The Ballpen
সাপাহার উপজেলার ইতিহাস ও নামকরণ - theballpen

সাপাহার উপজেলার ইতিহাস ও নামকরণ

15th Dec 2022 | নওগাঁ জেলা |

নওগাঁ জেলার সীমান্ত ঘেঁষা এ উপজেলাটির নাম সাপাহার উপজেলা। সাপাহার নামকরণের নিখুঁত কোন ইতিহাস খুঁজে পাওয়া না গেলেও এলাকার একাধিক প্রবীণ ব্যক্তিদের নিকট থেকে জানা গেছে ব্রিটিশ শাসনামলে এই এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা ছিল। তৎকালে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে শম্পা রানী নামে এক সুন্দরী বাঈঝি তার নাচগানে এলাকাকে মাতিয়ে রেখেছিল। অনাকাঙ্খিত ভাবে সে সময়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের এক সুফি সাধক সেই শম্পারাণীর প্রেমে পড়ে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তখন হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যকার এই প্রেম কিছুতেই মেনে নিতে না পারায় অবশেষে বাঈঝি শম্পাকে প্রেমের দায়ে সমাজচ্যুত হয়ে মৃত্যু বরণ করতে হয়। বাঈঝি শম্পার মৃত্যুতে প্রেমিক সুফি সাধক পাগল হয়ে যায় এবং বাঈঝি শম্পার নাম কাগজে লিখে হার বানিয়ে গলায় পরিধান করে ঘুরে বেড়ায়। পরবর্তীতে পাগল সুফি সাধকের ও মৃত্যু হলে উপজেলা সদর ঈদগাহ সংলগ্ন এলাকায় তাকে কবরস্থ করা হয়।

মুসলিম সম্প্রদায়ের সুফি সাধক ও হিন্দু সম্প্রদায়ের শম্পা রাণীর প্রেমের ইতিহাসকে স্মরণীয় করে রাখতে এলাকার নাম হয় শম্পাহার। কালের আবর্তনে সেই শম্পাহার থেকেই বর্তমান সাপাহার, যা এখন আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়ায় সাজানো গোছানো এক মিনি শহর। এছাড়া অনেকের মতে সাপাহার এর নাম করণের ইতিহাস ভিন্ন। কাহারো মতে প্রাচীন কালে এখানে এক উপজাতি বাস করত আর তাদের খাদ্য তালিকায় প্রাধান্য পেত বরেন্দ্র এই অঞ্চলের গুই সাপ। তারা এই গুই সাপ গুলিকে নির্বিচারে ধরে খেত এবং তার চামড়া দিয়ে সুন্দর সুন্দর মানিব্যাগ ও তাদের বাচ্চাদের গলার হার তৈরী করত মূলত সেই থেকেই এই স্থানের নামকরণ হয়েছে সাপাহার। ২৪৪.৪৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মধ্যে ১৩৯টি মৌজার উপজেলাটিতে গ্রাম রয়েছে ২৩২টি।

এ উপজেলার লোক সংখ্যা ২০১১ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী ১লক্ষ ৪৯ হাজার ৯৬ জন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান শাসনামলে উপজেলাটি পোরশা থানার অর্ন্তভূক্ত ছিল। এর পর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে আয়তন ও জনসংখ্যার দিক দিয়ে নওগাঁ জেলার দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম উপজেলা ১৯৮৩ সালের ২ জুলাই হতে মানউন্নীত সাপাহার থানা হিসেবে যাত্রা শুরু করে। সাপাহার উপজেলা বাসীর শিষ্টাচার ও উন্নত মন মানষিকতায় উন্নয়নের দিক হতে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি সাপাহার থানাকে। সাপাহার থানা-উপজেলা এখন নওগাঁ জেলার একটি সুন্দর ও উন্নত উপজেলা।

