আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনীতির ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। বিশ্বায়ন মূলত পারস্পরিক ক্রিয়া ও আন্তঃসংযোগ সৃষ্টিকারী একটি পদ্ধতি। বিভিন্ন জাতির সরকার, প্রতিষ্ঠান ও জনগণের মাঝে এটি সমন্বয় সাধন ও মিথস্ক্রিয়ার সূচনা করে। এই পদ্ধতির চালিকাশক্তি হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি। পরিবেশ, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক পদ্ধতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রগতি এবং মানবিক ও সামাজিক অগ্রগতি; সবকিছুর ওপরই এর সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ করা যায়। জাতীয় অর্থনৈতিক কাঠামোকে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সাথে একীভ‚তকরণের প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে ‘বিশ্বায়ন’ শব্দটির অধিকতর ব্যবহার হয়ে থাকে। অনেকে এ প্রক্রিয়াকে নতুন হিসেবে উল্লেখ করে একে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত করে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে বহু পূর্ব থেকেই এ প্রক্রিয়াটি বিশ্ব জুড়ে চলমান রয়েছে। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারার মধ্যেই এর উৎস নিহিত ছিল। সপ্তদশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উদ্ভবের ফলে এর ক্ষেত্র অধিকতর প্রসারিত হয়। গত পঞ্চাশ বছরে এ প্রক্রিয়া সবচেয়ে বেশি গতি লাভ করেছে। বিশ্বায়নের ফলে বৈশ্বিক ব্যবসায়-বাণিজ্যসহ সকলক্ষেত্রে অভ‚তপূর্ব বিপ্লব সাধিত হয়েছে। এক দেশের পণ্য অন্য দেশে বসে সহজেই আমরা পেয়ে যাচ্ছি। প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থার কারণে পণ্যের দামও থাকছে হাতের নাগালে। তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের ফলে জ্ঞানার্জনের পথ হয়েছে প্রশস্ত। দারিদ্র্য, অজ্ঞানতা ও অপশাসন দূর করে বিশ্বকে একটি শান্তিপূর্ণ আবাসস্থল করার ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন একটি বড় সুযোগ। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্বের সব জাতি একযোগে এ সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। তবে ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি বিশ্বায়নের কিছু নেতিবাচক দিকও আমাদের চোখে পড়ে। তুলনামূলকভাবে এগিয়ে থাকা দেশগুলো বিশ্বায়নকে নিজেদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এর ফলে হাতে গোনা কিছু পুঁজিপতিরা লাভবান হচ্ছে। গরিব হচ্ছে আরও গরিব। তবে বিশ্বায়নের ভালো দিকগুলোর উপযোগিতা অনস্বীকার্য। আমাদের উচিত এই ইতিবাচক দিকগুলোর প্রতি মনোযোগী হয়ে অর্থনৈতিকভাবে এবং মেধা ও মননে সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে আত্মনিয়োগ করা