সহজভাবে বলা যায়, কয়েকটি শব্দ পাশাপাশি বসে সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করলে তাকে বাক্য বলে । যে সুবিন্যস্ত পদসমষ্টি দ্বারা কোনাে বিষয়ে বক্তার মনােভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়, তাকে বাক্য বলে।
কতগুলাে পদের সমষ্টিতে বাক্য গঠিত হলেও যে কোনাে পদসমষ্টিই বাক্য নয়। বাক্যের বিভিন্ন পদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বা অন্বয় থাকা আবশ্যক। এ ছাড়াও বাক্যের অন্তর্গত বিভিন্ন পদ দ্বারা মিলিতভাবে একটি অখণ্ড ভাব পূর্ণ রূপে প্রকাশিত হওয়া প্রয়ােজন, তবেই তা বাক্য হবে।
ভাষার বিচারে বাক্যের নিম্নলিখিত তিনটি গুণ থাকা চাই। যেমন :
(১) আকাঙক্ষা (২) আসত্তি এবং (৩) যােগ্যতা
১. আকাঙক্ষা (expectancy): বাক্যের অর্থ পরিষ্কারভাবে বােঝার জন্য বাক্যে ব্যবহৃত একটি পদের পর অন্য পদ
শােনার যে আগ্রহ জাগে তাকে আকাঙক্ষা বলে। অন্যভাবে বলা যায়, বাক্যের অর্থ পরিষ্কারভাবে
বােঝার জন্য এক পদের পর অন্য পদ শােনার যে ইচ্ছা তা-ই হলাে আকাঙ্ক্ষা। যেমন- সূর্য
পূর্বদিকে উদিত হয়।
এ বাক্যটি বললে, শ্রোতার আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি হয় বা কথাটি দ্বারা বাক্যের অর্থ পরিষ্কার রূপে
অনুধাবন করা যায় । কিন্তু যদি বলা হয়, সূর্য পূর্বদিকে ... তাহলে কথাটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
অতএব উদিত হয়’ শব্দটির শােনার জন্য যে আগ্রহ তাই হলাে আকাঙ্ক্ষা।
এরকম - ‘ চন্দ্র পৃথিবীর চারদিকে’- এটুকু বললে বাক্যটি সম্পূর্ণ মনােভাব প্রকাশ করে না, আরও কিছু ইচ্ছা থাকে। বাক্যটি এভাবে পূর্ণাঙ্গ করা যায় : চন্দ্র পৃথিবীর চারদিকে ঘােরে। এখানে আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি হয়েছে বলে এটি পূর্ণাঙ্গ বাক্য।
২. আসত্তি (proximity) : বাক্যে ব্যবহৃত পদগুলাের মাঝে অর্থের সঙ্গতি বা মিল রাখার জন্য সুশৃঙ্খলভাবে পদ বিন্যাসকেই বলা হয় ক্রম বা আসত্তি। যেমন-আছে নামে যন্ত্র একরকম অনুবীক্ষণ। এখানে শব্দগুলাে এলােমেলােভাবে সাজানাে রয়েছে এবং শব্দগুলাের মধ্যে কোনাে অর্থগত মিল নেই। সুতরাং এটি বাক্য নয়। কিন্তু যদি বলা হয়-অণুবীক্ষণ নামে একরকম যন্ত্র আছে। তাহলে এখানে বাক্যের শব্দগুলাে সঠিকভাবে সাজানাে রয়েছে এবং বাক্যের অর্থ প্রকাশে কোনাে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়নি।