উপজেলার ঐতিহ্য হিসেবে এখনে রয়েছে প্রায় এক হাজার একর আয়তনের একটি বিশাল জলাশয় যার নাম ঐতিহ্যবাহী জবই বিল পূর্ব নাম ডমরইল যা কালের বিবর্তনে জবাই বিল নামকরণ হয়েছে। উপজেলার আইহাই ও শিরন্টি ইউনিয়নকে উপজেলা সদর হতে দুইভাগে বিভক্ত করে রেখেছে এই বিল। গত আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনামলে আইহাই ও পাতাড়ী এ দু'ইউনিয়নের সাধারণ জনগনের দুর্দশার কথা চিন্তা করে তৎকালীন সরকার বিলের উপর ৫০০ মিটার এপ্রোচ সংযোগ সড়ক সহ ২০০ মিটার একটি ব্রীজ নির্মাণ করেন।

প্রাচীন কালে শীতকালে ঐতিহ্যবাহী এই বিলে সুদুর সাইবেরিয়া হতে অসংখ্য অতিথি পাখি আসত এবং রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে পাখি শিকারীরা এইবিলে পাখি শিকার করতে আসত বলে অনেক জনশ্রুতি রয়েছে। জেলার শস্য ভান্ডার নামে খ্যাত ছোট্ট পরিসরের উপজেলাটির পূর্বে পত্নীতলা উপজেলা উত্তরে ও পশ্চিমে ভরত এবং দক্ষিণে পোরশা উপজেলা। উপজেলার পশ্চিম এলাকা ভারত সীমান্তের কোল ঘেঁষে বয়ে গেছে পূর্নভবা নদী। এক কালে এ নদী দিয়ে ব্যবসায়ীদের বড় বড় মাল বোঝাই নৌকা দেশের দিনাজপুর,রহনপুর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ ও রাজশাহী শহরে তাদের ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করত। বহু পূর্বে এ উপজেলায় যাতায়াতের তেমন কোন ব্যবস্থা ছিলনা। সর্বত্রই কাঁচা কর্দমাক্ত রাস্তা এসব রাস্তা দিয়েই মানুষ অতি কষ্টে চলাচল করত।

আধুনিক সভ্যতার যুগে আস্তে আস্তে এখন প্রায় সর্বত্রই সভ্যতার ছোঁয়া লেগে রাস্তা ঘাটের উন্নতি হয়েছে। সুদুর জেলা সদর হতে মহাদেবপুর, এবং জয়পুর হাট হতে পত্নীতলায় মিলিত হয়ে একটি প্রধান রাস্তা এ উপজেলার উপর দিয়ে পোরশা উপজেলা হয়ে চাঁপাই নবাবগঞ্জের রহনপুর এবং রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও রাজশাহী শহরে চলে গেছে।





Related

নওগাঁ জেলার আয়তন কত বর্গ কিলোমিটার?

নওগাঁ জেলার আয়তন ৩,৪৩৫.৬৭ বর্গকিলোমিটার।



Related

নওগাঁ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত?

নওগাঁ জেলা চাল এবং সন্দেশ এর জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও কসুম্বা মসজিদ এবং রঘুনাথ মন্দির এই দুটি স্থান এর জন্য বিখ্যাত।



Related

নওগাঁ জেলা বিখ্যাত খাবার কী?

নওগাঁ জেলার বিখ্যাত খাবার ‘প্যারা সন্দেশ’নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী ‘প্যারা’ সন্দেশের সুখ্যাতি এখন বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে বিদেশেও। শুরুতে পূজা মণ্ডপের দেব-দেবীর উপাসনার উদ্দেশে এই সন্দেশ তৈরি করা হলেও সময়ের স্রোতে এখন তা অতিথি আপ্যায়ন, আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে পাঠানো বা নিয়ে যাওয়া মর্যাদার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি কেজি সন্দেসের মূল্য ৩০০ টাকা। নওগাঁর এই ঐতিহ্যবাহী সন্দেশ এখন দেশের বাইরেও বেশ সুনাম অর্জন করছে।

