The Ballpen
শাল্লা উপজেলার পটভূমি - theballpen

শাল্লা উপজেলার পটভূমি

1st Jan 2023 | সুনামগঞ্জ জেলা |

সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার কোন লিখিত ইতিহাস নেই। লেখা হয়নি এর স্থানীয় বা আঞ্চলিক ইতিহাস। সে কারণে শাল্লা উপজেলার সার্বিক তথ্য উদ্ধার করে এর ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরে এ উপজেলা সম্পর্কে লেখা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। শাল্লা নিঃসন্দেহে একটি ইতিহাস বিশ্রুত জনপদ। এর বুকে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা সুপ্ত ও লুপ্ত হয়ে রয়েছে। এ অঞ্চল বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী হাওড়ের ভাঙ্গা-গড়া প্রাচীন ও নতুন চর নিয়ে গঠিত। তাই এর বয়স নির্ণয় করা খুবই কষ্টসাধ্য। বাংলাদেশের  হাওড় বেষ্টিত এ উপজেলাটি ১৯১৯ খ্রিঃ নৌ-পুলিশ থানা, ১৯৪১ খ্রিঃ প্রশাসনিক থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে কালনী নদীর প্রবল স্রোতের ভাঙ্গনে নৌ থানাটির অবকাঠামো নদীগর্ভে  বিলুপ্ত হওয়ায় তখনকার বিজ্ঞজনেরা শাল্লা থানার মধ্যবর্তী স্থান হিসেবে ঘুঙ্গিয়ারগাঁও মৌজাকে বেঁছে নেন এবং এখানে থানাটি প্রতিষ্ঠিত করেন। সর্বশেষে ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে শাল্লাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়।

এ উপজেলার নাম করণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন কিছু জানা যায়নি। তবে কথিত আছে, শাল্লার পূর্ব নাম ছিল শাহাগঞ্জ বাজার। শাহানুর নামে এক আউলিয়ার নামের উপর শাহাগঞ্জ বাজার প্রতিষ্ঠিত হয় বলে জনশ্রুতি আছে। জানা যায় শাহানুর নামে ঐ আউলিয়া সব সময় আল্লাহ আল্লাহ বলে জিকির করতেন এবং তাঁর নামের প্রথম অক্ষর শা এবং জিকিরের আল্লাহ উভয় মিলে শাল্লার নামকরণ হয়েছে বলে জনশ্রুতি আছে। অন্য একটি জনশ্রুতিতে জানা যায়, উক্ত এলাকাটি এক সময় কালীদহ সাগরের অংশ বিশেষ থাকার কারণে এ অঞ্চলে ক্রমান্বয়ে পলি ভরাটের ফলে মানুষের বসবাস শুরু হয়। পাশাপাশি এখানে মৎস্য আহরণের সুযোগ থাকায় জেলেদের বসতি গড়ে উঠে। জেলেরা পানিতে জাল ভেসে থাকার জন্য " সুলা " ব্যবহার করত। উক্ত " সুলা " শব্দ থেকে কালান্তরে শাল্লা নামকরণ করা হয়। শাল্লা একটি  ভাটি অঞ্চল। এটি এক সময় বানিয়াচং পরগণার অধিনস্থ ছিল। এখানে মানুষের বসবাসের ইতিহাস সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে এ অঞ্চলের কিছু প্রাচীন নিদর্শন যেমন চবিবশা গ্রামে খলিশা হাটি ও বড় হাটি নামক স্থানের নাম থেকে বুঝা যায়, এখানে খাসিয়া উপজাতির বসবাস ছিল। এই সত্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে দেখা যায়, গ্রাম খলিশার পূর্ব প্রান্তে মাটির টেক/ঢিবি সহ অন্যান্য আরও কিছু সংখ্যক নিদর্শনে প্রমাণ করে এখানে উপজাতির বসবাস ছিল। সে হিসেবে এ অঞ্চলে মানুষের বসবাসের আনুমানিক বয়স প্রায় আটশত বছর পূর্বে।

সুনামগঞ্জ জেলা সদর থেকে ৬৫ কি.মি. দক্ষিণে দুর্গম হাওড় এলাকায় শাল্লা উপজেলার অবস্থান। বছরে প্রায় ৭ মাস এ অঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত থাকে এবং অবশিষ্ট প্রায় ৫ মাস শুকনো মৌসুম। শুকনো মৌসুমে বিস্তীর্ণ হাওড় অঞ্চলে দেখা যায় সবুজ ধানের সমারোহ।  আর বর্ষায় চারিদিকে থৈ থৈ পানি আর পানি, মাঝে মাঝে দেখা যায় হাওড় কন্যা গ্রামগুলো পানিতে ভাসছে। ধান উৎপাদন আর মৎস্য আহরণই এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান উপজীব্য। এ অঞ্চলের কৃষি প্রধানত প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। প্রকৃতি সদয় হলে মানুষ ভাল ফসল পায়। আর প্রকৃতি বিরূপ হলে অনাবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝা, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও অকাল বন্যায় চৈত্র-বৈশাখ মাসে কৃষকের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। কেড়ে নেয় মানুষের মুখের গ্রাস, চারিদিকে নেমে আসে হাহাকার। বর্ষায় ঝড়ো হাওয়া, হাওড়ের পানির দুর্বার ঢেউ ভেঙ্গে দেয় মানুষের ঘর-বাড়ী, রাস্তা-ঘাট, গ্রাম-গঞ্জ। আর এভাবেই প্রকৃতির সঙ্গে নিরন্তর যুদ্ধ করে বেঁচে আছে এ উপজেলার মানুষ।