অর্থাৎ মনােভাব প্রকাশের জন্য পদগুলাে এমনভাবে পর পর সাজাতে হবে যাতে মনােভাব প্রকাশে বাধাগ্রস্ত না হয়। বাক্যের অর্থসঙ্গতি রক্ষার জন্য সুশৃঙ্খল পদ বিন্যাসই আসত্তি।
এরকম - কাল বিতরণী হবে উৎসব স্কুলে আমাদের পুরস্কার অনুষ্ঠিত। লেখা হওয়াতে পদ সন্নিবেশ ঠিকভাবে না হওয়ায় শব্দগুলাের অন্তর্নিহিত ভাবটি যথাযথ প্রকাশিত হয়নি। তাই এটি একটি বাক্য হয়নি। মনােভাব পূর্ণ ভাবে প্রকাশ করার জন্য পদগুলােকে নিম্নলিখিতভাবে যথাস্থানে সন্নিবিষ্ট করতে হবে। যেমন – কাল আমাদের স্কুলে পুরস্কার বিতরণী উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। বাক্যটি আসত্তিসম্পন্ন।
৩. যােগ্যতা (propriety): বাক্যে ব্যবহৃত পদগুলাের অর্থগত ও ভাবগত মিলন বন্ধনের নামই যােগ্যতা। যেমন- মানুষটি একটি বাঘ খেয়েছে। বাক্যটির অর্থের সাথে বাস্তবের কোনাে মিল নেই। তেমনি- গরু আকাশে ওড়ে। এখানেও অর্থের সাথে বাস্তবের কোনাে মিল নেই। বাস্তবের সঙ্গে মিল থাকতে হবে।
অর্থাৎ বাক্যস্থিত শব্দসমূহের অন্তর্গত এবং ভাবগত মিলন বন্ধনের নাম যােগ্যতা।
এরকম – বর্ষার বৃষ্টিতে প্লাবনের সৃষ্টি হয়। - এটি একটি যােগ্যতাসম্পন্ন বাক্য। কারণ, বাক্যটিতে পদসমূহের অর্থগত এবং ভাবগত সমন্বয় রয়েছে। কিন্তু বর্ষার রৌদ্র প্লাবনের সৃষ্টি করে।'- বললে বাক্যটি ভাবপ্রকাশের যােগ্যতা হারাবে। কারণ, রৌদ্র প্লাবনের সৃষ্টি করে না ।
শব্দের যােগ্যতার সঙ্গে নিম্নলিখিত বিষয়গুলাে জড়িত থাকে (ক) রীতিসিদ্ধ অর্থবাচকতা : প্রকৃতি-প্রত্যয়জাত অর্থে শব্দ সর্বদা ব্যবহৃত হয়। যােগ্যতার দিক থেকে রীতিসিদ্ধ অর্থের প্রতি লক্ষ রেখে কতগুলাে শব্দ ব্যবহার করতে হয়। যেমন
শব্দ | রীতিসিদ্ধ | প্রকৃতি + প্রত্যয় | প্রকৃতি + প্রত্যয়জাত অর্থ |
---|---|---|---|
বাধিত | অনুগৃহীত বা কৃতজ্ঞ | বাধ + ইত | বাধাপ্রাপ্ত |
তৈল | তিল জাতীয় | তিল + ষ্ণ | তিলজাত স্নেহ পদার্থ, বিশেষ কোনাে শস্যের রস। |
(খ) দুর্বোধ্যতা : অপ্রচলিত, দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করলে বাক্যের যােগ্যতা বিনষ্ট হয়। যেমন - তুমি আমার সঙ্গে প্রপঞ্চ করেছাে। (চাতুরী বা মায়া অর্থে, কিন্তু বাংলা ‘প্রপঞ্চ’ শব্দটি অপ্রচলিত)।
(গ) উপমার ভুল প্রয়ােগ : ঠিকভাবে উপমা অলংকার ব্যবহার না করলে যােগ্যতার হানি ঘটে। যেমন আমার হৃদয়-মন্দিরে আশার বীজ উপ্ত হলাে। বীজ ক্ষেতে বপন করা হয়, মন্দিরে নয়। কাজেই বাক্যটি হওয়া উচিত : আমার হৃদয়-ক্ষেত্রে আশার বীজ উপ্ত হলাে।
