সাংস্কৃতিক জীবনধারাঃ
নবাবগঞ্জের সাংস্কৃতিক জীবন-ধারা সম্পর্কে পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, আনন্দ, উল্লাস এবং উৎসবের মাধ্যমে এ ধারা অগ্রসর হয়েছে। অতীত ঐতিহ্য, মানবীয় কৃতিত্ব বা জাতীয় সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক চেতনার প্রসারণের বিশেষ কোন প্রচেষ্টা হয়নি। তবে সাংস্কৃতিক ভাবধারা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের উৎসাহ ও উদ্দীপনায় এখানকার সাংস্কৃতিক জীবন ও সৃজনী শক্তি ধীরে ধীরে উৎসাহিত হয়েছে।
নাট্য সংস্কৃতিঃ
যতদূর জানা যায় এ অঞ্চলে সর্ব প্রথম নাটক নির্মিত হয়েছিল সৈয়দ আহমদ সাহেবের প্রচেষ্টায় মহারাজপুর গ্রামে। তারপরেও নাটক মঞ্চায়ন শুরু হয় নবাবগঞ্জ শহরে। অনেকক্ষেত্রে পূর্ণ উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে এখানে বিভিন্ন সময়ে নাটক নির্মাণ হয়েছে। তারপর ধীরে ধীরে এখানে ‘নাট্যশালা’ নির্মাণের প্রয়াস চলে। ১৮৯১ সালে এখানে সর্বপ্রথম ‘এমপ্রেস থিয়েটার’ নামে একটি নাট্যশালা বা ক্লাব গঠিত হয়। স্থানীয় জমিদার বাবু ললিত মোহন মৈত্র এর পূষ্ঠপোষক ছিলেন। তদানীন্তন সৌখীন নাট্যামোদী বাবু গোপীমোহন সাহা, বাবু উমেশচন্দ্র চ্যাটার্জ্জী প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ এই নাট্য-শালা পরিচালনা এবং নাটক মঞ্চস্থ করতেন! শহরের দেখাদেখি রাজারামপুর, মহারাজপুর, কানসাট, শিবগঞ্জ, মনাকষা, চৌডালা, ভোলাহাট প্রভৃতি স্থানেও ছোট ছোট নাট্যশালা নির্মিত হয় এবং নাটক মঞ্চস্থ হতে থাকে।
লোক সংস্কৃতিঃ
লোকসাহিত্য সংস্কৃতির একটি মূল্যবান উপাদান। পৃথিবীর প্রত্যেক জাতির ইতিহাস এবং সংস্কৃতির বিকাশে লোকসাহিত্যের অবদান রয়েছে। যে কোন জাতির স্মৃতি-সম্ভার পরীক্ষা করলেই আমরা অনেক উপাখ্যান, প্রবাদ এবং মন্ত্রের সন্ধান পাবো। লোকসাহিত্য মৌলিক ধারার সাহিত্য, যা অতীত ঐতিহ্য এবং বর্তমান অভিজ্ঞতাকে আশ্রয় করে রচিত হয়। একটি বিশিষ্ট পরিমন্ডলে একটি সংহত সমাজ মানস থেকে লোকসাহিত্যের জন্ম হয়।
যে সমাজে মানুষের ভাষা আছে, ভাব আছে, আবেগ-কল্পনা আছে, সৃষ্টি ও প্রকাশের ক্ষমতা আছে, সে সমাজের মানুষ লোকসাহিত্যের অধিকারী হয়। অক্ষরজ্ঞান ও শিক্ষা না থাকায় তারা তাদের সৃষ্টিকে লিপিবদ্ধ করতে পারেনা, কেবল স্মৃতির উপর নির্ভর করে বিশাল জনগোষ্ঠী এই বিচিত্রশ্রেণীর ও বিপুল আয়তনের সাহিত্য ভান্ডারকে লালন ও বহন করে। লোকসাহিত্য স্বতঃফূর্ত, কৃত্রিমতা বর্জিত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চল একটি ক্ষুদ্র জনপদ। আয়তনে ক্ষুদ্র হলেও এ অঞ্চলটি লোকসাহিত্যের বিভিন্ন উপাদানে সমৃদ্ধ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রহনপুর তথা গোমস্তাপুর উপজেলার এই এলাকা ৭ নং সেক্টরের অধীন ছিল। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৯৭১ এ পাকিস্তানি বাহিনী তাদের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলো।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নামটি সাম্প্রতিকালের। জেলাবাসীর দাবির মুখে ২০০১ সালের ১লা আগস্ট সরকারিভাবে নবাবগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাখা হয়। পূর্বে এই এলাকা 'নবাবগঞ্জ নামে পরিচিত ছিল।
কালাই রুটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় খাবার৷ এটি পুষ্টিকর ও মুখরোচক খাবারও বটে। এক সময় কালাই এর সহজলভ্যতার কারণে এই অঞ্চলে এই রুটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। এই এলাকার প্রত্যেক মেয়েই জানে জানে কীভাবে এই রুটি বানাতে হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত, কারণ গ্রীষ্মকালীন এই ফলটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অর্থনীতির প্রধান উৎস।
রাজধানী ঢাকা থেকে ৩২০ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং রাজশাহী থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অবস্থিত।