The Ballpen
কলারোয়া উপজেলার পটভূমি - theballpen

কলারোয়া উপজেলার পটভূমি

16th Dec 2022 | সাতক্ষীরা জেলা |

উপমহাদেশের ইতিহাস কলারোয়ার স্থান অত্যন্ত গৌরবজনক বিধায় কলারোয়া বাংলাদেশের দেশপ্রমিক সচেতন মানুষের নন্দিত জনপদ। কলারোয়ার নামকরণের ইতিহাস প্রবীণদের কাছ থেকে ও বিভিন্ন তথ্য উদ্‌ঘাটনের মাধ্যমে জানা যায় যে, ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বর্তমান কলারোয়ার পশুহাটের উত্তর-পশ্চিম পার্শ্বে মিলঘরের পিছনে ইংরেজদের নীল কুঠি ছিল। অত্যাচারী নীলকর সাহেবদের বল্গাহীন নির্যাতন ও শোষণের সময় জমিদার রাণী রাশমনির নায়েব ছিল শ্রী মোহন ঘটক। হোসেনপুর পরগণার জমিদার কলিকাতা কর্পোরেশন স্ট্রীটে বসবাসকারী রানী রাশমনির কাছে একদা নায়েব শ্রী মোহন ঘটক হিসাব নিকাশ দাখিল করার জন্য উপস্থিত হন।

রানী রাশমনির বড় মেয়ে রানী জগদম্বাও মায়ের সাথে কলিকাতায় পিতৃগৃহে একত্রে বসবাস করতেন। এদিকে নীলকর সাহেবদের অমানুষিক ও অসহ্য নির্যাতন ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকার বিশেষ বিশেষ লোকজন ও কৃষকরাও  নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের প্রতিকারের প্রার্থনা নিয়ে জমিদার রানী রাশমনির বাসভবনে উপস্থিত হন। এ সময় রানী জগদম্বাও উপস্থিত ছিলেন। রানী জগদম্বার নায়েব শ্রী মোহন ঘটকের দৃষ্টি আকর্ষন করে এর প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা এ যাবৎ গ্রহণ করা হয়েছে কি না জানতে চান। নায়েব শ্রী মোহন ঘটক নীলকর সাহেবদের এহেন চরম অত্যাচারকে মনে মনে ঘৃণা করতেন। কিন্তু মনোবল ও জনবলের অভাবে তিনি সরাসরি কিছু করতে পারতেন না। নায়েব একজন স্বাধীন্তা ব্যক্তি ছিলেন।

উপস্থিত বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিবর্গ এবং কৃষকরা নায়েব সাহেবের কাছে নীলকরদের অমানবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিকার ও প্রতিবাদের প্রার্থনা জানালেও কোন ফল হয়নি বলে জানান। কৃষকরা নায়েবের উপর দোষারোপ করেন। তখন রানী জগদম্বা নৈতিক সাহসের অভাব হেতু কাপুরুষতার জন্য নায়েব শ্রী মোহন ঘটককে তার মুখের উপর পুরুষ মানুষের পরিবর্তে "মেয়ে মানুষ" বলে আখ্যায়িত করেন। রানী জগদম্বার কাছ থেকে "মেয়ে মানুষ" উপাধি পেয়ে রাগে, ক্ষোভে, দুঃখে জেদি নায়েব শ্রী মোহন ঘটক মনে মনে দৃড় সংকল্প নিয়ে হোসেনপুর (বর্তমান কলারোয়া) ফিরে এলেন।

এবার তিনি বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও কয়েক শত কৃষকদের নিয়ে পরিকল্পনা মোতাবেক একদা রাতে নীলকুঠিতে অতর্কিত হামলা ও আক্রমণ চালিয়ে নীলকুঠি ভবনটি সম্পূর্ন রুপে ভেঙ্গে চুরমার করে বিধধস্ত করলেন। ধংসাবশেষ পাশ্ববর্তি বেত্রাবর্তী নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হল। তার পর কয়েকখানা লাঙ্গল দিয়ে ঐ রাতেই নীনকুঠি ভবনের উপর চাষ করা হল। সঙ্গে সঙ্গে মই দিয়ে মাটি সমান করে অসংখ্য কলাগাছ রোপণ করা হল। রোপনকৃত কলাবাগানের প্রবৃদ্ধি দেখে সবাই মুগ্ধ হলেন এবং অধিক সংখ্যক নানা জাতের কলাগাছ সেখানে রোপণ করা হয়। কলাগাছ রোয়া থেকে প্রথমে হোসেনপুর কলারুয়া এবং আরও পরে কলারোয়া নামে পরিচিতির মাধ্যমে আর্তপ্রকাশ ঘটে। অসংখ্য কলাগাছ রোয়ার পর একই রাতে নায়েব শ্রী মোহন ঘটক তার দলবল সহ বত্রিশদাড়ি মাঝি মাল্লা নিয়ে ভোরে কলিকাতা কর্পোরেশনে স্ট্রীটে জমিদার রানী রাশমনির বাসভবনে উপস্থিত হলেন। নায়েব জমিদার রাশমনিকে ঘটনার বিস্তারিত জানালেন। জমিদার রানী রাশমনির তৎকালীন ছোট লাট ও বিভাগীয় কমিশনারকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঘটনাটি সম্যখ অবহিত করলেন। হোসেনপুরে নীলকুঠির অস্থিত্ব তখন সম্পূর্ন বিলীন হয়ে যাওয়ায় ব্রিটিশ সরকার হোসেন পুর (কলারোয়া) থেকে নীলকুঠি প্রত্যাহার করলেন। তবে নীল চাষ বন্ধ হয়নি।

