অবিভক্ত ভারতের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জেলা যশোর অনেক কিছুর জন্যেই বিখ্যাত। ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠর মধ্যে ২-জনই বৃহত্তর যশোর জেলার কৃতি সন্তান। এ আমাদের পরম অহংকার। স্বাধীনতা যুদ্ধেও যশোরের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চুড়ান্তভাবে শেষ হবার কয়েকদিন আগেই স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপন লড়াইয়ে দেশের সর্বপ্রথম শত্রু মুক্ত হয় আমাদের এই যশোর জেলা। সেই গৌরবমন্ডিত তারিখটি ছিল ১৯৭১ সালের ৬ই ডিসেম্বর। তাই আমরা চিরকাল মাথা উচুঁ করে বলতে পারি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যশোরই হল প্রথম শত্রু মুক্ত জেলা।
যশোরের প্রথম শহীদ হন চারুবালা, জননেতা শহীদ মশিউর রহমান, এ্যাডভোকেট শ্রী সুনীর কুমার রায়, ব্যবসায়ী নারায়ন চন্দ্র সাহা, সমাজসেবী সুধীর কুমার ঘোষসহ অনেকে।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ (১৯৩৬-১৯৭১)
বর্তমান নড়াইল জেলার মহেষখালী গ্রামে ১৯৩৬ সালের ২৬ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। পিতা-মরহুম আমানত শেখ ও মাতা-বেগম জেন্নাতা খানম। ৮ম শ্রেণীর ছাত্রাবস্থায় তিনি ১৯৫৬ সালে ইপিআর-এ ভর্তি হন। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার ঝিকরগাছা-শার্শা সীমান্তে গোয়ালহাটী গ্রামে হানাদার বাহিনীর সাথে সস্মুখ যুদ্ধ করে শহীদ হন।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সেপাহী হামিদুর রহমান (১৯৫৩-১৯৭১)
বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার খোরদা-খালিশপুর গ্রামে ১৯৫৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন। পিতা জনাব আক্কাছ আলী মন্ডল, মাতা-বেগম কায়েদুন্নেছা। সিলেট জেলার শ্রীমঙ্গলের ধলই সীমান্তে ২৮ অক্টোবর ১৯৭১ পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। আমবাসা গ্রামে তাঁকে সমাধি করা হয়।
যশোর জেলার খেতাবপ্রাপ্ত বীরমুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাঃ
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম
ঠিকান
১।বীরশ্রেষ্ট নূর মোহাম্মদ
ছেলে-জনাব মোস্তফা কামাল, নীলগঞ্জ, সদর, যশোর।
মেয়ে-মোছাঃ হাছিনা হক, নীলগঞ্জ, সদর, যশোর।
২।জনাব মোঃ নূরুল ইসলাম, বীর উত্তম
পিতা-মোঃ শমসের আলী, সাং-ইছালী, ডাক-হাশিমপুর, উপজেলা-সদর, যশোর।
৩।জনাব মোঃ শফিয়ার রহমান, বীরপ্রতিক
পিতা-মৃত নওয়াব আলী বিশ্বাস, সাং-জোতরহিমপুর,
ডাক-হাশিমপুর, উপজেলা-সদর, যশোর।
৪।জনাব এ কে এম ইসাহক, বীর প্রতিক
পিতা-মৃত মুজিবুর রহমান, সাং-ধলগ্রাম, ডাক-ধলগ্রাম, উপজেলা-বাঘারপাড়া, যশোর।
৫।জনাব মোঃ আব্দুল জলিল, বীর প্রতিক
পিতা-মৃত জোহর আলী মোড়ল, সাং-পাল্লা,
ডাক-ঝিকরগাছা, যশোর।
৬।জনাব হাজারী লাল তরফদার, বীর প্রতিক
পিতা-মৃত রশিক লাল তরফদার, সাং-রানিয়ালী,
ডাক-পাশাপোল, উপজেলা-চৌগাছা, যশোর।
৭।মৃত মোহাম্মদ উল্লাহ, বীর প্রতিক
সাং-কামালপুর, ডাক-রামনগর, উপজেলা-সদর, যশোর।
৮।জনাব মোহাম্মদ রেজাউল করিম, বীর প্রতিক
কাশিমপুর ইউনিয়ন, উপজেলা-সদর, যশোর।
এছাড়াও শহীদ আব্দুল বারেক (১৯৪৪-১৯৭১), শহীদ নজিবর রহমান (১৯৪৪-১৯৭১), শহীদ আব্দুল খালেক (১৯৫৮-১৯৭১), শহীদ মোহাম্মদ দৌলত আলী বিশ্বাস, শহীদ মোঃ চাঁদতুল্যা গাজী, কাজী মোঃ শামছুল আবেদীন ওলিদ, শহীদ আব্দুস সামাদ, শহীদ তবিবর রহমান, শহীদ সামছুল ইসলাম শান্তি, শহীদ এস এম নজরুল ইসলাম, শহীদ কাজী আব্দুল আজিম, শহীদ আলতাফ হোসেন, শহীদ সাজেদুর করিম সাজু, শহীদ মোঃ জিন্দার আলী, শহীদ শেখ ইদ্রিস আলী, শহীদ আসাদুজ্জামান, শহীদ হোসেন আলী সিকদার, শহীদ মোঃ এলাহী বক্স, শহীদ মোঃ ওমর আলী মোড়ল, শহীদ গোলাম মোস্তফা, শহীদ মোহাম্মদ আলী মন্ডল, শহীদ মোঃ মোজাম্মেল হক, শহীদ মোঃ লুৎফর রহমান, শহীদ মোঃ আকসেদ আলী উল্লেখযোগ্য।
যশোর জেলা খই, খেজুর গুড় ও জামতলার মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। তাছাড়া যশোর জেলাটিকে বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী বলা হয়।
যশোরের বিখ্যাত খাবার হকদানা, ছাক্কা, ডিমের খাট্টা, কাঁঠালের বিচি দিয়ে কুকড়োর (মুরগি) মাংস, চুই ঝাল খাসির মাংস যশোর অঞ্চলের শত বছরের রান্নার ইতিহাসকে সমুজ্জ্বল রেখেছে। যশোরের প্রায় সবার প্রিয় খাবার ঘাটকোল। প্রচলিত নাম ঘেঁটকচু।হকদানা, ছাক্কা, ডিমের খাট্টা, কাঁঠালের বিচি দিয়ে কুকড়োর (মুরগি) মাংস, চুই ঝাল খাসির মাংস যশোর অঞ্চলের শত বছরের রান্নার ইতিহাসকে সমুজ্জ্বল রেখেছে। যশোরের প্রায় সবার প্রিয় খাবার ঘাটকোল। প্রচলিত নাম ঘেঁটকচু।
জামতলার মিষ্টি হলো বাংলাদেশের যশোর জেলার জামতলা বাজারে উৎপন্ন একটি বিখ্যাত মিষ্টি। এটি ছানা দিয়ে তৈরি গোলাকৃতির একটি মিষ্টি যা ঘন চিনির রসে ডুবানো থাকে। এই মিষ্টি রসগোল্লার একটি প্রকরণ। এটি দেখতে কিছুটা লালচে বা বাদামী রংয়ের হয়ে থাকে। জামতলা বাজারের সাদেক আলী নামক জনৈক ব্যক্তি এই মিষ্টি তৈরি করেন বলে এটি সাদেক গোল্লা নামেও পরিচিত।
যশোর কে ফুলের রাজধানী বলা হয় কেননা যশোরের গদখালি থেকে বাংলাদেশের ৮০% ফুল সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশের সব থেকে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল যশোরে অবস্থিত। যশোরে বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে যশোর বিমানবন্দর নির্মিত হয়েছিল যা এখন আন্তর্জাতিকীকরণের কাজ চলছে।
ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে গৌড়ের শাসনকর্তা দাউদের একজন বিশ্বস্ত সহযোগী শ্রীহরি ১৫৭৪ সালের যশোরের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং স্বাধীন যশোর রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।