The Ballpen
মুক্তিযুদ্ধে বাবুগঞ্জ - theballpen

মুক্তিযুদ্ধে বাবুগঞ্জ

26th Dec 2022 | বরিশাল জেলা |

নাম: মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর
জন্ম : ৮ই মার্চ,১৯৪৯ ইং।
জন্মস্থান : বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানার রহিমগঞ্জ গ্রামে৷
পিতা : আব্দুল মোতালেব হাওলাদার৷
মা : মোসাম্মাৎ সাফিয়া বেগম৷
কর্মস্থল : সেনাবাহিনী৷
যোগদান : ১৯৬৭ সাল৷
পদবী : ক্যাপ্টেন৷
মুক্তিযুদ্ধে অংশরত সেক্টর : ৭নং সেক্টর৷
মৃত্যু : ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সাল, বারঘরিয়া, রাজশাহী ৷
সমাধিস্থল : চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণ ৷

বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের জন্ম ৮ই মার্চ ১৯৪৯ সালে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানার আগরপুর ইউনিয়নের রহিমগঞ্জ গ্রামে৷ তাঁর পিতা আবদুল মোতালেব হাওলাদার৷ তাঁর দাদা আবদুর রহিম হাওলাদার একজন প্রতাপশালী ও সম্মানী ব্যক্তি ছিলেন৷ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ছাত্র হিসেবে ছিলেন বেশ মেধাবী ৷ তিনি খুবই কম কথা বলতেন এবং বেশ পরোপকারী ছিলেন৷ খেলাধুলার পাশাপাশি তিনি রাজনীতি সচেতন ছিলেন৷ কলেজ জীবনেই তিনি পাঠ করেন লেনিন, মাও-সেতুং, চে গুয়েভারা মতো ব্যক্তির সংগ্রামী জীবনের গল্প ও রাজনৈতিক দর্শন৷ জাহাঙ্গীর আইএসসি পাস করেন ১৯৬৬ সালে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই তিনি যোগ দেন পাকিস্তান সামরিক একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে৷ ১৯৬৮ সালের জুন মাসে তিনি লাভ করেন ইঞ্জিনিয়ার্স কোরে কমিশন্ড প্রাপ্ত হন৷ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার সময়ে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের কাবাকোরাম এলাকায় ১৭৩ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নে বহাল ছিলেন৷ সেই সময় পাকিস্তানি হানাদাররা বাঙালিদের পাখির মতো মারছে৷ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর পশ্চিম পাকিস্তানে বসে সেগুলো শুনছিলেন আর কীভাবে দেশে আসা যায় ভাবছিলেন ৷ তাঁর নিদ্রা পালিয়েছিল চোখ থেকে৷ পশ্চিম পাকিস্তানে আটকেপড়া তাঁর অন্যান্য বন্ধুও খুঁজছিলেন পালানোর উপায়৷ অন্যান্য বাঙালি তরুণ অফিসারও পালানোর পথ খুঁজছেন৷ ৩ জুলাই ১৯৭১৷ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন মমতাজ, ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার রশিদ খান, ক্যাপ্টেন আব্দুল আজিজ পাশা এবং ক্যাপ্টেন আনাম শিয়ালকোটের কাছে সীমান্ত পেরিয়ে পালাতে সক্ষম হন৷ জাহাঙ্গীর এর আগে এদের কাউকেই চিনতেন না৷ তাঁর বন্ধু ক্যাপ্টেন হামিদের সহায়তায় এদের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্র হয়৷ অনেক কষ্টে বিভিন্ন চরাই উৎরাই পার হয়ে বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে শিয়ালকোট থেকে তাঁরা ভারতের উদ্দেশ্য পাকিস্তানীদের চোখ ফাকি দিয়ে মাত্র সঙ্গে একটি পিস্তলকে সঙ্গী করে শেষ পর্যন্ত পা রাখতে পারলেন ভারতের মাটিতে৷ প্রথমেই গেলেন নিকটবর্তী বিএসএফের ব্যাটালিয়ান হেড কোয়ার্টারে৷ সেখান থেকে দিলি্ল, অতঃপর কলকাতা৷ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে চারজন বাঙালি সামরিক অফিসার পালিয়ে এসেছেন শুনে বাঙালি, মুক্তিবাহিনী ও বাঙালি শরণার্থীদের প্রাণে বিপুল উত্সাহ জাগল৷ মুক্তিযুদ্ধের চিফ কমান্ডার কর্নেল ওসমানী যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কলকাতায় এলেন এই পাঁচ বীরকে অভ্যর্থনা দেয়ার জন্য৷
কলকাতা থেকেই পাঁচ ক্যাপ্টেনের বিচ্ছিন্নতা৷ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ৭নং সেক্টরে, যোগ দিলেন মেহেদীপুরে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে৷ ক্যাপ্টেন আনাম ৪নং সেক্টরে, সিলেট রণাঙ্গনে৷ মেহেদীপুরের অদূরেই বয়ে চলেছে মহানন্দা নদী৷ মেহেদীপুর ক্যাম্পের দায়িত্ব পেয়েছেন ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর৷ বয়স মোটে তেইশ৷ তারুণ্যে টগবগ করে ফুটছেন তিনি৷ দৃঢ় প্রত্যয়ের এক অসম্ভব লড়াকু মানুষ৷ পরিধানে লুঙ্গি, গায়ে গেঞ্জি, মাথায় লাল গামছা, পায়ে ক্যানভাসের জুতো৷ এই তরুণ সেক্টর কমান্ডারকে দেখে মেহেদীপুর মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারা প্রথমে আঁচ করতে পারেনি কতটা ইস্পাতকঠিন তাঁর মন, কতটা বলিষ্ঠ তাঁর স্বভাব৷ তাঁর কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, কর্তব্যপরায়ণতা এবং ক্লান্তিহীন অধ্যবসায় তাঁর অল্প বয়স আর বাচ্চা বাচ্চা চেহারাটাকে অতিক্রম করে পরিণত করেছে এক প্রবল ব্যক্তিত্বে৷ তাঁর নামে সবাই এক ডাকে দাঁড়িয়ে যায়৷

