় এখানে গ্রহনযোগ্যতা হারায় এই অনুমান। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মনে করা হয় ভাইরাম আগরয়াল নামে একজন হিন্দু মরোয়ারি নাকি প্রথম হিসনার তীরে এসে ব্যবসার পসার জমিয়ে এই অঞ্চলে ব্যবসার ভিত্তিক সভ্যতার গোড়াপত্তন করেন। তার নামেই দিনে দিনে পরিচিতি লাভ করে সে সভ্যতা।
ভেড়া মারুক আর মরুক, কুষ্টিয়া জেলার ছোট্র এই মফঃস্বল শহরটির নাম ভেড়ামারা। তবে এটা যুক্তিসঙ্গত অনুমান যে এখন থেকে দেড় - দুশ বছর আগেও ভেড়ামারা ছিল একেবারেই গ্রাম। হয়তো ব্রিটিশ রেল কোম্পানীর, “ভেড়ামারা স্টেশন” টিই এ শহরটিকে যুক্ত করেছিল নাগরিক প্রক্রিয়ার সাথে। সেই ধারাবাহিকতায় ভেড়ামারা এখন একটি ছিমছাম উপশহর, একটা উপজেলা। আর দশটা মফঃস্বলের মতই যায় বুক জুড়ে রয়েছে পর গ্রামের পর গ্রাম আর বিস্তৃত সবুজ ক্ষেত।
কুষ্টিয়া, যশোর, দৌলতপুর সাতক্ষীরা সড়ক পর্যন্ত খুলনা জেলা ও ফরিদপুরের কিছু অংশ ছিল 'সেক্টর নং ৮' এর অন্তর্ভুক্ত। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর আবু ওসমান চৌধুরী ও আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেজর এম এ মঞ্জুর। এই সেক্টরে ছিল ৭টি সাব-সেক্টর।
কুষ্টিয়া জেলা তিলের খাজা, কুলফি আইসক্রিম এর জন্য বিখ্যাত। এ জেলাটিকে আমাদের দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়। এ জেলার মানুষ শুদ্ধ ভাষায় কথা বলে।
পাটকে স্থানীয় ভাষায় 'কোষ্টা' বা 'কুষ্টি' বলতো, যার থেকে কুষ্টিয়া নামটি এসেছে। কারো মতে ফারসি শব্দ 'কুশতহ' থেকে কুষ্টিয়ার নামকরণ হয়েছে যার অর্থ ছাই দ্বীপ। আবার সম্রাট শাহজাহানের সময় কুষ্টি বন্দরকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া শহরের উৎপত্তি বলেও একটি মত রয়েছে।
কুষ্টিয়া (মুজিবনগর) বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী। ১৮৬৯ সালে কুষ্টিয়ায় একটি পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। হ্যামিলটন'স গেজেট প্রথম কুষ্টিয়া শহরের উল্লেখ পাওয়া যায়। লালনের মাজার ছাড়াও এ জেলার শিলাইদহে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি ও মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা।