লামা উপজেলা পর্যায়ে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদের বিবরণ।
লামায় প্রতিটি ২৫ একর করে ১৫শটি রাবার বাগান ও সাড়ে ৭শ বিভিন্ন ফলফলাদির হর্টিকালচার বাগান রয়েছে। এসব রাবার বাগান থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমান রাবার উৎপন্ন হয়। যাহা জাতীয় রাজস্ব আয়ে ব্যাপক অবদান রাখছে। এটিকে নিয়ে রাবার শিল্প গড়ে এখানে তোলা সম্ভব। এছাড়া এখানের পাহাড়গুলোতে বিপুল পরিমাণ উন্নত মানের খনিজ পাথর ও বালু সম্পদ রয়েছে। যা দিয়ে সিমেন্ট কারখানাসহ সিরামিক শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। ফাঁসিয়াখালীর ইয়াংছা এলাকার মিজ্ঝিরিতে গ্যাস ও রম্নপসীপাড়ায় কয়লার খনি আছে। যা থেকে কয়লা ও গ্যাস উত্তোলন সম্ভব। এখানে রয়েছে অসংখ্য পাহাড় ও ঝিরি। এসব এলাকায় দুই পাহাড় ও ঝিরিতে কৃত্রিম জলাশয় সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যাপক মৎস্য চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। যা দ্বারা দেশে আমিষ সংকট নিরসন সম্ভব। তাছাড়াও এখানের পতিত পাহাড়ী ভূমি রয়েছে। এসব পতিত পাহাড়ি ভূমিতে প্রাকৃতিক জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের রয়েছে বিপুল সমাভবনা। পাহাড়ে হাজার হাজার একর ভূমি জুড়ে প্রাকৃতিকভাবে রয়েছে বাঁশ, বেত ও বৃক্ষ। এসব বনজ সম্পদ দিয়ে স্থানীয়ভাবে কাগজ ও ফানির্চার শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। এখানে আখ, ভূট্টা, কাসাপা, পাম অয়েল, কপি, কমলা ও চা চাষের জন্য এখানের পাহাড়ি মাটি ও জলবায়ু খুবই উপযোগী। এসব উৎপাদনের মাধ্যমে লামায় শিল্প কারখানা গড়ে উঠার সম্ভাবনা থাকলেও সরকারের পৃষ্টপোষকতার অভাবে তা হয়ে বানিজ্যিক ভাবে গড়ে উঠেনি। এতদাঞ্চলে উৎপাদিত মৌসুমী ফল, আদা, হলুদ, রাবার, বাঁশ ও কাঠ কেন্দ্রীক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে এখানকার উৎপাদিত পন্য যেমন কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারত; তেমনি এলাকার হাজার হাজার শ্রমজীবি মানুষের কর্মসংস্থানের সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরম্নত্বপূর্ণ ভুমিকা রখতে সক্ষম হত। দেশের একটি অর্থকারী ফসল তামাক। উপজেলায় রবি মৌসুমে প্রচুর পরিমানে তামাক চাষ হয়। শতকরা ৯০ জন চাষী তামাক চাষ করে থাকেন। এখানে উৎপাদিত তামাক দিয়ে এলাকায় একটি তামাক শিল্প গড়ে উঠা সম্ভব। অপরদিকে লামার পাহাড় ও নদী ঘেরা প্রাকৃতিক দৃশ্যে রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। এখানকার প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্য এবং উপজাতীয় জনগোষ্টির জীবনধারাকে পূঁজি করে এখানে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠতে পারে। এর মাধ্যমে পাহাড়ী জনপদ লামার পরিচয় ছড়িয়ে পড়তে পারে দেশে থেকে বিদেশে। বর্তমানে লামার মিরিঞ্জা পর্যটন এলাকা, সাবক বিলছড়ি মহামুনি বৌদ্ধ বিহার, সরই এলাকার কোয়ান্টাম শিশু কানন এবং পাহাড়ের গা দিয়ে বয়ে যাওয়া মাতামুহুরী নদীর সৌন্দর্য আগমত্মকদের মুগ্ধ করে। সরকারি সহযোগিতায় এসকল পর্যটন এলাকাগুলো আধুনিকায়ন করা হলে তা নিশ্চিত এতদাঞ্চলের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাবে।
বান্দরবান জেলা বাংলাদেশের সবচেয়ে কম জনবসতিপূর্ণ জেলা। ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এ জেলার মোট জনসংখ্যা ৪,৮০,৬৪২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২,৪৬,৫৯০ জন এবং মহিলা ২,৩৪,০৩৫ জন। মোট পরিবার ৮০,১০২টি। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১০৭জন।
