সূচনা : বৃক্ষ বা গাছপালা মানুষের অকৃত্রিম ও চিরস্থায়ী বন্ধু। মানবজাতির সামগ্রিক কল্যাণ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের অবদান অসামান্য। এ ব্যাপারে সমগ্র বিশ্বই আজ সচেতন। বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে আমাদের দেশেও স্লোগান উঠেছে, ‘গাছ লাগান-পরিবেশ বাঁচান’।
বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা : বিশ্বের বনভূমি উজাড় হতে হতে অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে বিশ্ব-পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ মানুষের বসবাসের উপযোগী ভারসাম্যপূর্ণ পৃথিবীর জন্যে গাছপালার কোনো বিকল্প নেই। অক্সিজেন দিয়ে গাছপালা কেবল আমাদের জীবন রক্ষা করে না, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষ পালন করে অনিবার্য ভূমিকা। প্রস্বেদন প্রক্রিয়া ও বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বৃক্ষ আবহাওয়া মণ্ডলকে বিশুদ্ধ রাখে, জলীয় বাষ্প তৈরি করে বাতাসের আর্দ্রতা বাড়িয়ে বায়ুমণ্ডলকে রাখে শীতল। বৃক্ষ বৃষ্টি ঝরিয়ে ভূমিতে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি করে, বাড়িয়ে দেয় মাটির জলধারণ ক্ষমতা। তাই বৃক্ষকে গণ্য করা হয় বায়ুমণ্ডলের বিশুদ্ধকরণ ও শীতলীভবনের অন্যতম অনুঘটক হিসেবে। এ ছাড়াও গাছপালা মাটির উর্বরতা বাড়ায়, মাটির ক্ষয় রোধ করে। ঝড়-ঝঞ্ঝা-বন্যা রোধেও পালন করে সহায়ক ভ‚মিকা। নদী ছাপিয়ে আসা বন্যার তোড়তে ঠেকায় বনভূমি। মাটির ওপর শীতল ছায়া বিছিয়ে দিয়ে ঠেকায় মরুকরণের প্রক্রিয়াকে।
বাংলাদেশে বৃক্ষনিধন ও তার প্রতিক্রিয়া : ভারসাম্যমূলক প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্যে দেশের মোট ভূমির অন্তত ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা দরকার। সেক্ষেত্রে সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ ১৭ শতাংশ। উপরন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে ঐ বনভূমির পরিমাণও হ্রাস পাচ্ছে। যেখানে তিনটি গাছ কাটা হচ্ছে সেখানে একটি গাছও লাগানো হচ্ছে কিনা সন্দেহ আছে। ফলে বাস্তবে বনভূমি বাড়ছে না। দুঃখের বিষয়, গত একশ বছরে প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের বনাঞ্চল উজাড় হয়ে গেছে। গ্রাম ও শহরাঞ্চলে ব্যাপক হারে নির্বিকার বৃক্ষনিধনের ঘটনা ঘটেছে। ফলে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বনভূমির পরিমাণ নেমে এসেছে ৩.৫ শতাংশে। তারই বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর আবহাওয়ায়। দিনের বেলা দুঃসহ গরম আর রাতে প্রচণ্ড শীত অনুভ‚ত হচ্ছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, এ লক্ষণ মরুকরণ প্রক্রিয়ার আশঙ্কাজনক পূর্বাভাস।
বৃক্ষরোপণ অভিযান : দেশকে মানুষের বসবাস উপযোগী করার জন্য বনায়নের বিকল্প নেই। কেননা গাছপালাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। কিন্তু গাছ না লাগিয়ে যদি কেবল কেটে ফেলা হয় তাহলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে এবং পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হবে। এজন্য বৃক্ষরোপণে সমাজের সকল স্তরের লোকজনকে উৎসাহিত করতে হবে। বাংলাদেশের বনায়নের সম্ভাবনা বিপুল। নানাভাবে এ বনায়ন সম্ভব। একটি পন্থা হলো সামাজিক বন উন্নয়ন কর্মসূচি। এর লক্ষ্য হলো : রাস্তার পাশে বৃক্ষরোপণে জনসাধারণকে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করানো। জনগণ যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ কর্মসূচিতে যোগ দেয় সেজন্যে অর্থনৈতিক প্রণোদনা থাকতে হবে। তাছাড়া নানা জাতের বৃক্ষ মিশ্রণ করে রোপণ করতে হবে যেন গ্রামবাসীরা খাদ্য, ফল, জ্বালানি ইত্যাদি আহরণ করতে পারে। সাধারণ জনগণকে যদি বিপন্ন পরিবেশের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত করা যায় তাহলে অনেকেই বৃক্ষরোপণের কাজে এগিয়ে আসবেন।
আমাদের করণীয় : বৃক্ষরোপণ অভিযান সফল করার জন্য সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। বাড়ির আশপাশে খালি জায়গাগুলোতে যথাসাধ্য গাছ লাগাতে হবে। বড়দের পাশাপাশি শিশুদের এ ব্যাপারে এখন থেকেই সচেতন করে তুলতে হবে। একটি গাছ কাটার প্রয়োজন হলে আগে কমপক্ষে দুটি গাছ লাগাতে হবে।
উপসংহার : মানুষ ও প্রাণিকুলের সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য বৃক্ষরোপণ অভিযান অত্যন্ত জরুরি। এ অভিযান সফল হলে আমাদের জীবন সমৃদ্ধ হবে। দেশ ভরে উঠবে সবুজের প্রশান্তিতে।
[ব. বো. ১৫, রা. বো. ১৩]