(ঘ) বাহুল্য-দোষ : প্রয়ােজনের অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহারে বাহুল্য দোষ ঘটে এবং এর ফলে শব্দ তার যােগ্যতাগুণ হারিয়ে থাকে। যেমন – দেশের সব আলেমগণই এ ব্যাপারে আমাদের সমর্থন দান করেন। আলেমগণ বহু বচনবাচক শব্দ। এর সঙ্গে ‘সব’ শব্দটির অতিরিক্ত ব্যবহার বাহুল্য-দোষ সৃষ্টি করেছে।
(ঙ) বাগধারার শব্দ পরিবর্তন : বাগধারা ভাষাবিশেষের ঐতিহ্য। এর যথেচ্ছ পরিবর্তন করলে শব্দ তার যােগ্যতা হারায়। যেমন ‘অরণ্যে রােদন' (অর্থ : নিস্ফল আবেদন)-এর পরিবর্তে যদি বলা হয়।, ‘বনে ক্রন্দন’ তবে বাগধারাটি তার যােগ্যতা হারাবে।
(চ) গুরুচণ্ডালী দোষ : তৎসম শব্দের সঙ্গে দেশীয় শব্দের প্রয়ােগ কখনাে কখনাে গুরুচন্ডালী দোষ সৃষ্টি করে। এ দোষে দুষ্ট শব্দ তার যােগ্যতা হারায়। গরুর গাড়ি’, ‘শবদাহ’, ‘মড়াপােড়া প্রভৃতি স্থলে যথাক্রমে ‘গরুর শকট', ‘শবপােড়া’, ‘মড়াদাহ' প্রভৃতির ব্যবহার গুরুচণ্ডালী দোষ সৃষ্টি করে।
প্রতিটি বাক্যে দুটি অংশ থাকে : (১) উদ্দেশ্য ও (২) বিধেয়।
বাক্যের যে অংশে কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয়, তাকে উদ্দেশ্য বলা হয় এবং
উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয়, তাকে বিধেয় বলে।
যেমন - খােকা এখন বই পড়ছে। এই বাক্যে-
উদ্দেশ্য | বিধেয় |
---|---|
খােকা এখন | বই পড়ছে। |
✔ বিশেষ্য বা বিশেষ্যস্থানীয় অন্যান্য পদ বা পদসমষ্টিযােগে গঠিত বাক্যাংশও বাক্যের উদ্দেশ্য হতে পারে।
যেমন -
সৎ লােকেরাই প্রকৃত সুখী। - বিশেষ্যরূপে ব্যবহৃত বিশেষণ।
মিথ্যা কথা বলা খুবই অন্যায়। - ক্রিয়াজাত বাক্যাংশ
উদ্দেশ্যের প্রকারভেদ
একটিমাত্র পদবিশিষ্ট কর্তৃপদকে সরল উদ্দেশ্য বলে।
উদ্দেশ্যের সঙ্গে বিশেষণাদি যুক্ত থাকলে তাকে সম্প্রসারিত উদ্দেশ্য বলে।
উদ্দেশ্যের সম্প্রসারণ | সম্প্রসারণ | উদ্দেশ্য | বিধেয় |
---|---|---|---|
১. বিশেষণ যােগে- | কুখ্যাত | দস্যুদল | ধরা পড়েছে। |
২. সম্বন্ধ পদযােগে- | হাসিমের | ভাই | এসেছে। |
৩. সমার্থক বাক্যাংশ যােগে- | যারা অত্যন্ত পরিশ্রমী , | তারাই | উন্নতি করে। |
৪. অসমাপিকা ক্রিয়াবিশেষণ যােগে - | চাটুকার পরিবৃত হয়েই | বড় সাহেব | থাকেন। |
৫. বিশেষণ থানীয় বাক্যাংশ যােগে - | যার কথা তােমরা বলে থাক, | তিনি | এসেছেন। |
বিধেয়ের সম্প্রসারণ | সমপ্রসারণ | উদ্দেশ্য | বিধেয় |
---|---|---|---|
১. ক্রিয়া বিশেষণ যােগে- | ঘােড়া | দ্রুত | চলে। |