শাল্লা উপজেলার সীমানা উত্তরে দিরাই উপজেলা, পূর্বে হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলা, দক্ষিণে হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণ-পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলা আর পশ্চিমে নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুড়ি উপজেলা। আর এর ভৌগলিক অবস্থান ২৪°৩৪' হতে  ২৪°৪৯' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°০৮' হতে ৯১°২৩' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত।





Related

সুনামগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত

সুনামগঞ্জ জেলা লোক সংগীত এর জন্য বিখ্যাত। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের জন্ম সুনামগঞ্জে, হাসন রাজা, রাধরমন দত্ত, দূরবীন শাহ, ক্বারি আমির উদ্দিন এবং আরো অনেক সনামধন্য বাউল এর জন্ম সুনামগঞ্জে হয়েছে। সুনামগঞ্জে অনেক দর্শনীয় জায়গা রয়েছে যেমন, নীলাদ্রি লেক, টাংগুয়ার হাওর, শিমুল বাগান, যাদুখুটা নদী ইত্যাদি।



Related

মুক্তিযুদ্ধের সময় সুনামগঞ্জ কত নং সেক্টরে ছিল?

স্বাধীনতাযুদ্ধে সুনামগঞ্জ জেলা ছিল জাতীয়ভাবে বিভক্ত সেক্টর-৫ এর অন্তর্গত। ৫নং সেক্টরের বিস্তৃতি মূলত সুনামগঞ্জ জেলা বা সাবেক সুনামগঞ্জ মহকুমাব্যাপী। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল মীর শওকত আলী। সুনামগঞ্জ জেলা স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদ মুক্তিযুদ্ধের সূচনা থেকে শেষ পর্যন্ত গৌরবজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে।



Related

সুনামগঞ্জ জেলা কত বর্গ কিলোমিটার?

সুনামগঞ্জ জেলা  আয়তন: ৩,৬৬৯.৫৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩৪´ থেকে ২৫°১২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৬´ থেকে ৯১°৪৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ।



Related

ছাতক কিসের জন্য বিখ্যাত

১৭৭৪ সালে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সময় জর্জ ইংলিশ ব্যবসার করার জন্যে স্ব-পরিবারে এখানে অবস্থান করে চুনা পাথরের ব্যবসার আরো প্রাতিষ্টানিক রূপ দেন। সে সময়ে ছাতক চুনশিল্পে সারা বিশ্বে পরিচিতি ও খ্যাতি অর্জন করে।



Related

সুনামগঞ্জ জেলায় ভাষা ও সাংস্কৃতিক

ভাষা

সুনামগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার সঙ্গে প্রাচীন চর্যাপদের ভাষার মিল পরিলক্ষিত হয়। অন্য অঞ্চলের সঙ্গেও এমন দাবী যুক্তিযুক্ত। অন্তত বিশেষজ্ঞদের অভিমত এমনটিই। পণ্ডিত সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, চর্যাপদের ভাষা পশ্চিমবঙ্গের উপভাষা। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে এটি প্রাচীন বঙ্গ কামরূপী ভাষা। আবার কেউ কেউ বলেন প্রাচীন বাংলা ভাষার নিদর্শন মাত্র। আমাদের অভিমত হলো, বাংলা ভাষাসহ উড়িয়া, অসমীয়া, মৈথিলী ইত্যাদি ভাষা ও বাংলা ভাষার উপভাষা বা আঞ্চলিক ভাষাগুলোর সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে চর্যাপদের ভাষার মিল ছিল সুদূর কিংবা অদূর অতীতে, কিন্তু আজ আর নেই। সে ক্ষেত্রে কেবল ব্যতিক্রম সুনামগঞ্জসহ নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জের- বলা ভাল প্রাচীন লাউড় রাজ্যের- আঞ্চলিক ভাষা। ব্যতিক্রমী প্রাচীন লাউড় রাজ্যের ভাষা ব্যতীত অন্যান্য উপভাষাগুলো দ্রুত পরিবর্তনের মাধ্যমে চর্যাপদের ভাষার সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রকে সম্পূর্ণভাবে ছিন্ন করেছে। প্রাচীন লাউড় রাজ্য ও তার আশপাশের কিছু এলাকার- বর্তমানের ভাটি বাংলা যাকে বলে- ভাষা আশ্চর্যরকমভাবে পরিবর্তনের দিক থেকে শ্লথগতিসম্পন্ন বিধায় চর্যাপদের ভাষার সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রটি আজও অক্ষুণ্ণ আছে। এই কারণেই সুনামগঞ্জের জনবসতিপূর্ণ এলাকায় চর্যাপদ কর্তাগণের উল্লেখযোগ্য অংশের বসবাস ছিল এবং তাঁদের উত্তরসূরীর মানসপুত্র অথবা ভাবশিষ্য অসংখ্য বৈষ্ণব-বাউলেরা এখনও এখানকার প্রকৃতি ও সমাজ-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে বিরাজ করেন। বাংলাদেশের অন্যত্র এমনটি বিরল দৃশ্য। আহমদ শরীফ যখন বলেন, ‘চর্যাপদের দেশেই বৈষ্ণব-বাউলের উদ্ভব, তখন মনে হয় চর্যাপদের দেশ বলতে সুনামগঞ্জকেই বুঝানো হয়েছে'।

