The Ballpen
মহাদেবপুর উপজেলার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ও ইতিহাস - theballpen

মহাদেবপুর উপজেলার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ও ইতিহাস

13th Dec 2022 | নওগাঁ জেলা |

বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্তর্গত নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলা সুপ্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যমন্ডিত জনপদ। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয়-চতুর্থ শতকে এই প্রাচীন জনপদের কেন্দ্র ভূমিতে গড়ে ওঠে পুণ্ড্রনগর নামক এক নগর সভ্যতা কেন্দ্র। এ নগর সভ্যতার অভ্যুদয় প্রমাণ করে যে, এর ছিল বিশাল কৃষিভিত্তিক পশ্চাদভূমি।

এখানে ছিল একটি সুবৃহৎ সচ্ছল কৃষিজীবী সমাজ। ক্রমশ স্থায়ী গ্রামীণ জীবন ধারার বিকাশ ঘটে, গোড়াপত্তন হয় সমৃদ্ধ কৃষি সমাজের। নানা জাতিগোষ্ঠীরর মানুষ যুগ যুগ ধরে বসবাস করতে গিয়ে গড়ে তোলে এক নতুন ধরনের সমাজ ব্যবস্থা, বিকশিত হতে থাকে এক স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক রুপকাঠামো। নানা জাতিগোষ্ঠীরর মানুষ মিশে তৈরী করেছে একটি মিশ্র জনগোষ্ঠী।

ব্রিটিশ শাসনকালে ১৮৮২ সালে নওগাঁ মহকুমা সৃষ্টি হওয়ার পর ১৮৯৮ সালে মহাদেবপুরকে নওগাঁ মহকুমার অর্ন্তভূক্ত করা হয়। এ উপজেলার নামকরণ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়না তবে অনুমান করা হয় দেবতা শিব মহাদেবের নাম অনুসারে মহাদেবপুর নামকরণ হয়েছে। ১৯৮৪ সালে নওগাঁ মহকুমা জেলায় রূপান্তরিত হলে মহাদেবপুর উপজেলায় পরিণত হয়।

বর্তমানে এ উপজেলা ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প সাহিত্য আর জীবনযাপনে অগ্রসরমান উপজেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। মহাদেবপুর উপজেলা সদর, এনায়েতপুর, রাইগাঁ, হাতুর, চাঁন্দাশ, খাজুর, উত্তরগ্রাম, ভীমপুর, চেরাগপুর ও সফাপুর এই দশটি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত। এর উত্তরে পত্নীতলা, দক্ষিণে মান্দা, দক্ষিণ-পূর্বে নওগাঁ সদর, পূর্বে বদলগাছী, পশ্চিমে নিয়ামতপুর ও পোরশা উপজেলা অবস্থিত। জেলা সদর, পার্শ্ববর্তী উপজেলা ও এ উপজেলার দশ ইউনিয়নের সাথে উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে।

এ উপজেলায় প্রাচীন বাসাবাড়ি, আদ্যাবাড়ী মন্দির ইত্যাদি সমৃদ্ধ ইতিহাসের অংশ। এখানে বহুকাল ধরে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতির অটুট বন্ধন বিদ্যমান রয়েছে। মহাদেবপুর উপজেলা আত্রাই নদীর তীরে অবস্থিত। মৌসুমী বায়ু অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় পরিবেশগত দিক থেকে এ এলাকা ধান উৎপাদনের উপযোগী। এখানে আর্থ-সামাজিক অবস্থা মূলতঃ কৃষি নির্ভর। (সূত্রঃ বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাস)

মহাদেবপুর উপজেলা ২৪˚৪৮' থেকে ২৫˚০১' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮˚৩৮' থেকে ৮৮˚৫৩' পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। মহাদেবপুর উপজেলার দুরত্ব নওগাঁ জেলা সদর হতে ২৪ কিঃ মিঃ পশ্চিমে এবং ঢাকা হতে ৩৩৫ কিঃ মিঃ। ইতিহাস থেকে জানা যায় মহাদেবপুরের অধিবাসিরা মুলত পুন্ড্রজাতির বংশধারায় বাংলাদেশে সর্ব প্রথম নগর সভ্যতার গোড়াপত্তন করেছিল।

মহাদেবপুরে বর্তমানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই পশ্চিম বঙ্গের বীরভূম,বর্ধমান ও রাঢ় অঞ্চল হতে আগত। তা ছাড়া ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পশ্চিম বঙ্গের মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও বালুঘাট থেকে প্রচুর লোকজন এ এলাকায় আগমন করে। এ ছাড়াও মহাদেবপুর উপজেলায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আদিবাসী বসবাস করে।





Related

নওগাঁ জেলার আয়তন কত বর্গ কিলোমিটার?