বান্দরবানের ধর্মবিশ্বাস-২০২২
ইসলাম (৫২.৬৮%)
বৌদ্ধ (২৯.৫২%)
খ্রিস্ট ধর্ম (৯.৭৮%)
হিন্দু ধর্ম (৩.৪২%)
ধর্মবিশ্বাস অনুসারে এ জেলার মোট জনসংখ্যার৫২.৬৮ মুসলিম, ৩.৪২ হিন্দু, ২৯.৫২ বৌদ্ধ এবং ৯.৭৮ খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। মুসলিম ও হিন্দুরা বাংলাভাষী। এছাড়াও এ জেলায় মারমা, চাকমা, চাক, বম, মুরং, ত্রিপুরা, খেয়াং, খুমি, লুসাই প্রভৃতি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ২১°১১´ থেকে ২২°২২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°০৪´ থেকে ৯২°৪১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে বান্দরবান জেলার অবস্থান। রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ৩২৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। এ জেলার পশ্চিমে কক্সবাজার জেলা ও চট্টগ্রাম জেলা, উত্তরে রাঙ্গামাটি জেলা, পূর্বে রাঙ্গামাটি জেলা ও মায়ানমারের চিন প্রদেশ এবং দক্ষিণে ও পশ্চিমে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ অবস্থিত।
বান্দরবান জেলার নামকরণ নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের প্রচলিত রূপ কথায় আছে অত্র এলাকায় একসময় বাস করত অসংখ্য বানর । আর এই বানরগুলো শহরের প্রবেশ মুখে ছড়ার পাড়ে পাহাড়ে প্রতিনিয়ত লবণ খেতে আসত। এক সময় অনবরত বৃষ্টির কারণে ছড়ার পানি বৃ্দ্ধি পাওয়ায় বানরের দল ছড়া পাড় হয়ে পাহাড়ে যেতে না পারায় একে অপরকে ধরে ধরে সারিবদ্ধভাবে ছড়া পাড় হয়। বানরের ছড়া পারাপারের এই দৃশ্য দেখতে পায় এই জনপদের মানুষ। এই সময় থেকে এই জায়গাটির পরিচিতি লাভ করে "ম্যাঅকছি ছড়া " হিসাবে । অর্থ্যাৎ মার্মা ভাষায় ম্যাঅক অর্থ বানর আর ছিঃ অর্থ বাঁধ । কালের প্রবাহে বাংলা ভাষাভাষির সাধারণ উচ্চারণে এই এলাকার নাম রুপ লাভ করে বান্দরবান হিসাবে । বর্তমানে সরকারি দলিল পত্রে বান্দরবান হিসাবে এই জেলার নাম স্থায়ী রুপ লাভ করেছে। তবে মার্মা ভাষায় বান্দরবানের নাম "রদ ক্যওচি ম্রো"।
বৃটিশ শাসন আমলে ১৮৬০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামকে জেলা ঘোষণা করা হয়। তৎকালীন সময়ে বান্দরবান পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার অধীন ছিলো। ক্যাপ্টেন মাগ্রেথ ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার প্রথম সুপারিনট্যানডেন্ট। ১৮৬৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার সুপারিনট্যানডেন্ট পদটির কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করা হয় এবং ১৮৬৭ সালে এই পদটির নামকরণ করা হয় ডেপুটি কমিশনার। পার্বত্য চট্ট্রগাম জেলার প্রথাম ডেপুটি কমিশনার ছিলেন টি, এইচ লুইন। ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রামকে তিনটি সার্কেলে বিভক্ত করা হয়-চাকমা সার্কেল, মং সার্কেল, এবং বোমাং সার্কেল। প্রত্যেক সার্কেলের জন্য একজন সার্কেল চীফ নিযুক্ত ছিলেন। বান্দরবান তৎকালীন সময়ে বোমাং সার্কেলের অর্ন্তভুক্ত ছিলো। বোমাং সার্কেলের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার কারণে এই জেলার আদি নাম বোমাং থং।
বান্দরবান জেলা ১৯৫১ সালে মহকুমা হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করে। এটি রাংগামাটি জেলার প্রশাসনিক ইউনিট ছিলো। পরর্বতীতে ১৯৮১ সালের ১৮ই এপ্রিল, তৎকালিন লামা মহকুমার ভৌগলিক ও প্রশাসনিক সীমানাসহ সাতটি উপজেলার সমন্বয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।