শ্রীমঙ্গলের অধিবাসী জনগোষ্ঠী মিশ্র প্রকৃতির। যার অধিকাংশই জন্মসূত্রে শ্রীমঙ্গলি। আবার জন্মসূত্রে শ্রীমঙ্গলিদের বড় একটা অংশ প্রবাসী। সেই সুবাদে শ্রীমঙ্গলে চাকরির আসন খালি থাকায় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী শ্রীমঙ্গলে এসে পাড়ি জমিয়েছে। তাছাড়া ঐতিহাসিক ভাবে বাংলাদেশের বাইরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী শ্রীমঙ্গলে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
২০১১ সালের আদমশুমার প্রতিবেদন অনুযায়ী শ্রীমঙ্গলের জনসংখ্যা ৩,২৪,৫৯৬জন এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে৭৪৮ জন (১৯৩৭.৪/বর্গমাইল)। সক্ষম দম্পতির সংখ্যা ৫৮৯৪৮জন। যার ৭৭.৩৪ ভাগ দম্পত্তিই গ্রহণ করছেন জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি।তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অত্যন্ত উচ্চ। শ্রীমঙ্গলে প্রতিবছর বাড়ছে ২.১৭% হারে।কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ উচ্চহারের অন্যতম কারণ শ্রীমঙ্গলে প্রতিনিয়তই দেশের অনান্য জেলা ও উপজেলা থেকে নতুন নতুন অধিবাসীরা জীবিকা অন্বেষণে বা অন্যান্য কারণে স্থায়ী আবাসন গড়ে তুলেন।
২০০১ সালে শ্রীমঙ্গল উপজেলার মোট জনসংখ্যা ছিল ২৭৮৩২৩ জন। যার মধ্যে ১৪৩০৩৩ জন পুরুষ ও ১৩৫১৯৯ জন নারী। শ্রীমঙ্গলের প্রায় অর্ধেক অঞ্চল জুড়ে রয়েছে চা বাগান। এই সকল চা বাগানে শ্রীমঙ্গলের জনসংখ্যার বিরাট একটা অংশ কাজ করছে। তবে চা বাগানের কর্মচারীদের বেশিরভাগই অবাঙালি। ব্রিটিশ আমলে চা উৎপাদনের জন্য তাদেরকে মধ্য ভারত থেকে বাংলার ভূখণ্ডে আনা হয়েছিল। বাংলাদেশের চা বাগানে ৩,০০,০০০ অধিক বাগানি কর্মরত আছে। যার ৭৫% নারী। অনেক শ্রমিকই উপজাতি বাসিন্দা যাদের ব্রিটিশ শাসনামলে মধ্য ভারত থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল।
শ্রীমঙ্গলের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরত স্বতন্ত্র স্বত্বার উপজাতি জনগোষ্ঠী খাসিয়া, মণিপুরী, টিপরা ও গারোদের জীবনাচার, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সাধারণ বাঙালীর থেকে ভিন্ন। আবার ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ভাগ্যচন্দ্রের শাসনামলে মনিপুর রাজপুরুষ মোয়রাং থেম গোবিন্দের নেতৃত্বে একদল মনিপুরী মনিপুর রাজ্য ছেড়ে শ্রীমঙ্গলের খাসগাওয়ের রামনগরে এসে আবাস গড়েন।খাসগাওয়ে রয়েছে মোয়রাং থেম গোবিন্দের স্মৃতিস্তম্ভের ধ্বংসাবশেষ, যা একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর রয়েছে স্বতন্ত্র কৃষ্টি, সভ্যতা, ভাষা-সংস্কৃতি, আচার-আচরণ। তাছাড়া শ্রীমঙ্গল খাসিয়া নামক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরও আবাস্থল। শ্রীমঙ্গলের মাগুরছড়ায় পাহাড়ের ওপর বিশেষভাবে নির্মিত ঘরে তারা দলবদ্ধভাবে বাস করছে।
জৈন্তাপুর উপজেলায় ইউনিয়ন ৬টি ,
ইউনিয়নসমূহ:
পাহাড়-টিলায় বেস্টিত জৈন্তাপুর উপজেলা সারী নদী এবং বরগাং উল্লেখযোগ্য দুটি নদী। এছাড়াও জৈন্তাপুর উপজেলাধীন হরিপুর এ কাপনা নদী অবস্থিত। সারী নদীর অপার সৈন্দর্য্য দেখতে প্রতিদিন হাজারও দর্শক সারীঘাট নামক এলাকায় ভীড় জমান।
চা শিল্পের জন্য শ্রীমঙ্গলের সুনাম ও পরিচিতি বিশ্বব্যাপী। ৪২৫ দশমিক ১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ জনপদের সাথে রেল ও সড়কপথে যোগাযোগ রয়েছে সারাদেশের। চা, রাবার, লেবু, পান, আনারস ও মূল্যবান কাঠের জন্য শ্রীমঙ্গলের খ্যাতি ব্যাপক। দেশি-বিদেশি পর্যটকের পদভারে সারাবছর মুখরিত থাকে।
কুলাউড়া, চা শিল্পের জন্য বিখ্যাত। মৌলভীবাজার জেলায় চা বাগানের সংখ্যা অনুপাতে শ্রীমঙ্গল উপজেলার পরে কুলাউড়ার অবস্থান। কুলাউড়ায় রাবার, কমলা, আনারস, আম, কাঁঠাল এবং বাঁশ উৎপাদিত হয়।
কুলাউড়ায় পাক বাহিনীর প্রবেশ ও নির্মম গণহত্যা: সারা বাংলায় পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা অত্যাচার নিপীড়ন শুরু করলেও কুলাউড়া থানায় তারা প্রথম আসে ৭ মে ১৯৭১ সালে। পাকিস্তানি সৈন্যেরা মৌলভীবাজার থেকে কুলাউড়া প্রবেশ পথে কাপুয়া ব্রিজের কাছাকাছি আসলে তাদের গতিরোধ করতে অকুতোভয় বীর সৈনিক জয়চন্ডী