সূচনা : ছাত্রজীবনে যারা আমাদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে আলোর পথ দেখান তাঁরাই আমাদের শিক্ষক। তারা অক্লান্ত পরিশ্রমে জ্ঞানের আলো বিলিয়ে দেন। তারা মানুষ গড়ার কারিগর। এ সকল শিক্ষকের মাঝে বিশেষ কিছু গুণের কারণে কোনো কোনো শিক্ষক আমাদের মনে আলাদাভাবে স্থান করে নেন। হয়ে ওঠেন আমাদের প্রিয় শিক্ষক, প্রিয় মানুষ। আমারও তেমনি একজন প্রিয় শিক্ষক আছেন।
আমার প্রিয় শিক্ষক : প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে আমি অনেক শিক্ষকের সাহচর্যেই এসেছি। তবে সকলের মধ্যে আমার কাছে আদর্শ শিক্ষক হিসেবে হৃদয়ের মণিকোঠায় ঠাঁই করে নিয়েছেন সুলতান স্যার। তাঁর কাছে আমি বিভিন্নভাবে লাভ করেছি জীবনে চলার পাথেয়। তাঁর জ্ঞানের সীমা ছিল অসীম। তিনি হৃদয় দিয়ে ছাত্রদের চাহিদা বুঝতেন এবং পড়াশোনায় বন্ধুর মতো সাহায্য করতেন। তাঁর পড়ানোর ধরন, গুণাবলি, চলাফেরা, কথা বলার ধরন সব কিছুই আমাকে মুগ্ধ করত। তাঁর সততা, নিষ্ঠা এবং ব্যক্তিত্ব আমার কাছে তাঁকে আদর্শ মানুষ হিসেবে তুলে ধরেছে।
প্রথম পরিচয় : সুলতান স্যারের সাথে আমার পরিচয় ঘটেছিল একটি বিশেষ ঘটনার মধ্য দিয়ে। আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জীবন যখন শেষ করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম তখন স্কুলের প্রথম দিনেই তাঁর সাথে আমার পরিচয় ঘটেছিল। আমি ফিলিপনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে প্রথম দিন যখন বিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম সেখানে সবকিছুই আমার অপরিচিত ছিল। প্রথম ক্লাসে যখন ঢুকলাম তখন সবাই নতুন মুখ। ক্লাসে এলেন বাংলা শিক্ষক। তিনি নিজের পরিচয় দিলেন সুলতান স্যার বলে। প্রথম ক্লাসেই তিনি সবাইকে পাঠ্যবইয়ের কবিতা আবৃত্তি করতে দিয়েছিলেন। আমার আবৃত্তি নাকি স্যারের অনেক ভালো লেগেছিল।তাই তিনি ক্লাসের সবার সামনেই আমাকে তাঁর পকেটের কলমখানা দিয়ে পুরস্কৃত করলেন। স্কুলজীবনের প্রথম দিন থেকেই সুলতান স্যার আমার হৃদয়ের মণিকোঠায় ঠাঁই করে নিলেন।
সুলতান স্যার আদর্শ শিক্ষক হওয়ার কারণ : আমার কাছে সুলতান স্যার আদর্শ শিক্ষক হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। তাঁর পড়ানোর ধরনে ছিল স্বাতন্ত্র্য। তিনি ছাত্রদের সুশিক্ষা প্রদানের জন্য প্রচুর পড়াশোনা করতেন। সৌভাগ্যক্রমে একদিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখেছিলাম তাঁর ঘরটা যেন প্রকাণ্ড একটা লাইব্রেরি। বাংলার শিক্ষক হওয়ায় তাঁর ঘরে সাহিত্যের বই বেশি ছিল। সদালাপী ও মিষ্টভাষী সুলতান স্যার ছাত্রদের সকল সময় সুপরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করতেন। প্রতিটি বিষয় তিনি শ্রেণিকক্ষে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করতেন। তাঁর ব্যক্তিত্বের কাছে সবকিছু নত হতে বাধ্য ছিল।
আমার জীবনে সুলতান স্যারের অবদান : আমার জীবনে সুলতান স্যার অনেক অবদান রেখেছেন। বাংলা আমার কাছে প্রিয় বিষয় হওয়ার কারণ এই সুলতান স্যার। তিনি ক্লাসের প্রথম দিন থেকেই আমার বিষয়ে আলাদা খোঁজখবর নিতেন। পড়াশোনার বিষয়ে কোনো সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে গিয়ে কোনো দিন নিরাশ হইনি। প্রতিটি বিষয় তিনি সময় নিয়ে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। স্যারের কাছে আমি লাভ করেছিলাম প্রিয় ছাত্রের মর্যাদা। তাই তিনি তার সংগ্রহের বিভিন্ন বই দিয়ে আমাকে পড়তে উৎসাহিত করে আমার জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেছেন। প্রায়ই তিনি আমাদের বাড়িতে এসে খোঁজ-খবর নিতেন। সর্বোপরি একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে আমার জীবনে সুলতান স্যার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
স্যারের চারিত্রিক গুণাবলি : একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে সুলতান স্যার ছিলেন অসাধারণ চরিত্রের অধিকারী। তিনি ছিলেন খুবই নম্র ও ভদ্র একজন মানুষ। ছাত্রছাত্রীদের তিনি সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। চারিত্রিক দৃঢ়তা ও ধী-শক্তিসম্পন্ন সুলতান স্যার ছিলেন আদর্শের মূর্ত প্রতীক। তাঁর দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যপরায়ণতা সকলের কাছে তাঁকে প্রিয় করে তুলেছে। তিনি ছাত্রদের দুঃসময়ে বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়াতেন। একজন ভালো মানুষ ও ভালো শিক্ষক হওয়ার জন্য যেসব গুণ থাকার প্রয়োজন তার সবই সুলতান স্যারের মধ্যে ছিল।
উপসংহার : শিক্ষাজীবনের প্রাথমিক গণ্ডি পেরিয়ে আমি কেবল দ্বিতীয় সিঁড়িতে পদার্পণ করতে যাচ্ছি। আমার দেখা শিক্ষকদের মধ্যে তাঁর মতো গুণী ও আদর্শ শিক্ষক আমি আর দেখিনি। তাঁর আদর্শ প্রতিটি ছাত্রের জীবনে প্রতিফলিত হয়ে থাকার মতো। আমার জীবনেও তিনি একজন প্রিয় ও আদর্শ শিক্ষক। তাঁকে অনুসরণ করে আমি একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চাই।