মনোহরদী থানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৪ ইং সালে। ১৯০৪ সালে মনোহরদীতে পুলিশী থানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে এ জনপদটি ছিল রায়পুরা থানার অন্তগর্ত। রায়পুরা থানার উত্তর পশ্চিম সীমান্তে ব্রাহ্মপুত্র ও আড়িয়ালখাঁ নদী ও এদের শাখা প্রশাখা বেষ্টিত দ্বীপ সাদৃশ্য যোগাযোগ বিছিন্ন একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল। ভৌগলিক অবস্থানগত দিক এবং এ জনপদের বিভিন্ন স্থানের নাম করনের অজানা তথ্যগত বিচার বিশ্লেষন করলে এ জনপদটির সামগ্রিক ভৌগলিক অবস্থানকে দ্বীপাঞ্চল বা দ্বীপাবলির সমাহার বলে গ্রহণ করতে কোন বাধা থাকে না। কারণ ভারত বর্ষের জনবসতির প্রারম্ভিক ইতিহাস ও প্রাকঐতিহাসিক কালের বিলুপ্তির শেষপ্রান্তের ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায় যে, যাযাবর অনার্য্য ও দ্রাবিড়গন আর্যগণ কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে দাক্ষিনাত্য ও সমতট প্রদেশের নদীর তীরে বা চরাঞ্চলে বসতি যাপন করেছিল। যেহেতু অনার্য্যগণ যাযাবরের মত জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিল এবং পলিমাটি দ্বারা গঠিত নতীতট বা দ্বীপ ছিল তাদের বসত যাপনের লক্ষ্যস্থল । এতদ প্রেক্ষিতে মনোহরদী থানার ভৌগলিক অবস্থা দ্বীপ সাদৃশ্য থাকায় সম্ভবত যাযাবরগণ এখানে বসত বাড়ী গড়ে তুলেছিল। মনোহরদী থানার পূর্বাঞ্চলের মাঝ দিয়ে দক্ষিন দিক প্রবাহমান রয়েছে আড়িয়াল খাঁ নদী যা পূর্ব প্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত। ব্রাহ্মপুত্র নামে একটি নদ পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে বয়ে চলেছে একটি শাখা হিসাবে, মাঝ মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে উল্লেখিত অনেকগুলো শাখা প্রশাখা, খাল, বিল। লাখপুর পর্যন্ত সন্নিনিকটবর্তী গ্রাম বা জনপদ গুলো নাম লক্ষনীয় ভাবে মনোহরদী থানার ভৌগলিক অবস্থানের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। মনোহরদী থানার অধিক সংখ্যক গ্রাম বা জনপদের নাম পুর বা দ্বীপ বা চর নামে খ্যাত।
পুর হচ্ছে পুরীর কথা, উদাহরণ স্বরূপ উত্তর পূর্ব কোন থেকে উল্লেখ করা যায়- কৃষ্ণপুর, গোলায়বাড়ীয়ারচর, খিদিরপুর, আহাম্মদ পুর, রামপুর, নরেন্দ্র পুর, শরীফপুর ,সাগরদী, নোয়াকান্দী, তারাকান্দী , অর্জুনচর , আসাদনগর , মনোহরদী, দাইরাদী , রোদ্রুদী , চন্দনদিয়া, চন্দনবাড়ী , হাররদিয়া , নারান্দী , শুকুন্দী , দীঘাকান্দী , হাতিরদিয়া , বিলাদ্বী (বিলাগী) , কোচেরচর , দৌলতপুর , কৃর্ত্তীবাসদী, হরিনারায়নপুর ইত্যাদি। মধ্যভাগ জুড়ে নামে বিভিন্নতা ও বিক্ষিপ্ততা নমনীয় এখানে গাঁও বা কামদার বা দ্বীপের সমাহার ঘটেছে। যেমন তারাকান্দী, মাজদী (মাজদীয়া ) বড়চাপা, মির্জাপুর , কাহেতেরগাঁও, বারুদ্দী (বারুদ্দীয়া) মাধুপুর, সাভারদিয়া, বগাদী, পাচঁকান্দী, পূর্বাঞ্চল জুড়ে জামালপুর, পোড়াদিয়া।
এই জেলা বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা। নরসিংদী তাঁত শিল্পের জন্য বিখ্যাত। নরসিংদী জেলার কাপড় কিনে নিয়ে যায় পুরো বাংলাদেশ এর মানুষ এবং অন্যান্য দেশে রপ্তানি করে থাকে।
১৯৮৪ সালে নরসিংদী সদর, পলাশ, শিবপুর, মনোহরদী, বেলাব এবং রায়পুরা এ ০৬ টি উপজেলা এবং নরসিংদী পৌরসভা নিয়ে নরসিংদীকে জেলা ঘোষণা করে সরকার।
নরসিংদী জেলা বাংলাদেশের মধ্যভাগের ঢাকা বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক অঞ্চল।
নরসিংদীকে ৩ নম্বর সেক্টরের অধীনে নেয়া হলে কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো. নূরুজ্জামান। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাসে নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক খণ্ড যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
১৯৭৭ পরবর্তী নারায়ণগঞ্জ মহকুমা থেকে নরসিংদী অঞ্চলকে একক মহকুমায় উন্নিতকরণ করার সুবাদে নরসিংদী পৌর পরিষদকে (ক) শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত করে স্থানীয় সরকারের স্বায়ত্তশাসিত ৩৩ টি মহল্লার সমন্বয়ে ৯ ওয়ার্ড বিশিষ্ট ১০.৩২ বর্গ কিঃ মিঃ আয়তন জুরে নরসিংদী পৌরসভায় রুপান্তর হয়।