কবে থেকে নওগাঁর ‘প্যারা’ সন্দেশের প্রচলন শুরু হয়েছে তা সুস্পষ্টভাবে জানা না গেলেও সংশ্লিষ্টদের ও গবেষকদের ধারণা মতে, নওগাঁয় প্রায় একশ’ বছরের অধিক কাল আগে থেকে প্যারা সন্দেশ তৈরী হয়ে আসছে। জানা গেছে, শহরের কালীতলা এলাকায় শ্রী শ্রী বুড়ী কালী মাতা মন্দিরের কাছে শত বছর আগে থেকে এই ‘প্যারা’ সন্দেশ তৈরী হয়ে আসছে। এই সন্দেশ পূজারীরা পূজা মন্ডপের দেবদেবীর উপাসনায় ভোগ দিয়ে থাকনে।

নওগাঁ শহরের কালীতলা পূজা মণ্ডপের প্রধান গেট সংলগ্ন এলাকায় ছোট ছোট কয়েকটি মিষ্টান্নের দোকান রয়েছে। এগুলোকে বলা হয় ভোগের দোকান। দেবীর আরাধনায় মিষ্টান্নর প্রয়োজনেই প্রায় শত বছর আগে এই দোকানিরাই প্রথম তৈরি করেন বিখ্যাত প্যারা সন্দেশ। কিন্তু পরবর্তীতে এই সন্দেশ শুধু দেবীর আরাধনার মধ্যেই সীমাবন্ধ থাকেনি।

সুস্বাদু আর পুষ্টিগুনের কারণে এই সন্দেশ এখন বিখ্যাত। জানা যায়, হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তগণ প্রায় সারা বছরই বিভিন্ন পূজা-অর্চনা করতে এখানে আসেন এবং পূজারীরা মন্দিরে ভোগ দিয়ে থাকেন। এই ভোগের প্রয়োজন মেটাতে শহরের কালীতলায় শত বছর আগে ছোট ছোট মিষ্টির দোকান গড়ে ওঠে। এসব দোকান থেকে প্রয়োজনীয় মিষ্টি জাতীয় দ্রব্যাদি কিনে নিয়ে পূজারীরা মন্ডপে দেবীর অর্ঘ্য হিসেবে ভোগ দিয়ে থাকেন।

জনশ্রুতি রয়েছে, ভারতের বিহারের কোনো এক নবাবের মিষ্টি তৈরির কারিগর ছিলেন মহেন্দ্রী দাস। নবাব এক যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হওয়ার পর ওই ব্যক্তি প্রাণ ভয়ে নওগাঁ শহরের কালীতলা্ এলাকায় বসতি গড়ে জীবিকার তাগিদে ‘প্যারা’ সন্দেশ তৈরি করে মন্দিরে বিক্রি শুরু করেন। পরে সেখানেই ছোট্ট একটা মিষ্টির দোকান খুলে বসেন। শত বছর আগে তখন কালীতলা এলাকায় জনবসতি ছিল না বললেই চলে। মহেন্দ্রীর মৃত্যুর পর তার ছেলে ধীরেন্দ্রনাথ দাস দোকানের দায়িত্ব নেন।

সেই সময় বিমল মহন্ত নামে মিষ্টি তৈরির এক কারিগরের হাতের স্পর্শে ‘প্যারা’ সন্দেশের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। জানা গেছে, ভারত, কুয়েত, সৌদি আরব, তুরস্ক, মালয়েশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের ক্রেতারা এখান তেকে প্যারা সন্দেশ নিয়ে যাচ্ছেন। পুষ্টিগুণ আর স্বাদ ও মানের দিক থেকে এই প্যারা সন্দেশ অতুলনীয়।’



Related

নওগাঁ জেলা

নওগাঁ জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। উপজেলার সংখ্যানুসারে নওগাঁ বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা।[২] নওগাঁ জেলা ভৌগোলিকভাবে বৃহত্তর বরেন্দ্র ভূমির অংশ। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমভাগে বাংলাদেশ-ভারত আন্তর্জাতিক সীমারেখা সংলগ্ন যে ভূখণ্ডটি ১৯৮৪ সালের ১লা মার্চের আগ পর্যন্ত নওগাঁ মহকুমা হিসেবে গণ্য হতো, তা-ই হয়েছে বর্তমান বাংলাদেশের নওগাঁ জেলা।



Related

নওগাঁ জেলার ইতিহাস

নওগাঁ শব্দর উৎপত্তি হয়েছে ‘নও’ (নতুন -ফরাসী শব্দ ) ও‘ গাঁ’ (গ্রাম ) শব্দ দু’টি হতে। এই শব্দ দু’টির অর্থ হলো নতুন গ্রাম। অসংখ্য ছোট ছোট নদীর লীলাক্ষেত্র এ অঞ্চল। আত্রাই নদী তীরবর্তী এলাকায় নদী বন্দর এলাকা ঘিরে নতুন যে গ্রাম গড়ে উঠে, কালক্রমে তা-ই নওগাঁ শহর এবং সর্বশেষ নওগাঁ জেলায় রুপান্তরিত হয়। নওগাঁ শহর ছিল রাজশাহী জেলার অন্তর্গত। কালক্রমে এ এলাকাটি গ্রাম থেকে থানা এবং থানা থেকে মহকুমায় রুপ নেয়। ১৯৮৪ এর ১ মার্চ- এ নওগাঁ মহকুমা ১১টি উপজেলা নিয়ে জেলা হিসেবে ঘোষিত হয়।

বাংলাদেশ উত্তর -পশ্চিমভাগ বাংলাদেশ - ভারত আন্তর্জাতিক সীমা রেখা সংলগ্ন যে ভূখন্ডটি ১৯৮৪ খ্রিঃ এর ১ মার্চের পূর্ব পর্যন্ত অবিভক্ত রাজশাহী জেলার অধীন নওগাঁ মহকুমা হিসেবে গণ্য হতো, তাই এখন হয়েছে নওগাঁ জেলা। নওগাঁ প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন ভূক্ত অঞ্চল ছিল। অন্য দিকে এটি আবার বরেন্দ্র ভূমিরও একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ । নওগাঁর অধিবাসীরা ছিল প্রাচীন পুণ্ড্র জাতির বংশধর। নৃতাত্ত্বিকদের মতে, পুন্ড্ররা বিশ্বামিত্রের বংশধর এবং বৈদিক যুগের মানুষ। মহাভারত্র পুণ্ড্রদের অন্ধ ঋষি দীর্ঘতমার ঔরষজাত বলি রাজার বংশধর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার কারো মতে, বাংলার আদিম পাদদর বংশধর রুপে পুন্ড্রদের বলা হয়েছে। এদিক দিয়ে বিচার করলে নওগাঁ যে প্রাচীন জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল ছিল তা সহজেই বলা যায়।

নওগাঁ জেলায় আদিকাল হতেই বৈচিত্রে ভরপুর। ছোট ছোট নদী বহুল এ জেলা প্রাচীনকাল হতেই কৃষি কাজের জন্য প্রসিদ্ধ। কৃষি কাজের জন্য অত্যন্ত উপযোগী এলাকার বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ে অসংখ্য জমিদার গোষ্ঠী গড়ে উঠে। এ জমিদার গোষ্ঠীর আশ্রয়েই কৃষি কাজ সহযোগী হিসেবে খ্যাত সাঁওতাল গোষ্ঠীর আগমন ঘটতে শুরু করে এ অঞ্চলে। সাঁওতাল গোষ্ঠীর মতে এ জেলায় বসবাসরত অন্যান্য আদিবাসীদের মধ্যে মাল পাহাড়িয়া, কুর্মি, মহালী ও মুন্ডা বিশেষভাবে খ্যাত। নানা জাতি ও নানা ধর্মের মানুষের সমন্বয়ে গঠিত নওগাঁ জেলা মানব বৈচিত্র্যে ভরপুর। অসংখ্য পুরাতন মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও জমিদার বাড়ি প্রমাণ করে নওগাঁ জেলার সভ্যতার ইতিহাস অনেক পুরাতন।