২. ক্রিয়া বিশেষণীয় যােগে- | জেট বিমান | অতিশয় দ্রুত | চলে। |
৩.কারকাদি যােগে- | ভুবনের | ঘাটে ঘাটে | ভাসিছে। |
৪. ক্রিয়া বিশেষণ স্থানীয় বাক্যাংশ যােগে - | তিনি | যে ভাবেই হােক | আসবেন। |
৫. বিধেয় বিশেষণ যােগে- | ইনি | আমার বিশেষ | অন্তরঙ্গ বন্ধু (হন)। |
গঠন অনুযায়ী বাক্যের প্রকারভেদ বাক্য তিন প্রকার : (১) সরল বাক্য (২) মিশ্র বা জটিল বাক্য, (৩) যৌগিক বাক্য।
যে বাক্যে একটিমাত্র কর্তা (উদ্দেশ্য)/subject এবং একটিমাত্র সমাপিকা ক্রিয়া (বিধেয়)/ finite verb থাকে, তাকে
সরল বাক্য (simple sentence) বলে।
যেমন- দিপা বই পড়ে। রাসেল ক্রিকেট খেলে।
বাক্য দুটির কর্তা হচ্ছে দিপা ও রাসেল । পড়ে ও খেলে বাক্য দুটির সমাপিকা ক্রিয়া।
পুকুরে পদ্মফুল জন্মে। এখানে ‘পদ্মফুল’ উদ্দেশ্য এবং “জন্মে’ বিধেয়।
এ রকম : বৃষ্টি হচ্ছে। তােমরা বাড়ি যাও।
খােকা আজ সকালে স্কুলে গিয়েছে।
স্নেহময়ী জননী (উদ্দেশ্য)
বীয় সন্তানকে প্রাণাপেক্ষা ভালােবাসেন (বিধেয়)।
বিশ্ববিখ্যাত মহাকবিরা (উদ্দেশ্য) ঐন্দ্রজালিক শক্তিসম্পন্ন
লেখনী দ্বারা অমরতার সঙ্গীত রচনা করেন (বিধেয়)।
১. দুর্জন লােক পরিত্যাজ্য।
২. চুল পাকলেও তার বুদ্ধি পাকে নি।
৩. বিকেল পাঁচটায় কুমিল্লা পৌছলাম।
৪. ধার্মিকেরা সুখী।
৫. কলম থাকলে লেখা যেত।
৬. ভিক্ষুককে দান কর।
৭. গুণবান ব্যক্তি বিনয়ী হন।
৮. সে তার পিতার ঋণ পরিশােধ করেছে।
৯. পরিশ্রমী লােকই সাফল্য লাভ করে।
১০. পরােপকারীকে সকলে শ্রদ্ধা করে।
১১. মেঘ করলে বৃষ্টি হয়।
১২. দরিদ্র হলেও তিনি সুখী।
১৩. তিনি দরিদ্র হলেও অসাধু নন।
১৪. সাবধান না হলে বিপদে পড়বে।
১৫. আমি এ সাক্ষী চাই না।
১৬. কর্মরত ব্যক্তিকে বিরক্ত করাে না।
১৭.‘সত্যবাদীকে সকলেই ভালবাসে
১৮. মিথ্যা কথা বলার জন্য তােমার পাপ হবে।
১৯. ধনীরা প্রায়ই কৃপণ হয়।
২০. আমি বহু কষ্টে পাশ / শিক্ষা লাভ করেছি।
২০. সত্য কথা না বলে বিপদে পড়েছি।
২০. আমার হারানাে কলমটি ফিরে পেয়েছি।
২১ . নির্বোধেরাই শুধু এ কাজ করে।
২২. তার কাছে সকলেই প্রার্থিত বস্তু পেত।
২৩. গাড়িঘােড়া চড়তে হলে লেখাপড়া কর।
২৪. তােমার কথাগুলাে অসত্য।
২৫. বিদ্বান ব্যক্তি সর্বত্র পূজিত হন।
২৬. কর্মের অনুরূপ ফল পাবে।
২৭. মূর্খ লােক অবজ্ঞার পাত্র।
২৮ .মিথ্যাবাদীকে কেউ বিশ্বাস করে না।
২৯. দোষ স্বীকার করলে তােমার কোনাে শাস্তি হবে না।
৩০. সূর্যোদয়ে পদ্মফুল ফোটে।
৩১. বৃষ্টি হলে বের হব না।
৩২. আমার কেনা বইটি খুব দামি
একটি পূর্ণ বাক্যে যদি একটি প্রধান খণ্ডবাক্য ও এক বা একাধিক অপ্রধান
খণ্ডবাক্য পরস্পর সম্পর্কযুক্ত থাকে, তবে তাকে জটিল বাক্য বলে।
যেমন- যারা মাতৃভাষার মূল্য
দেয় না, তারা মায়ের মূল্য দিতে জানে না।
এ বাক্যে দুটি খণ্ডবাক্য রয়েছে –একটি হলো : যারা মাতৃভাষার মূল্য দেয় না , অন্যটি হলো : তারা মায়ের মূল্য দিতে জানে না।
দুটি বাক্যের একটি অপরটির ওপর নির্ভরশীল। একটি বাদে অন্যটির স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ সম্ভব নয়। অতএব, এটি একটি জটিল বা মিশ্র বাক্য।
আশ্রিত বাক্য | প্রধান খণ্ডবাক্য |
---|---|
১. যে পরিশ্রম করে, | সে-ই সুখ লাভ করে |
২. সে যে অপরাধ করেছে, | তা মুখ দেখেই বুঝেছি। |
আশ্রিত খণ্ডবাক্য তিন প্রকার : (ক) বিশেষ্য স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য, (খ) বিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য, (গ) ক্রিয়া বিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য।
(ক) বিশেষ্য স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য (Noun clause) : যে আশ্রিত খণ্ডবাক্য (Subordinate clause)
প্রধান খণ্ডবাক্যের যে কোনাে পদের আশ্রিত থেকে বিশেষ্যের কাজ করে, তাকে বিশেষ্যস্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য বলে।
যথা :
- আমি মাঠে গিয়ে দেখলাম, খেলা শেষ হয়ে গিয়েছে। (বিশেষ্য স্থানীয় খণ্ডবাক্য ক্রিয়ার কর্মরূপে ব্যবহৃত)
তদ্রুপ : তিনি বাড়ি আছেন কি না, আমি জানি না।
ব্যাপারটি নিয়ে ঘাটাঘাটি করলে ফল ভালাে হবে না।
(খ) বিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য (Adjective clause) : যে আশ্রিত খণ্ডবাক্য প্রধান খণ্ডবাক্যের
অন্তর্গত কোনাে বিশেষ্য বা সর্বনামের দোষ, গুণ এবং অবস্থা প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য বলে।
যথা :
-লেখাপড়া করে যেই, গাড়ি ঘােড়া চড়ে সেই। (আশ্রিত বাক্যটি ‘সেই সর্বনামের অবস্থা প্রকাশ করছে)।
তদ্রুপ : ‘খাঁটি সােনার চাইতে খাটি, আমার দেশের মাটি'।
‘ধনধান্য পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা।
যে এ সভায় অনুপস্থিত, সে বড় দুর্ভাগা।
গ) ক্রিয়া-বিশেষণ থানীয় খণ্ডবাক্য (Adverbial clause) : যে আশ্রিত খণ্ডবাক্য ক্রিয়াপদের স্থান, কাল
ও কারণ নির্দেশক অর্থে ব্যবহূত হয় তাকে ক্রিয়া-বিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য বলে।
যেমন –
