বাংলাদেশের বর্তমান ভৌগোলিক সীমানায় চায়ের বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু হয় আজ থেকে ১৫০ বছর আগে। ১৮৫৪ সালে সিলেট শহরের মালনিছড়ায় বাংলাদেশের প্রথম চা-বাগান প্রতিষ্ঠিত হয় । তারপর শ্রীমঙ্গলের বিস্তির্ণ এলাকাজুড়ে চা বাগান প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরে ধীরে ধীরে বৃহত্তর সিলেট ও চট্রগ্রাম এলাকায় বিস্তৃত হয় চায়ের ভূবন। একশত বছরেরও পুরোন এই চা শিল্পকে বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থন দেয়ার লক্ষ্যে পাকিস্তান সরকার ১৯৫৭ সালে পাকিস্তান চা গবেষণা প্রতিষ্ঠান (পিটিআরএস) স্থাপন করে। তবে তা খুব একটা কার্যকরী হয়নি। প্রতিষ্ঠার সময়কালে শীর্ণকায় এ গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অফিসার ও সাধারণ কর্মচারীদের সংখ্যা ছিল অত্যন্ত সীমিত। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা পূর্বকালে ৪২৬৮৮ হেক্টর জমি চা আবাদী এলাকার আওতায় চলে আসে।
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার স্বাধীন হওয়ার প্রায় দেড় বছরের মধ্যে রাষ্ট্রের চা শিল্পকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর উত্তরোত্তর উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা ইনষ্টিটিউটএ রূপান্তর করে। এর নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিটিআরআই)।বিটিআরআই এর মাধ্যমে অধিক ফলন ও মানসম্মত চা পাওয়ার লক্ষ্যে ছাঁটাই, চয়ন, রোপণ দূরত্ব ইত্যাদির উন্নতকরণ সম্ভব হয়েছে। এছাড়া চা প্রক্রিয়াজাত করণ পদ্ধতির আধুনিকায়ন, চায়ের বিকল্প ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে এখানে পবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত এই বাংলাদেশ চা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে প্রস্তুত চায়ে বালাইনাশক বা অন্য কোন ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি নিরূপণের জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে রেসিডিউ এনালাইটিক্যাল গবেষণাগার স্থাপন করা হয়েছে। প্রায় দেড় শ বছরের পুরোনো বাংলাদেশের এই প্রাকৃতিক পরিবেশসমৃদ্ধ চা শিল্পের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি যাতে নতুন প্রজন্ম ধরে রাখতে পারে সে লক্ষ্যে টি মিউজিয়াম বা চা জাদুঘর স্থাপন করেছে চা বোর্ড। ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৯ এ বাংলাদেশ চা বোর্ড এই চা জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়। ব্রিটিশ আমলে চা-বাগানগুলোতে ব্যবহূত বিভিন্ন সামগ্রী সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মের সঙ্গে এ শিল্পের ঐতিহ্যের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য দেশের চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলে স্থাপিত
হয়েছে চা জাদুঘর। জাদুঘরের জন্য এ পর্যন্ত ব্রিটিশ আমলে চা-বাগানে ব্যবহৃত প্রায় শতাধিক আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্বাধীনতার আগে চা বোর্ডের দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যবহূত চেয়ার-টেবিলও। এখনে থাকবে চায়ের উপকারিতা, চায়ের আবিষ্কার কাহিনীসহ চায়ের এ পর্যন্ত বাংলাদেশে উদ্ভাবিত সকল প্রকার বিটি ক্লোনের উপস্থিতি। শ্রীমঙ্গল উপজেলার টি রিসোর্টের তিনটি কক্ষে এখন চা জাদুঘর করা হয়েছে। প্রথম দিকে রিসোর্টের একটি ভবনের তিনটি ঘর নির্ধারণ করে সে ঘরগুলোয় সংগৃহীত প্রাচীন এসব জিনিসপত্র আনার কাজ চলে। পরবর্তীতে চা শ্রমিকদের জন্য ব্যবহূত বিশেষ কয়েন, ঘড়ি, ১৯৫৭-৫৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। আর সেই সুবাদে তিনি এসেছিলেন শ্রীমঙ্গলের নন্দবানী চা বাগানে। তৎকালিন সময়ে বঙ্গবন্ধু যে চেয়ারে বসে মিটিং করেছিলেন সেই চেয়ার ও টেবিল, পাথর হয়ে যাওয়া আওয়াল গাছের খণ্ড, ব্রিটিশ আমলের ফিলটার, ফসিল, কম্পাস, চা গাছের মোড়া ও টেবিল, তীর-ধনুকসহ নাম না-জানা আরও কিছু সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এখনো সংগ্রহের কাজ বন্ধ হয়নি। এই অঞ্চলের গৌরবান্বিত চা শিল্পের ইতিহাস ধরে রাখার জন্যই এত সকল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কারণ ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে চা উৎপাদ করার পরিকল্পনা রয়েছে ।
বর্তমানে শ্রীমঙ্গলে রয়েছে ৪০ টি চা-বাগান। যা ৪৫,৫৩৮ একর ( ১৮৪.২৯ বর্গ কিলোমিটার) এলাকা জুড়ে অবস্থান করছে।
জৈন্তাপুর উপজেলায় ইউনিয়ন ৬টি ,
ইউনিয়নসমূহ:
পাহাড়-টিলায় বেস্টিত জৈন্তাপুর উপজেলা সারী নদী এবং বরগাং উল্লেখযোগ্য দুটি নদী। এছাড়াও জৈন্তাপুর উপজেলাধীন হরিপুর এ কাপনা নদী অবস্থিত। সারী নদীর অপার সৈন্দর্য্য দেখতে প্রতিদিন হাজারও দর্শক সারীঘাট নামক এলাকায় ভীড় জমান।
চা শিল্পের জন্য শ্রীমঙ্গলের সুনাম ও পরিচিতি বিশ্বব্যাপী। ৪২৫ দশমিক ১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ জনপদের সাথে রেল ও সড়কপথে যোগাযোগ রয়েছে সারাদেশের। চা, রাবার, লেবু, পান, আনারস ও মূল্যবান কাঠের জন্য শ্রীমঙ্গলের খ্যাতি ব্যাপক। দেশি-বিদেশি পর্যটকের পদভারে সারাবছর মুখরিত থাকে।
কুলাউড়া, চা শিল্পের জন্য বিখ্যাত। মৌলভীবাজার জেলায় চা বাগানের সংখ্যা অনুপাতে শ্রীমঙ্গল উপজেলার পরে কুলাউড়ার অবস্থান। কুলাউড়ায় রাবার, কমলা, আনারস, আম, কাঁঠাল এবং বাঁশ উৎপাদিত হয়।
কুলাউড়ায় পাক বাহিনীর প্রবেশ ও নির্মম গণহত্যা: সারা বাংলায় পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা অত্যাচার নিপীড়ন শুরু করলেও কুলাউড়া থানায় তারা প্রথম আসে ৭ মে ১৯৭১ সালে। পাকিস্তানি সৈন্যেরা মৌলভীবাজার থেকে কুলাউড়া প্রবেশ পথে কাপুয়া ব্রিজের কাছাকাছি আসলে তাদের গতিরোধ করতে অকুতোভয় বীর সৈনিক জয়চন্ডী