সুনামগঞ্জ জেলার জনগণ সাধারণত বাংলা ভাষায় কথা বলেন। তবে জগন্নাথপুর, ছাতক, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার স্থানীয় জনগণ নিজেদের মধ্যে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। অন্যান্য উপজেলায় বিভিন্ন অঞ্চল যেমন সিলেট অঞ্চল, ময়মনসিংহ অঞ্চল, কুমিল্লা অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে।

সুনামগঞ্জ জেলার অধিবাসীরা সাহিত্য চর্চায় সিলেট বিভাগের পথিকৃৎ, এটা অত্যুক্তি নয়। শুধু বাংলা ভাষাতেই নয় এ জেলার অধিবাসীরা মোট সাতটি বিভিন্ন ভাষায় সাহিত্য চর্চার ঐতিহ্য রেখেছেন। এটিও এ জেলার অন্যতম রেকর্ড বলে মনে করি। পনের’শ শতাব্দী থেকে শুরু এ যাবৎ সুনামগঞ্জবাসীরা যে সমস্ত ভাষায় সাহিত্য রচনা করে গেছেন, সেগুলো হলো-(১) সংস্কৃত (২) বাংলা (৩) সিলেটি নাগরী (৪) আরবি (৫) ফার্সি (৬) উর্দু ও (৭) ইংরেজি।

সংস্কৃতি:

অসংখ্য হাওর-বাওর, নদীনালা, খালবিলে পরিবেষ্টিত জনপদ সুনামগঞ্জ। এ জনপদে ঐতিহ্য সংস্কৃতি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের সরব উপাদান। আউল-বাউলের চারণভূমি সুনামগঞ্জ তাঁর ঐতিহ্যের ধারা থেকে আজও বিচ্যুত হয়নি। লোকসাহিত্যে মহাভারতের অনুবাদক মহাকবি সঞ্চয় (পঞ্চদশ শতক), কুবের আচার্য্য, ঈশান নাগর (বৈষ্ণব কবি)দিব্য সিংহ (লাউর রাজ্যের স্বাধীন রাজা)থেকে শুরু করে সৈয়দ শাহনূর, সৈয়দ হোসেন আলম, রাধারমণ, হাছনরাজা, দুরবীণ শাহ, কালাশাহ, ছাবাল শাহ, এলাহী বক্স মুন্সী, শাহ আছদ আলী, পীর মজির উদ্দিন, আফজল শাহ, শাহ আবদুল করিম এ মাটির সন্তান। আধুনিক সাহিত্যে, গল্প-উপন্যাসে শাহেদ আলী, ঝর্ণাদাস পুরকায়স্থ, কবিতায় প্রজেশ কুমার রায়, মুতাসিম আলী, মোহাম্মদ সাদিক, আশরাফ আহমদ, ইকবাল কাগজী, মমিনুল মউজদীন, শামীম লুৎফর, গীতসাহিত্যে মনিরুজ্জামান মনির, দেওয়ান মহসিন রাজা চৌধুরী, সঙ্গীতে উজির মিয়া, নির্মলেন্দু চৌধুরী, এমরান আলী, শফিকুন্নর নুর, সাবিবর আহমদ সোহেল, নাটকে তরনী কান্ত দে, মোদাবিবর আলী টুনু, শাহ আবু তাহের, সদ্য প্রয়াত গোলাম রব্বানী, শিল্পকর্মে ধ্রুব এষ, সাংবাদিকতায় ফজলুল হক সেলবর্ষী, মকবুল হোসেন চৌধূরী, মুনাওর আলী, ইছাক আলী, হাসান শাহরিয়ার, সাকির আহমদ,শিক্ষায় মোহাম্মদ আলী, আব্দুল মন্নান চৌধুরী, আলী ফরিদ আহমদ, আব্দুল কাইয়ূম, সমাজসেবায় হাজী মকবুল হোসেন পুরকায়স্থ, সতীশ চন্দ্র রায়, দিগেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ, ক্রীড়ায় সমশের আলী, আছদ্দর আলী ভূঁইয়া, কন্টর মিযা, নাজির আহমদ চৌধুরী উল্লেখযোগ্য।