১৯১৭ সালে রাঙ্গামাটি জেলা এবং বান্দরবান মহকুমার অধীনে বর্তমান রুমা উপজেলা থানা হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে। ১৯৮৩ সালে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে রুমা উপজেলায় রুপান্তরিত হয়।বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশী পাহাড়-পর্বত এবং বৈচিত্র্যময় অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের সমাহার সমৃদ্ধ রুমা উপজেলা। যোগাযোগ দুর্গমতা ও আবাসন সুবিধার সীমাবদ্ধতার কারণে দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীর জন্য রুমা সর্বত্র বিচরণ এখনো কষ্টসাধ্য। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত-শৃঙ্গ তাজিংডং ও সর্বোচ্চ পর্বতমালা কেউক্রাডং, সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে সাড়ে তিন হাজার ফুট উচুঁতে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট বিশাল জলধার বগালেক এবং ঋজুক জলপ্রপাত এ উপজেলায় অবস্থিত। এ উপজেলায় ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আছে। এ উপজেলার জনগণের শিক্ষার হার খুবই কম। সাধারণ জনগণ এখনো মূলত জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। তবে পর্যটন শিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে রুমায় অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
বান্দরবান জেলা বাংলাদেশের সবচেয়ে কম জনবসতিপূর্ণ জেলা। ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এ জেলার মোট জনসংখ্যা ৪,৮০,৬৪২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২,৪৬,৫৯০ জন এবং মহিলা ২,৩৪,০৩৫ জন। মোট পরিবার ৮০,১০২টি। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১০৭জন।
বান্দরবানের ধর্মবিশ্বাস-২০২২
ইসলাম (৫২.৬৮%)
বৌদ্ধ (২৯.৫২%)
খ্রিস্ট ধর্ম (৯.৭৮%)
হিন্দু ধর্ম (৩.৪২%)
ধর্মবিশ্বাস অনুসারে এ জেলার মোট জনসংখ্যার৫২.৬৮ মুসলিম, ৩.৪২ হিন্দু, ২৯.৫২ বৌদ্ধ এবং ৯.৭৮ খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। মুসলিম ও হিন্দুরা বাংলাভাষী। এছাড়াও এ জেলায় মারমা, চাকমা, চাক, বম, মুরং, ত্রিপুরা, খেয়াং, খুমি, লুসাই প্রভৃতি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ২১°১১´ থেকে ২২°২২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০৪´ থেকে ৯২°৪১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে বান্দরবান জেলার অবস্থান। রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ৩২৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। এ জেলার পশ্চিমে কক্সবাজার জেলা ও চট্টগ্রাম জেলা, উত্তরে রাঙ্গামাটি জেলা, পূর্বে রাঙ্গামাটি জেলা ও মায়ানমারের চিন প্রদেশ এবং দক্ষিণে ও পশ্চিমে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ অবস্থিত।
বান্দরবান জেলার নামকরণ নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের প্রচলিত রূপ কথায় আছে অত্র এলাকায় একসময় বাস করত অসংখ্য বানর । আর এই বানরগুলো শহরের প্রবেশ মুখে ছড়ার পাড়ে পাহাড়ে প্রতিনিয়ত লবণ খেতে আসত। এক সময় অনবরত বৃষ্টির কারণে ছড়ার পানি বৃ্দ্ধি পাওয়ায় বানরের দল ছড়া পাড় হয়ে পাহাড়ে যেতে না পারায় একে অপরকে ধরে ধরে সারিবদ্ধভাবে ছড়া পাড় হয়। বানরের ছড়া পারাপারের এই দৃশ্য দেখতে পায় এই জনপদের মানুষ। এই সময় থেকে এই জায়গাটির পরিচিতি লাভ করে "ম্যাঅকছি ছড়া " হিসাবে । অর্থ্যাৎ মার্মা ভাষায় ম্যাঅক অর্থ বানর আর ছিঃ অর্থ বাঁধ । কালের প্রবাহে বাংলা ভাষাভাষির সাধারণ উচ্চারণে এই এলাকার নাম রুপ লাভ করে বান্দরবান হিসাবে । বর্তমানে সরকারি দলিল পত্রে বান্দরবান হিসাবে এই জেলার নাম স্থায়ী রুপ লাভ করেছে। তবে মার্মা ভাষায় বান্দরবানের নাম "রদ ক্যওচি ম্রো"।
বৃটিশ শাসন আমলে ১৮৬০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামকে জেলা ঘোষণা করা হয়। তৎকালীন সময়ে বান্দরবান পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার অধীন ছিলো। ক্যাপ্টেন মাগ্রেথ ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার প্রথম সুপারিনট্যানডেন্ট। ১৮৬৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার সুপারিনট্যানডেন্ট পদটির কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করা হয় এবং ১৮৬৭ সালে এই পদটির নামকরণ করা হয় ডেপুটি কমিশনার। পার্বত্য চট্ট্রগাম জেলার প্রথাম ডেপুটি কমিশনার ছিলেন টি, এইচ লুইন। ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রামকে তিনটি সার্কেলে বিভক্ত করা হয়-চাকমা সার্কেল, মং সার্কেল, এবং বোমাং সার্কেল। প্রত্যেক সার্কেলের জন্য একজন সার্কেল চীফ নিযুক্ত ছিলেন। বান্দরবান তৎকালীন সময়ে বোমাং সার্কেলের অর্ন্তভুক্ত ছিলো। বোমাং সার্কেলের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার কারণে এই জেলার আদি নাম বোমাং থং।
বান্দরবান জেলা ১৯৫১ সালে মহকুমা হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করে। এটি রাংগামাটি জেলার প্রশাসনিক ইউনিট ছিলো। পরর্বতীতে ১৯৮১ সালের ১৮ই এপ্রিল, তৎকালিন লামা মহকুমার ভৌগলিক ও প্রশাসনিক সীমানাসহ সাতটি উপজেলার সমন্বয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।