৩ ডিসেম্বর ১৯৭১৷ বাংলাদেশ জুড়ে সব ফ্রন্টে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শুরু হলো চূড়ান্ত লড়াই৷ মেহেদীপুর ক্যাম্পেও প্রস্তুতি শুরু হলো৷ এরই মধ্যে কোথাও কোথাও হানা দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধারা৷ যেন পরীক্ষা করে নিয়েছে নিজেদের শক্তি৷ এখন প্রস্তুতি শুরু চূড়ান্ত লড়াইয়ের৷ মহানন্দা নদীর অপর পারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর৷ সেখানে শক্ত ঘাঁটি গেড়ে আছে পাকিস্তানি হানাদাররা৷ সে ঘাঁটি আগলাতেই নদীর তীর ঘেঁষে তারা তৈরি করে রেখেছে প্রতিরক্ষা দুর্গ৷ জনশূন্য চারদিকে৷ ঝোপঝাড়, গাছপালায় ভরা এই প্রতিরক্ষা দুর্গ৷ সেখানে তাদের হটানোর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের উপর৷

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর৷ লেফটেন্যান্ট কাইয়ুম, লেফটেন্যান্ট আউয়ালসহ ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে একটি আক্রমণের উদ্যোগ নিলেন ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর৷ বেশ কয়েকটা নৌকায় তাঁরা উজানে পাড়ি জমালেন ৷ ভোররাত৷ চাঁপাইনবাবগঞ্জের পশ্চিমে বারঘরিয়া৷ সেখানে অবস্থান নিয়ে পরিকল্পনা করা হলো হানাদার বাহিনীকে মিত্রবাহিনী দিয়ে গোলাবর্ষণ করে বিভ্রান্ত করে দেয়ার৷ এই অপ্রস্তুত অবস্থাতে আক্রমণ চালাবে মুক্তিবাহিনী৷ কিন্তু মিত্রবাহিনী গোলাবর্ষণ না করার ফলে মুক্তিবাহিনী নতুন কৌশল পরিকল্পনা করল৷

১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১৷ ভোরারাত৷ চাঁপাইনবাবগঞ্জকে দখল করার জন্য শুরু হলো চূড়ান্ত অপারেশন৷ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর জানতেন এটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান, জানতেন সহকর্মীরাও৷ তাই তিনি সহকর্মীদের জিজ্ঞেস করলেন এই অভিযানে কারা তাঁকে সঙ্গ দিবেন৷ সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা তিনি সঙ্গীদের দিয়েছিলেন৷ মাত্র ২০ জন তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন৷ ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে তিনি রওনা দিলেন৷ শীতের শেষ রাত৷ প্রচণ্ড শীতে হাত-মুখ জমে যাচ্ছে৷ রেহাইচর এলাকা দিয়ে তাঁরা মহানন্দা নদী পায়ে হেঁটে পাড়ি দিলেন৷ উত্তর দিক দিয়ে আক্রমণের সূচনা করা হলো ৷ অতর্কিত হামলা করে বেয়নেটের মাধ্যমে খতম করতে করতে তাঁরা এগোতে লাগলেন দক্ষিণ দিকে৷ ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর এমনভাবে আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন যাতে উত্তর থেকে শত্রু নিধন করার সময় শত্রু দক্ষিণ দিক থেকে গুলি করতে না পারে৷ সম্মুখ ও হাতাহাতি যুদ্ধ ক্রমেই তীব্র আকার ধারণ করতে থাকে৷ আর মাত্র কয়েকটা বাঙ্কারের পাকসেনা বাকি৷ তখনই দেখা দিল সমস্যা৷ পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সের কয়েকজন সৈন্য বাঁধের ওপর ছিল তারা ব্যাপারটা টের পেয়ে গেল৷ তারা যোগ দিল পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে৷ এরপরই পাকিস্তানি বাহিনী শুরু করে দিল গুলিবর্ষণ৷ কিন্তু জাহাঙ্গীর পিছু হটতে নারাজ৷ তিনি ভয়ে ভীত নন৷ তিনি সবাইকে নির্দেশ দিলেন এগিয়ে যাওয়ার জন্য৷ পাশাপাশি তিনি নিজেও এগিয়ে যেতে লাগলেন সামনের দিকে৷ তিনি হয়ে উঠলেন অদম্য দুঃসাহসী৷
হঠাৎ একটা গুলি এসে পড়ল সরাসরি ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের কপালে৷ মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন এই অসম সাহসী যোদ্ধা৷ হানাদারদের বেপোরোয়া গুলি বর্ষণের সামনে টিকতে পারলেন না তাঁর বাকি সহযোদ্ধারাও৷ তাঁরা পিছু হটলেন, নদীতে দিলেন ঝাঁপ৷ ডুব-সাঁতার দিয়ে চলে গেলেন নিরাপদ দূরত্বে৷ প্রচণ্ড শীতে তাঁরা নদী পাড়ি দিয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় হাজির হলেন মেহেদীপুর মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে৷ শোকের মাতম উঠল চারদিকে৷ দিকে দিকে রটে গেল ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের শহীদ হবার সংবাদ৷ মুক্তিবাহিনীর সব সদস্য দ্রুত এই শোককে শক্তিতে পরিণত করে প্রতিশোধের জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেন৷ তাঁদের প্রবল আক্রমণের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হলো বর্বররা৷ মুক্ত হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ৷
ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের রক্তক্ষরা নিষপ্রাণ দেহ নদীর পাড় থেকে উদ্ধার করে সম্মাননার মধ্য দিয়ে সমাহিত করা হলো গৌড়ের ঐতিহাসিক সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে৷ আজও ধীরে বহে সেই মহানন্দা তার ঢেউয়ে ঢেউয়ে উচ্চারণ করে যায় বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নাম৷ স্বাধীনতার মাত্র ২ দিন পূর্বে ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে এই মহান বীর দেশের জন্য শহীদ হলেন।





Related

বরিশাল কবে জেলা হয়?

তৎকালীন সময়ের প্রভাবশালী জমিদার আগা বাকের খানের নামানুসারে এ জেলার নামকরণ হয়। ১৮০১ সালের ১লা মে স্যার জন শ্যোর এ জেলার সদর দপ্তর বর্তমানে বরিশাল শহরে স্থানান্তরিত করেন। পরবর্তীতে বরিশাল নামেই এ জেলা পরিচিতি পায়। ১৮১৭ সালে এই জেলা একটি কালেক্টরেটে পরিণত হয়।



Related

১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের কত তারিখ কোন দুটি জেলা নিয়ে বরিশাল বিভাগ সৃষ্টি হয়?

পাকিস্তান আমলেই পটুয়াখালী মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৪ সালে বাকি চারটি মহকুমা জেলায় রূপান্তরিত হয় এবং বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ভোলা ও ঝালকাঠী এই ছয়টি জেলা নিয়ে ১৯৯৩ সালের ১লা জানুয়ারি বরিশাল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়।



Related

বরিশালের শিক্ষার হার কত ২০২২?

সাক্ষরতার হারের এ চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জনশুমারি ও গৃহগণনা, ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে। জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাক্ষরতার হারে সবচেয়ে এগিয়ে ঢাকা বিভাগ, হার প্রায় ৭৯। এর পরে রয়েছে বরিশাল, ৭৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ।



Related

বরিশাল কিসের জন্য বিখ্যাত

বরিশাল জেলা আমড়া এর জন্য বিখ্যাত। তাছাড়া বরিশালকে বাংলার ভেনিস বলা হয়।



Related

বরিশাল বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয় কত সালে?

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৪ সালে বাকি চারটি মহকুমা জেলায় রূপান্তরিত হয় এবং বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ভোলা ও ঝালকাঠী এই ছয়টি জেলা নিয়ে ১৯৯৩ সালের ১লা জানুয়ারি বরিশাল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়।