বিংশ শতাব্দিতে বাঙালীর শ্রেষ্ঠ অর্জন মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলার স্বাধীনতা। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালী জাতির অহংকার ও গর্বের বিষয়। দীর্ঘ নয় মাস পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এদেশের বীর বাঙালী যুদ্ধ করে ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলো। ২৪ বছরের পাকিস্তানী দুঃশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষ আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছিলো। ১৯৪৭ সালে লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভাগ করে বৃটিশরা এদেশ ছেড়ে চলে যায়। জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান দু’টি প্রদেশে বিভক্ত ছিলো। পূর্ব পাকিস্তানে বহু ধর্মের মানুষ বাস করলেও তাদের ভাষা ছিলো বাংলা।
১৯৫২ সালে পাকিস্তানী শাসকরা রাষ্ট্র ভাষা উর্দু করার ঘোষণা দেওয়ায় পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীরা তা মেনে নিতে পারেনি। প্রতিবাদে ঝলসে ওঠে বাঙালী । সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, শফিকের রক্তের বিনিময়ে রাষ্ট্র ভাষা বাংলাকে ছিনিয়ে আনা হয়। ১৯৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারীর ভাষা আন্দোলন -প্রথম জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারী করা হয়, ১৯৬২ সালের কুখ্যাত হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিলের আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর ঐতিহাসিক ছাত্র জনতার গণ অভ্যূত্থান, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। প্রত্যাহার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ রাজবন্দিদের মুক্তি ১৯৭০ এর নির্বাচনে এদেশের জনগণের ৬ দফার পক্ষে ম্যান্ডেন্ট প্রদান। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করার পর ক্ষমতা হস্তান্তর পাক সামরিক শাসকদের ছলচাতুরী -এদেশের মানুষকে বাধ্য করেছিলো পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে যেতে।
দীর্ঘ ২৪ বছর এই আন্দোলন সংগ্রামে বাঙালী জাতিকে অনেক রক্ত দিতে হয়েছে। ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে অনেক জাতীয় নেতাদের । এসব নেতাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মাওলানা ভাসানীর নাম উল্লেখযোগ্য। জাতি বঙ্গবন্ধুকে ৭০-এর নির্বাচনে ম্যান্ডেট নিয়েছিলো দেশ পরিচালনার জন্য। ৭ই মার্চ ১৯৭১ এ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বিশাল জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে ঘোষণা করেন ‘‘ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ’’ এবং যার কাছে যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করার আহবান জানান। ২১ বছর স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুদের মাধ্যমে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে এদেশে পরিচালিত হয়েছে। সে কারণেই স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধ আজ ভুলুন্ঠিত। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালী জাতীয়তাবাদ যা ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিলো। এই রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিই ছিলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ। ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে যারা হত্যা করে ক্ষমতায় বসেছিলেন, তারা সংবিধান থেকে এগুলি মুছে দেন। জাতীয় বীরদের সঠিক মর্যাদা ও সম্মান দিতে না পারলে জাতির ইতিহাস ও অগ্রগতি থমকে যাবে। নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার দায়িত্ব নিতে হবে আমাদের সকলের। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে প্রতিটি বাঙালির। ৩০ লক্ষ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে আমাদের সকলকে। সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্থান চিহ্নিত করে স্মারকস্তম্ভ বা ভাস্কর্য স্থাপন করে সেই যুদ্ধে শহীদদের তালিকা প্রস্তরফলকে লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে হবে। আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানোর জন্য একাজগুলি করা অত্যন্ত জরুরী।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের একটি উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট। প্রাচীন সমতটের এই জনপদের সমৃদ্ধির ইতিহাস উপমহাদেশের বহু প্রাচীন জনপদের সমকালীন ও সমপর্যায়ের। বর্তমানে খুলনা বিভাগের অন্তর্গত বাগেরহাট শহরের পূর্ব নাম ছিল 'খলিফাতাবাদ'।
বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহী খাবারের কথা আসলেই সবার প্রথমে আসে চুই ঝালের কথা। চুই ঝালে গরুর মাংস কিংবা খাসির মাংস, একনামে বিখ্যাত! খুলনা যাবেন আর চুই ঝালের তরকারি খাবেন না তা একদম হবে না। চুই বাংলাদেশের একটি অপ্রচলিত মশলা জাতীয় ফসল।
বিখ্যাত বাগেরহাট দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের এই ঐতিহাসিক জেলাটি মূলত উৎপাদনে এগিয়ে থাকা চিংড়ি ও সুপারির জন্য বিখ্যাত। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দর্শনীয় স্থান ষাট গম্বুজ মসজিদ এই জেলায় অবস্থিত। এছাড়া দেশে চিংড়ি এবং সুপারি উৎপাদনে সবার শীর্ষে এই জেলা।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাগেরহাট প্রথম প্রবেশ করে ২৪ এপ্রিল ১৯৭১ শনিবার। মুক্তিযুদ্বের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল এম এ জি ওসমানীর নেতৃত্বে বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়।