নওগাঁ জেলার আয়তন ৩,৪৩৫.৬৭ বর্গকিলোমিটার।



Related

নওগাঁ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত?

নওগাঁ জেলা চাল এবং সন্দেশ এর জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও কসুম্বা মসজিদ এবং রঘুনাথ মন্দির এই দুটি স্থান এর জন্য বিখ্যাত।



Related

নওগাঁ জেলা বিখ্যাত খাবার কী?

নওগাঁ জেলার বিখ্যাত খাবার ‘প্যারা সন্দেশ’নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী ‘প্যারা’ সন্দেশের সুখ্যাতি এখন বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে বিদেশেও। শুরুতে পূজা মণ্ডপের দেব-দেবীর উপাসনার উদ্দেশে এই সন্দেশ তৈরি করা হলেও সময়ের স্রোতে এখন তা অতিথি আপ্যায়ন, আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে পাঠানো বা নিয়ে যাওয়া মর্যাদার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি কেজি সন্দেসের মূল্য ৩০০ টাকা। নওগাঁর এই ঐতিহ্যবাহী সন্দেশ এখন দেশের বাইরেও বেশ সুনাম অর্জন করছে।

কবে থেকে নওগাঁর ‘প্যারা’ সন্দেশের প্রচলন শুরু হয়েছে তা সুস্পষ্টভাবে জানা না গেলেও সংশ্লিষ্টদের ও গবেষকদের ধারণা মতে, নওগাঁয় প্রায় একশ’ বছরের অধিক কাল আগে থেকে প্যারা সন্দেশ তৈরী হয়ে আসছে। জানা গেছে, শহরের কালীতলা এলাকায় শ্রী শ্রী বুড়ী কালী মাতা মন্দিরের কাছে শত বছর আগে থেকে এই ‘প্যারা’ সন্দেশ তৈরী হয়ে আসছে। এই সন্দেশ পূজারীরা পূজা মন্ডপের দেবদেবীর উপাসনায় ভোগ দিয়ে থাকনে।

নওগাঁ শহরের কালীতলা পূজা মণ্ডপের প্রধান গেট সংলগ্ন এলাকায় ছোট ছোট কয়েকটি মিষ্টান্নের দোকান রয়েছে। এগুলোকে বলা হয় ভোগের দোকান। দেবীর আরাধনায় মিষ্টান্নর প্রয়োজনেই প্রায় শত বছর আগে এই দোকানিরাই প্রথম তৈরি করেন বিখ্যাত প্যারা সন্দেশ। কিন্তু পরবর্তীতে এই সন্দেশ শুধু দেবীর আরাধনার মধ্যেই সীমাবন্ধ থাকেনি।

সুস্বাদু আর পুষ্টিগুনের কারণে এই সন্দেশ এখন বিখ্যাত। জানা যায়, হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তগণ প্রায় সারা বছরই বিভিন্ন পূজা-অর্চনা করতে এখানে আসেন এবং পূজারীরা মন্দিরে ভোগ দিয়ে থাকেন। এই ভোগের প্রয়োজন মেটাতে শহরের কালীতলায় শত বছর আগে ছোট ছোট মিষ্টির দোকান গড়ে ওঠে। এসব দোকান থেকে প্রয়োজনীয় মিষ্টি জাতীয় দ্রব্যাদি কিনে নিয়ে পূজারীরা মন্ডপে দেবীর অর্ঘ্য হিসেবে ভোগ দিয়ে থাকেন।

জনশ্রুতি রয়েছে, ভারতের বিহারের কোনো এক নবাবের মিষ্টি তৈরির কারিগর ছিলেন মহেন্দ্রী দাস। নবাব এক যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হওয়ার পর ওই ব্যক্তি প্রাণ ভয়ে নওগাঁ শহরের কালীতলা্ এলাকায় বসতি গড়ে জীবিকার তাগিদে ‘প্যারা’ সন্দেশ তৈরি করে মন্দিরে বিক্রি শুরু করেন। পরে সেখানেই ছোট্ট একটা মিষ্টির দোকান খুলে বসেন। শত বছর আগে তখন কালীতলা এলাকায় জনবসতি ছিল না বললেই চলে। মহেন্দ্রীর মৃত্যুর পর তার ছেলে ধীরেন্দ্রনাথ দাস দোকানের দায়িত্ব নেন।

সেই সময় বিমল মহন্ত নামে মিষ্টি তৈরির এক কারিগরের হাতের স্পর্শে ‘প্যারা’ সন্দেশের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। জানা গেছে, ভারত, কুয়েত, সৌদি আরব, তুরস্ক, মালয়েশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের ক্রেতারা এখান তেকে প্যারা সন্দেশ নিয়ে যাচ্ছেন। পুষ্টিগুণ আর স্বাদ ও মানের দিক থেকে এই প্যারা সন্দেশ অতুলনীয়।’