‘যতই করিবে দান, তত যাবে বেড়ে।
তুমি আসবে বলে আমি অপেক্ষা করছি।
যেখানে আকাশ আর সমুদ্র একাকার হয়ে গেছে, সেখানেই দিকচক্রবাল।
১. যে পরিশ্রম করে, সেই সুখলাভ করে ।
২. যে ব্যক্তির মাথায় বুদ্ধি নেই, সে পরের সমালােচনায় উদ্বিগ্ন হয় ।
৩. সবাই জানেন যে, কালাে টাকার মালিকগণ সুখী হন না।
৪. লেখাপড়া বিষয়ে তার যে গভীর অনুরাগ ছিল, একথা বলা যায় না ।
৫. যদি তারে নাই চিনি গাে, সে কি আমায় নেবে চিনে।
৬. আমি মাঠে গিয়ে দেখলাম, খেলা শেষ হয়ে গিয়েছে।
৭. তিনি বাড়ি আছেন কিনা আমি জানি না।
৮. লেখাপড়া করে যেই, গাড়ি ঘােড়া চড়ে সেই ।
৯. খাটি সােনার চাইতে খাটি আমার দেশের মাটি
১০. ধনধান্য পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা ।
১১. যতই করিবে দান, ততই যাবে বেড়ে ।
১২. তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা, সখিনা বিবির কপাল ভাঙল।
১৩. তুমি ঢাকায় যাবে বলে, আমি উদ্বিগ্ন হয়ে আছি।
১৪. যারা ভালাে ছাত্র, তারা শিক্ষককে শ্রদ্ধা করে।
১৫. যে ভিক্ষা চায়, তাকে দান কর ।
১৬. যাদের বুদ্ধি নেই, তারাই একথা বিশ্বাস করবে ।
১৭. যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন এ ঋণ স্বীকার করব ।
১৮. যদি সে কাল আসে, তাহলে আমি যাবাে।
১৯. যখন বিপদ আসে, তখন দুঃখও আসে।
যেহেতু, সেহেতু প্রয়ােগেও জটিল বাক্য হতে পারে। যেমন :
২০. যেহেতু তুমি প্রথম হয়েছ, সেহেতু পুরস্কার তুমিই পাবে ।
২১. যেহেতু পড়াশােনা করেছ, সেহেতু কৃতকার্য হবেই।
২২. যেহেতু বৃষ্টিতে ভিজেছ, সেহেতু সর্দি তােমার হবেই।
২৩. যেহেতু নির্বাচন হয়েছে, সেহেতু দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবেই ।
পরস্পর নিরপেক্ষ দুই বা ততােধিক সরল বা মিশ্র বাক্য মিলিত হয়ে একটি সম্পূর্ণ বাক্য
গঠন করলে তাকে যৌগিক বাক্য বলে।
উল্লেখ্য, যৌগিক বাক্যে দুটি স্বাধীন বাক্য থাকে।
যেমন- সে গরিব কিন্তু অসৎ।
তুমি এবং আমি ঢাকা যাব।
জ্ঞাতব্য : যৌগিক বাক্যের অন্তর্গত নিরপেক্ষ বাক্যগুলাে এবং, ও, কিন্তু, অথবা, অথচ , কিংবা, বরং; তথাপি
প্রভৃতি অব্যয় যােগে সংযুক্ত বা সমন্বিত থাকে।
যেমন –
নেতা জনগণকে উৎসাহিত করলেন বটে, কিন্তু, কোনাে পথ দেখাতে পারলেন না।
বস্ত্র মলিন কেন, কেহ জিজ্ঞাসা করিলে সে ধােপাকে গালি পাড়ে, অথচ ধৌত বস্ত্রে তাহার গৃহ পরিপূর্ণ।
উদয়াস্ত পরিশ্রম করব, তথাপি অন্যের দ্বারস্থ হব না।
১. মানুষ সূর্যোদয়ে আনন্দিত হয় এবং রাত্রির আগমনে পুলকিত হয়ে থাকে।
