The Ballpen
শৈলকুপা উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ - theballpen

শৈলকুপা উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ

23rd Dec 2022 | ঝিনাইদহ জেলা |

১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ শৈলকুপা ইতিহাস হয়ে আছে। ৫ এপ্রিল গাড়াগঞ্জ যুদ্ধ, ৪ আগষ্ট আলফাপুরের যুদ্ধ, ১৩ অক্টোবর আবাইপুরের যুদ্ধ, ২৬ নভেমবর কামান্নার যুদ্ধ এবং ৮ এপ্রিল, ৬ আগস্ট, ১৭ আগষ্ট ও ১১ নভেম্বর শৈলকুপা থানা আক্রমণের মাধ্য দিয়ে শৈলকুপা শক্রমুক্ত হয়। মুক্তিসেনারা উত্তোলন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা। শৈলকুপায় পাক-হানাদার ও তাদের সহযোগীরা চালিয়েছে নির্বিচারে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট। যার জলমত সাক্ষী হয়ে রয়েছে কামান্না ও আবাইপুরের হত্যাযজ্ঞসহ আরো বেশ কিছু নারকীয় ঘটনা। কামান্না যুদ্ধ এসবের সর্বাধিক গুরতত্ববাহী।

পাক সেনারা স্থানীয় রাজাকার ও দালালদের সহযোগিতায় শৈলকুপার গ্রামে গ্রামে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়, লুটপাট শেষে বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়। এপ্রিল মাসের শেষ দিকে শৈলকুপায় বাড়ি-ঘরে লুটপাট চালানোর পর ৬ জনকে একসাথে গুলি করে হত্যা করে তারা। ১৯৭১-এর ১ জুলাই ভোরে পাক বাহিনী ও রাজাকাররা শৈলকুপা থানার বসন্তপুর, জয়ন্তিনগর ও ছোট বোয়ালিয়া গ্রাম ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে বাড়ি বাড়ি তল্লাশী চালায়। কাউকে না পেয়ে নারী ধর্ষণ শুরু করে। পরে তারা লোকজন ধরে এনে ব্রাশ ফায়ার করে। এতে ১৯ জন শহীদ হন। আহত হন আরো ২০-২৫ জন। ২৬ নভেম্বর রাতে শৈলকুপা উপজেলার কামান্না গ্রামেও গণহত্যা চালায় তারা। এদিন পাকসেনা ও তাদের দোসর রাজাকাররা হত্যা করে ২৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ২৯ জনকে।

 ঝিনাইদহ পাক সেনাদের দখলে চলে যাওয়ার পর দলে দলে ছাত্র যুবকরা ভারতে গেরিলা ট্রেনিং নিতে যেতে শুরু করেন। জুলাই মাসে তারা দেশে ফিরতে থাকেন। পাল্টা আঘাত হানতে শুরু করেন পাক সেনাদের অবস্থানের উপর। আগস্ট মাসের প্রথমে মুক্তিযোদ্ধারা শৈলকুপা থানা দখল করেন। এ যুদ্ধে বেশ কয়েকজন পাক দালাল নিহত হয়। আবাইপুরে মুক্তিযোদ্ধারা স্থায়ী ক্যাম্প গড়ে তোলেন। ৩০ আগস্ট পাক বাহিনী ও রাজাকাররা আবাইপুর আক্রমণের জন্য এগুতে থাকে। এ খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা নদী পার হয়ে আলফাপুর খালের পাড়ে অবস্থান নেন। পাকসেনারা নদী পার হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অ্যাম্বুশে পড়ে। সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। এ যুদ্ধে প্রায় ৫০ জন পাক সেনা ও রাজাকার নিহত হয়।

১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর ভোর রাতে কামান্না গ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞে নিহত হন ২৭ জন বীর মুক্তিসেনা। আর আহত হন অর্ধশতাধিক গ্রামবাসী। চৌকস ও সাহসী ৪২ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ শেষে ভারত থেকে কামান্নার মাধব চন্দ্রের বাড়িতে আশ্রয় নেন। মাগুরার শ্রীপুর, মাগুরা সদর ও শৈলকুপা উপজেলায় এঁদের বাড়ি। শৈলকুপার মালিথিয়া গ্রামের আলমগীর ও শ্রীপুরের আবুবকর ছিল এদের মধ্যে প্রধান।

 মুক্তিযোদ্ধাদের এ উপস্থিতির সংবাদ স্থানীয় রাজাকারদের তৎপরতায় দ্রুত চলে যায় ঝিনাইদহ ও মাগুরার আর্মি ক্যাম্পে। হানাদারদরা ঝিনাইদহ ও মাগুরা থেকে ভারী অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রাতের অন্ধকারে পৌছে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খুব কাছাকাছি। দূরে তাদের গাড়িগুলো রেখে পায়ে হেটে এগিয়ে এসে রাতের অন্ধকারে হঠাৎ করেই হানাদাররা মুক্তি সেনাদের আশ্রয়সহল লক্ষ্য করে মর্টারের ভারী গোলা ছোড়ে। আকস্মিক এ আক্রমণে পথক্লান্ত মুক্তিসেনারা হকচকিয়ে যায়। সামলে নিয়ে শত্রু হাতে তুলে নেয় হাতিয়ার। প্রতিআক্রমণ চালায়। কিন্তু আকস্মিক আত্রুমণে মুক্তিসেনারা তাদের সামনে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি। ঘরের মাঝে আটকা পড়ে যায় অনেকে। পাকসেনারা তাঁদেরকে গুলি ছুঁড়ে হত্যা হরে। তারা গ্রামটিকেও তছনছ করে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ফণিভূষণ কুন্ডু ও রঙ্গবিবিকে গুলি করে হত্যা করে। তাদের এলোপাতাড়ি গুলিতে অনেক গ্রামবাসীও আহত হয়। হানাদাররা স্থান ত্যাগ করার পর পরই আশে পাশের গ্রাম থেকে হাজার হাজার লোক এসে জড়ো হয়। ঘরের মেঝেয়, উঠানে, বাড়ির আঙিনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল মুক্তিসেনাদের ক্ষত বিক্ষত নিস্পাণ দেহ। রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল বাড়িটির সারা আঙিনা। সববগুলো লাশ জড়ো করা হয় এক জায়গায়। কামান্না হাই স্কুলের খেলার মাঠের উত্তর পাশে কুমার নদ ঘেঁষে ৬ জন করে দুটি ও ৫ জন করে তিনটি গণকবরে এ ২৭ বীর শহীদের কবর ঘেঁষে নির্মিত হয়েছে একটি শহীদ মিনার, যার গায়ে লেখা রয়েছে ২৭ শহীদের নামঃ

            ১।মোমিন ২। কাদের ৩। শহীদল ৪।ছলেমান ৫। রাজ্জাক ৬। ওয়াহেদ ৭। রিয়াদ ৮। আলমগীর ৯। মতলেব ১০। আলী হোসেন ১১। শরীফুল ১২। আলীমুজ্জামান ১৩। আনিছুর ১৪। তাজুল ১৫। মনিরতজ্জামান ১৬। মমিন ১৭। রাজ্জাক ১৮। কওছার ১৯। ছলেমান ২০। আজিজ ২১। আবকর ২২। সেলিম ২৩। হোসেন ২৪। রাশেদ ২৫। গোলজার ২৬। অধীর ২৭। গৌর।





Related

কচুয়া উপজেলার আয়তন কত?

কচুয়া উপজেলার আয়তন ১৩১.৬২  বর্গ কিলোমিটার



Related

ঝিনাইদহ কোন সেক্টরে ছিল?

মুক্তিযুদ্ধে ঝিনাইদহ ৮ নং সেক্টরে ছিল।



Related

ঝিনাইদহ জেলার বিখ্যাত খাবার কী?

নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবার ঝিনাইদহ জেলায় পাওয়া যায়। তবে আমার মতে ঝিনাইদহের বিখ্যাত খাবার যা আমাদের নিজস্ব আইডেনটিটি দেয় সেই খাবার গুলো হলো ঝিনাইদহের নলিন গুড়ের পায়েস, জীড়ান খেজুর রসের ক্ষীর,খালিশপুরের চমচম, মাছের মাথা দিয়ে শুক্তো।



Related

ঝিনাইদহ জেলা কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?

ঝিনাইদহ যশোর জেলার একটি মহকুমা ছিল। ঝিনাইদহ জেলাটি ১৮৬২ সালে মহকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে এটি একটি পৃথক জেলা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝিনাইদহ জেলা ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে।



Related

ঝিনাইদহ জেলার ইতিহাস

ঝিনাইদহ যশোর জেলার একটি মহকুমা ছিল। ঝিনাইদহ জেলাটি ১৮৬২ সালে মহকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে এটি একটি পৃথক জেলা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝিনাইদহ জেলা ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। 

এই জেলার নামকরণ সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। কথিত আছে যে, ক্যালসিয়াম উৎপাদনের জন্য '‘নবগঙ্গা’' নদী এবং '‘দহা’' নদী থেকে ঝিনুক সংগ্রহের জন্য এই এলাকা বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল। এই জেলার নাম ঝিনাইদহ “ঝিনুক”এবং “দাহ”শব্দদ্বয় থেকে নেয়া হয়েছে বলে মনে করা হয়।