Related

নওগাঁ জেলা

নওগাঁ জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। উপজেলার সংখ্যানুসারে নওগাঁ বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা।[২] নওগাঁ জেলা ভৌগোলিকভাবে বৃহত্তর বরেন্দ্র ভূমির অংশ। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমভাগে বাংলাদেশ-ভারত আন্তর্জাতিক সীমারেখা সংলগ্ন যে ভূখণ্ডটি ১৯৮৪ সালের ১লা মার্চের আগ পর্যন্ত নওগাঁ মহকুমা হিসেবে গণ্য হতো, তা-ই হয়েছে বর্তমান বাংলাদেশের নওগাঁ জেলা।



Related

নওগাঁ জেলার ইতিহাস

নওগাঁ শব্দর উৎপত্তি হয়েছে ‘নও’ (নতুন -ফরাসী শব্দ ) ও‘ গাঁ’ (গ্রাম ) শব্দ দু’টি হতে। এই শব্দ দু’টির অর্থ হলো নতুন গ্রাম। অসংখ্য ছোট ছোট নদীর লীলাক্ষেত্র এ অঞ্চল। আত্রাই নদী তীরবর্তী এলাকায় নদী বন্দর এলাকা ঘিরে নতুন যে গ্রাম গড়ে উঠে, কালক্রমে তা-ই নওগাঁ শহর এবং সর্বশেষ নওগাঁ জেলায় রুপান্তরিত হয়। নওগাঁ শহর ছিল রাজশাহী জেলার অন্তর্গত। কালক্রমে এ এলাকাটি গ্রাম থেকে থানা এবং থানা থেকে মহকুমায় রুপ নেয়। ১৯৮৪ এর ১ মার্চ- এ নওগাঁ মহকুমা ১১টি উপজেলা নিয়ে জেলা হিসেবে ঘোষিত হয়।

বাংলাদেশ উত্তর -পশ্চিমভাগ বাংলাদেশ - ভারত আন্তর্জাতিক সীমা রেখা সংলগ্ন যে ভূখন্ডটি ১৯৮৪ খ্রিঃ এর ১ মার্চের পূর্ব পর্যন্ত অবিভক্ত রাজশাহী জেলার অধীন নওগাঁ মহকুমা হিসেবে গণ্য হতো, তাই এখন হয়েছে নওগাঁ জেলা। নওগাঁ প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন ভূক্ত অঞ্চল ছিল। অন্য দিকে এটি আবার বরেন্দ্র ভূমিরও একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ । নওগাঁর অধিবাসীরা ছিল প্রাচীন পুণ্ড্র জাতির বংশধর। নৃতাত্ত্বিকদের মতে, পুন্ড্ররা বিশ্বামিত্রের বংশধর এবং বৈদিক যুগের মানুষ। মহাভারত্র পুণ্ড্রদের অন্ধ ঋষি দীর্ঘতমার ঔরষজাত বলি রাজার বংশধর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার কারো মতে, বাংলার আদিম পাদদর বংশধর রুপে পুন্ড্রদের বলা হয়েছে। এদিক দিয়ে বিচার করলে নওগাঁ যে প্রাচীন জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল ছিল তা সহজেই বলা যায়।

নওগাঁ জেলায় আদিকাল হতেই বৈচিত্রে ভরপুর। ছোট ছোট নদী বহুল এ জেলা প্রাচীনকাল হতেই কৃষি কাজের জন্য প্রসিদ্ধ। কৃষি কাজের জন্য অত্যন্ত উপযোগী এলাকার বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ে অসংখ্য জমিদার গোষ্ঠী গড়ে উঠে। এ জমিদার গোষ্ঠীর আশ্রয়েই কৃষি কাজ সহযোগী হিসেবে খ্যাত সাঁওতাল গোষ্ঠীর আগমন ঘটতে শুরু করে এ অঞ্চলে। সাঁওতাল গোষ্ঠীর মতে এ জেলায় বসবাসরত অন্যান্য আদিবাসীদের মধ্যে মাল পাহাড়িয়া, কুর্মি, মহালী ও মুন্ডা বিশেষভাবে খ্যাত। নানা জাতি ও নানা ধর্মের মানুষের সমন্বয়ে গঠিত নওগাঁ জেলা মানব বৈচিত্র্যে ভরপুর। অসংখ্য পুরাতন মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও জমিদার বাড়ি প্রমাণ করে নওগাঁ জেলার সভ্যতার ইতিহাস অনেক পুরাতন।