পরবর্তীতে হোসেনপুরের নীলকর সাহেবরা নায়েব শ্রী মোহন ঘটক সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করে।জমিদার রানী রাশমনি, রানী জগদম্বা, ছোট লাট ও বিভাগীয় কমিশনার আদালতে সাক্ষি দিলেন। মামলার পক্ষে স্বাক্ষী যথাযত না পাওয়ায় অভিযোগ সত্য প্রমানিত হয়নাই। ফলে নীলকর সাহেবদের মামলার পরাজয় ঘটে। প্রকাশ থাকে পাকভারত উপমহাদেশ ইংরেজদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম কলারোয়া থানা পিছলাপোল ও কুশোডাঙ্গা গ্রামের চাষীরা নীলচাষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করে।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি- কপোতক্ষ, বেত্রবতী, ইছামতি, সোনাই, বিধৌত আম, জাম, নারিকেল, খেজুর, তরুরাজির অপরূপ সবুজ শ্যামলিমায় সমৃদ্ধ, বহু পীর কামেল ও আধ্যাত্মিক পুরুষের পূণ্যস্থান কেড়াগাছি যবন হরিদাসের জন্মস্থান। কৈশরের ক্রীড়া ক্ষেত্র, মানুষের স্বপ্ন রাজ্য ও কর্মস্থল, নীলবিদ্রহের পীঠস্থান, মুক্তিযুদ্ধীর অন্যতম দূর্ভেদ্য দূর্গ, জাতীয় ও আর্থ- সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রানকেন্দ্র কলারোয়ার অতীত ও বর্তমান অত্যান্ত ঐতিহ্যমন্ডিত ও গৌরবময় । এই ছোট্ট জনপদ উপমহাদেশের খ্যাতনামা পীরে বিদ্যুৎ সাহীদের অশেষ অবদানে শিক্ষা ও সংস্কৃতি অঙ্গনে কলারোয়া যেন আমাদের স্বপ্নের ইন্দ্রপুরী। কলারোয়ার মানুষ তাই আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে উঠেছে।

তাই কবির ভাষায় বলতে হয়-

 

                                                             "মাথার পরে নীল চাদোয়া

                                                                শস্য-শ্যামে গা-নাওয়া

                                                              চোখ জুড়ানো মন ভুলানো

                                                                  স্বর্গপমা কলারোয়া"।





Related

সাতক্ষীরা কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?

১৮৬১ সালে যশোর জেলার অধীনে ৭টি থানা নিয়ে সাতক্ষীরা মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৮৬৩ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার অধীনে এই মহকুমার কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৮৮২ সালে খুলনা জেলা প্রতিষ্ঠিত হলে সাতক্ষীরা খুলনা জেলার অর্ন্তভূক্ত একটি মহকুমা হিসাবে স্থান লাভ করে।



Related

সাতক্ষীরা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত?

সাতক্ষীরা জেলা চিংড়ি ও সন্দেশের জন্য বিখ্যাত। সাতক্ষীর জেলাটি থেকে দেশের রপ্তানীকৃত চিংড়ির প্রায় ৭০ভাগ হয়ে থাকে।



Related

সাতক্ষীরা কত নং সেক্টর ছিল?

প্রতিটি সেক্টরে একজন করে অধিনায়ক নিযুক্ত করে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল । সাতক্ষীরা অঞ্চল ছিল অষ্টম ওনবম সেক্টরের অধীন ।



Related

সাতক্ষীরা কোন জনপদের অন্তর্গত ছিল?

এক অনির্বচনীয় নান্দনিক অনুভবের প্রাচীন জনপদ সাতক্ষীরা একদা রাজা প্রতাপাদিত্যের যশোহর রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। বারোভূঁইয়াদের অন্যতম রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী এ জেলার কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর এলাকায়। বাংলাদেশের মানচিত্রে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে সাতক্ষীরা জেলার অবস্থান। এ জনবসতি প্রাচীনকালে খ্যাত ছিল বুড়ন দ্বীপ নামে।



Related

সাতক্ষীরা জেলা

সাতক্ষীরা জেলা বাংলাদেশের একটি জেলা। এটি খুলনা বিভাগ এর অন্তর্গত। সাতক্ষীরা বাংলাদেশের নৈঋত কোণে অবস্থিত, দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা; যার পূর্বে খুলনা, উত্তরে যশোর, পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশপরগনা এবং দক্ষিণে মায়াময় সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর। এই জেলাটি আশাশুনি, কলারোয়া, কালিগঞ্জ, তালা, দেবহাটা, শ্যামনগর এবং সাতক্ষীরা সদর - এই সাতটি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত।