The Ballpen
সাতক্ষীরা জেলার ঐতিহ্য - theballpen

সাতক্ষীরা জেলার ঐতিহ্য

16th Dec 2022 | সাতক্ষীরা জেলা |

লৌকিক আচার-আচরণ,বিশ্বাস আর পৌরাণিকতায় সমৃদ্ধ সাতক্ষীরা । নানা কিংবদন্তীর প্রবাহমান ধারায় সজীব এখানকার ঐতিহ্য । বঙ্গোপসাগরের আঁচল

ছোঁয়া সুন্দরবন, আর সুন্দরবনকে বুকে নিয়ে সমৃদ্ধ এখানকার প্রকৃতি, এমনি অর্থনীতিও । সুন্দরবনের চোখ জুড়ানো চিত্রল হরিণ, বিশ্ববিখ্যাত ডোরাকাটা বাঘ থেকে শুরু করে বনদেবী, রাজা প্রতাপাদিত্যের জাহাজঘাটা, বিভিন্ন মোঘলীয় কীর্তি, অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, পুরাকালের কাহিনী, জারি-সারি,পালাগান, পালকি গান এসবের মধ্যেই সাতক্ষীরার মানুষের আত্মীক পরিচয় গ্রন্থ। এখানে জন্মেছেন কবি,সাহিত্যিক,শিল্পী, সুফী দরবেশসহ বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, জন্মেছেন জীবন সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ সাহসী মানুষ । শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধেপ্রতিবাদমুখর আত্নত্যাগী বীর ।

গ্রামবাংলার লোকজ ঐতিহ্যই এখনও পর্যন্তসাতক্ষীরার সংস্কৃতির মূলধারাটি বহন করে চলেছে । খুব সহজেই এখানে মিলিত হয়েছে লৌকিক আচার -আচরণের সাথে পৌরাণিকত্বের । যেন দুটো নদীর সম্মিলিত এক বেদবান ধারা । বছরের প্রায় প্রতিটি সময়ধরে অগনিত মেলা বসে সাতক্ষীরায় । সাগরদ্বীপ দুবলোর মেলা থেকে শুরু করে খুলনা, যশোর এমনকি পশ্চিমবঙ্গেওএর প্রভাব পরিলক্ষিত । এ জেলার শুধু নয় দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মেলাটি বসে সাতক্ষীরা শহরেই,পলাশপোল, গুড়পুকুরের পারে ।

গুড়পুকুরের নামানুসারেই মেলার নামকরণ করা হয়েছে গুড়পুকুরের মেলা । মেলাটির বয়স এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি । মেলা নিয়ে অতীতে তেমন লেখালেখিও হয়নি । মেলাটির উৎপত্তি সম্পর্কে সোবহান খান চৌধুরীর (৮০) বক্তব্য এরকম, ‘অনেক পথ হেঁটেছেন’ আজ ক্লান্তিতেপা আর উঠতে চায় না । শেষ ভাদ্রের ভ্যাপসা গরমে মিইয়ে এসেছে সমস্তশরীর ।

ওই যে গৌরদের পুকুরপারের বটগাছটা ওর ছায়ায় একটু জিরিয়ে নেয়া যাক । বরে ছায়ায় বসতে না বসতেই ঘুম এসে গেল ফাজেলের, শেকড়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন তিনি । গাছতলার ঘুম । গাছতলার রোদেরর মতই ছেঁড়া ফাটা নড়বড়ে । বটের পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যের তীব্র রশ্মি এসে পড়লো ফাজেলের মুখে । ঘুম ভেঙে যেতে লাগলো । অস্বস্তিবোধ করলেন তিনি । মগডালে বসেছিল এক পদ্মগোখরো সাপ । সে তা লক্ষ্য করলো এবং নেমে এলো নিচে, যে পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যরশ্মি এসে ফাজেলের মুখে পড়েছে ঠিক সেখানে । ফণা তুলে দাঁড়ালো সাপটা ।

ফণার ছাড়া এসে পড়লো ফাজেলের মুখে । তিনি আরাম পেয়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়লেন । কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে থাকার পর আবার ঘুম ভেঙে গেলো । এর মধ্যে ক্লান্তিঅনেকটা দূর হয়ে গেছে । বটের পাতায় পাতায় দৃষ্টি ঘোরাতে লাগলেন । হঠাৎদেখতে পেলেন সেই সাপটিকে । তখনও সে ফণা তুলে সূর্যকে আড়াল করে আছে । এবার ফণাটা একটু দুলে উঠলো, দুলে উঠলো গাছের পাতারা। তখন তার চোখে ঘুমের রেশমাত্র নেই । শরীরে নেই একবিন্দু ক্লান্তি। ফাজেল বটতলা ত্যাগ করলেন এবং এলাকার হিন্দুদের ডেকে বললেন,‘এখানে তোমরা মনসা পূজা কর’ ।

মেলার নাম গুড়পুকুর আর পুকুরের নাম গুড় । এই নামের জট এখনও খোলেনি । কিভাবে হলো এ নামকরণ- কেউ বলেন মনসা পূজার সময় পুকুরে বাতাসা ফেলা হতো । ওই বাতাসার জন্যে পুকুরের পানি মিষ্টি লাগতো। তখন থেকেই গুড়পুকুর । অনেকের ধারণা পুকুরে পানি থাকতো না বেশিদিন । স্বপ্ন দর্শনে জানাগেলো একশ ভাঁড় গুড় ঢালতে হবে পুকুরে । স্বপ্ন নির্দেশ মোতাবেক কাজ করা হলো । সেই যে পুকুরে পানি এলো আর শুকালো না । আবার শোনা যায় পুকুরের তলদেশ থেকে এক সময় মিষ্টি পানি উঠতো তাই এর নাম গুড়পুকুর হয়েছে । একজন বললেন পুকুরের জায়গাতে অসংখ্য খেজুর গাছ ছিল এবং প্রচুর রস হতো ওই গাছে । একবার গাছের সমস্তরস দিয়ে গুড় তৈরি করে তা বিক্রি করা হলো এবং ওই বিক্রিত টাকা দিয়ে পুকুরটি কাটা হলো । তখন থেকে গুড়পুকুর ।

আবদুস সোবহান খান চৌধুরী বলেছেন, আসলে ওসব কিছুই নয় । চৌধুরীপাড়ার রায় চৌধুরীরা গৌর বর্ণের ব্রাক্ষ্মন ছিলেন । তাই তাদের পুকুরকে বলা হতো গৌরদের পুকুর । কালক্রমে হয়েছে গুড়পুকুর । পুকুর সংলগ্ন বসবাসকারী নিতাই কর্মকার (৭৫) ও সোবাহান খান চৌধুরীর বিবরণের সাথে ঐকমত্য পোষণ করেন ।





Related

সাতক্ষীরা কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?

১৮৬১ সালে যশোর জেলার অধীনে ৭টি থানা নিয়ে সাতক্ষীরা মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৮৬৩ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার অধীনে এই মহকুমার কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৮৮২ সালে খুলনা জেলা প্রতিষ্ঠিত হলে সাতক্ষীরা খুলনা জেলার অর্ন্তভূক্ত একটি মহকুমা হিসাবে স্থান লাভ করে।



Related

সাতক্ষীরা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত?

সাতক্ষীরা জেলা চিংড়ি ও সন্দেশের জন্য বিখ্যাত। সাতক্ষীর জেলাটি থেকে দেশের রপ্তানীকৃত চিংড়ির প্রায় ৭০ভাগ হয়ে থাকে।



Related

সাতক্ষীরা কত নং সেক্টর ছিল?

প্রতিটি সেক্টরে একজন করে অধিনায়ক নিযুক্ত করে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল । সাতক্ষীরা অঞ্চল ছিল অষ্টম ওনবম সেক্টরের অধীন ।



Related

সাতক্ষীরা কোন জনপদের অন্তর্গত ছিল?

এক অনির্বচনীয় নান্দনিক অনুভবের প্রাচীন জনপদ সাতক্ষীরা একদা রাজা প্রতাপাদিত্যের যশোহর রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। বারোভূঁইয়াদের অন্যতম রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী এ জেলার কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর এলাকায়। বাংলাদেশের মানচিত্রে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে সাতক্ষীরা জেলার অবস্থান। এ জনবসতি প্রাচীনকালে খ্যাত ছিল বুড়ন দ্বীপ নামে।



Related

সাতক্ষীরা জেলা

সাতক্ষীরা জেলা বাংলাদেশের একটি জেলা। এটি খুলনা বিভাগ এর অন্তর্গত। সাতক্ষীরা বাংলাদেশের নৈঋত কোণে অবস্থিত, দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা; যার পূর্বে খুলনা, উত্তরে যশোর, পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশপরগনা এবং দক্ষিণে মায়াময় সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর। এই জেলাটি আশাশুনি, কলারোয়া, কালিগঞ্জ, তালা, দেবহাটা, শ্যামনগর এবং সাতক্ষীরা সদর - এই সাতটি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত।