নামকরনঃ- সীতাকুন্ডের নামকরন সম্পর্কে অনেক কিংবদন্তী আছে। ইতিহাসের দৃষ্টিকোন থেকে নামকরনের সত্যতা সম্পর্কে জোরালোভাবে কিছু বলা যাবে না। হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে মনে করেন রামায়ন বর্ণিত সীতা এখানে আগমন করেন এবং একটি কুন্ডে স্নান করেন ।সেই হতে সীতাকুন্ডে নামের উৎপত্তি।কারো কারো মতো রাম স্বয়ং তার পত্নীর নামেই সীতাকুন্ড নাম করন করেন। আবার কেহ কেহ মনে করেন দক্ষ রাজার মহাযজ্ঞের সময় ক্ষিপ্ত উম্মত্ত শিব তার পত্নী সতীর শবদেহ খন্ড বিখন্ড করেন এবং তার নামানুসারে সীতাকুন্ড কালের বির্বতনে বিকৃত হয়ে সীতাকুন্ড হয় ।অর্থ্যাৎ হিন্দু ধর্মের পুরাণিক উপাখ্যানে নারদ মুনির ভূমিকা সর্বজন বিদিত। নারদ মুনির ভূমিকা থেকে স্পষ্ট হয় যে দক্ষরাজার কন্যা পার্বতী মা বাবার অগোচরে ভালবেসে বিয়ে করেন শিবকে এতে রাজা ক্ষিপ্ত হয়ে এিভূবনের সবাইকে আমন্ত্রন জানালেন।সেখানে শিবকে অপদস্ত করার জন্য তার মূর্তি বানিয়ে রাজপ্রাসাদের তোরনের বাহিরে প্রহরী হিসাবে রাখা হল।নারদ মুনি থেকে পার্বতী একথা জানতে পেরে নিজেই প্রত্যক্ষ করলেন এবং লজ্জায় অপমান দেহত্যাগ করলেন। পার্বতী বেচে নেই জেনে উম্মত্তপ্রায় শিব পার্বতীর মৃতদেহ মাথায় নিয়ে প্রলয় নাচন শুরু করলেন। এক পর্যায়ে বাহান্ন খন্ডে খন্ডিত পার্বতীর দেহ বাহান্ন স্থানে নিক্ষিপ্ত হয়ে বাহান্নটি তীর্থ কেন্দ্রের উদ্ভব হয়। তম্মধ্যে সীতাকুন্ডও একটি। সতী পার্বতীর উরুসন্ধীর অংশ এখানে নিক্ষিপ্ত হয়েছে বলে কথিত আছে। তবে হিন্দু ও তান্ত্রিক গ্রন্থগুলোতে সীতাকুন্ডের নাম সুস্পষ্ট নয়।এসব উপাখ্যান বৃটিশদের দলিল দস্তাবেজের মাধ্যমে জানা যায়।
আরও একটি তথ্য পাওয়া যায় এভাবে যে, পিতৃ আদেশে শ্রীরামচন্দ্র পত্নী সীতা দেবী ও কনিষ্ঠ ভ্রাতা লক্ষনকে নিয়ে বনবাসী হন এবং এখানে কিছুদিন অবস্থান করেন । সে সুবাধে তাদের নামানুসারে স্বয়ম্ভুনাথ মন্দিরের পাদদেশে রামকুন্ড, লক্ষণকুন্ড,সীতাকুন্ড নামে তিনটি কুন্ড এবং একটি সীতার মন্দির ও বিদ্যামান ।
১৭৬১ সালের ৫ জানুয়ারী চট্টগ্রামের প্রথম ইরেজ চীফ নিযুক্ত হন হ্যারী(-) যাত্রা বিরতিকালে সীতাকুন্ড ক্যাম্প হতে পোর্ট উইলিয়ামের নিকট তিনি যে চিঠি লিখেন তাতে সীতাকোন নামে উল্লেখ দেখা যায়।
সীতাকুন্ড বঙ্গভারতের হিন্দুদের পূণ্যভুমি তীর্থস্থান হিসেবে খ্যাত । প্রতি বৎসর শিবচতুর্দশী মেলা উপলক্ষে ভারত ,বাংলাদেশ ও বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য তীর্থ যাত্রীর সমাগম ঘটে সীতাকুন্ডে পূন্যতা লাভের জন্য ।
চট্টগ্রাম জেলার মোট আয়তন ৫,২৮২.৯২ বর্গ কিলোমিটার (১,৩০৫,৪৩৮ একর)। আয়তনের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা।
চট্টগ্রাম জেলার মোট জনসংখ্যা ৯১,৬৩,৭৬০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪৫,৬৬,০৩৯ জন এবং মহিলা ৪৫,৯৭,০৭৬ জন এবং বাকি ৬৪৫ জন হিজড়া । জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১৭০০ জন।(২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী)
চট্টগ্রামের ধর্মবিশ্বাস-২০২২
ইসলাম (৮৭.৪৭%)
হিন্দু ধর্ম (১০.৭০%)
বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্ম (১.৮৩%)
ধর্মবিশ্বাস অনুসারে এ জেলার মোট জনসংখ্যার ৮৭.৪৭% মুসলিম, ১০.৭০% হিন্দু এবং ১.৮৩% বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে ২১°৫৪´ থেকে ২২°৫৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১৭´ থেকে ৯২°১৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে চট্টগ্রাম জেলার অবস্থান। রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ২৫৯ কিলোমিটার। এ জেলার দক্ষিণে কক্সবাজার জেলা; পূর্বে বান্দরবান জেলা, রাঙ্গামাটি জেলা ও খাগড়াছড়ি জেলা; উত্তরে ফেনী জেলা এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং পশ্চিমে নোয়াখালী জেলা ও বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। এছাড়া দ্বীপাঞ্চল সন্দ্বীপ চট্টগ্রামের অংশ।
১৬৬৬ সালে চট্টগ্রাম জেলা গঠিত হয়। তিন পার্বত্য জেলা এ জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৬০ সালে পার্বত্য এলাকা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা গঠন করা হয়। পরবর্তীতে এ জেলা ভেঙ্গে কক্সবাজার জেলা গঠিত হয়।
১৬৬৬ সালে চট্টগ্রাম জেলা গঠিত হয়। তিন পার্বত্য জেলা এ জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৬০ সালে পার্বত্য এলাকা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা গঠন করা হয়।