২. মােহিতলাল মজুমদার ভালাে অধ্যাপক ছিলেন এবং তিনি বেশ কিছু গুরুত্ত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন।
৩. উদয়াস্ত পরিশ্রম করব, তথাপি অন্যের দ্বারস্থ হব না ।
৪. গিয়াস পড়াশােনা করেছিল প্রচুর কিন্তু পরীক্ষায় পাস করে নি
৫. জননেতা জনগণকে উৎসাহিত করলেন বটে, কিন্তু কোনাে পথ দেখাতে পারলেন না ।
৬. তার বয়স হয়েছে, কিন্তু বুদ্ধি হয় নি ।
৭. তিনি অত্যন্ত দরিদ্র কিন্তু তার অন্তঃকরণ অতিশয় উচ্চ ।
৮. তার টাকা আছে, কিন্তু তিনি দান করেন না।
৯. তিনি আমাকে দশটি টাকা দিলেন এবং বাড়ি যেতে বললেন।
১০. আমি বহু কষ্ট করেছি, ফলে শিক্ষা লাভ করেছি।
১১. মিথ্যা কথা বলি নি, তাই বিপদে পড়েছি।
১২. তার বয়স বেড়েছে, কিন্তু বুদ্ধি পাকে নি।
১৩. মেঘ গর্জন করে, তবে ময়ূর নৃত্য করে।
১৪. বিপদ এবং দুঃখ এক সময়ে আসে।
১৫. মন্ত্রী এলাকা পরিদর্শনে যাবেন ও বন্যার্তদের তিনি সাহায্য দেবেন।
১৬. সে না এলে তুমি যাবে না, কিন্তু সে বলে পাঠিয়েছে যে তার আসতে দেরি হবে।
১৭. তারা দুজনে খুব ঝগড়া করে বটে, কিন্তু একজন যদি খাবার জন্য একটি বার্গার পায় দুজনে ভাগ করে খায়।
১৮. সে কারাে বশ্যতা স্বীকার করতে চায়, এদিকে টাকা অভাব হলেই যার তার কাছে আত্মসম্মান বলি দিয়ে হাতে পাতে।
অর্থের কোনােরূপ রূপান্তর না করে এক প্রকারের বাক্যকে অন্য প্রকার বাক্যে রূপান্তর করার নামই বাক্য রূপান্তর।
✔ সরল বাক্যকে মিশ্র বাক্যে রূপান্তর
✔ জটিল / মিশ্র বাক্যকে সরল বাক্যে রূপান্তর
✔ সরল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর
✔ যৌগিক বাক্যকে সরল বাক্যে রূপান্তর
✔ যৌগিক বাক্যকে মিশ্র বাক্যে রূপান্তর
✔ মিশ্রবাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর
সরল বাক্যকে মিশ্র বাক্যে পরিণত করতে হলে সরল বাক্যের কোনাে অংশকে খণ্ডবাক্যে পরিণত করতে হয়। এবং উভয়ের সংযােগ বিধানে সম্বন্ধসূচক (যদি, তবে, যে, সে প্রভৃতি) পদের সাহায্যে উক্ত খণ্ডবাক্য ও প্রধান বাক্যটিকে পরস্পর সাপেক্ষ করতে হয়। যথা :
সরল বাক্য | মিশ্র বা জটিল বাক্য |
---|---|
ভালাে ছেলেরা শিক্ষকের আদেশ পালন করে। | যারা ভালাে ছেলে, তারা শিক্ষকের আদেশ পালন করে। |
তার দর্শনমাত্রই আমরা প্রস্থান করলাম। | যে-ই তার দর্শন পেলাম , সে-ই আমরা প্রস্থান করলাম। |
ভিক্ষুককে দান কর। | যে ভিক্ষা চায়, তাকে দান কর। |
ধার্মিকেরা প্রকৃত সুখী। | যারা ধার্মিক তারাই প্রকৃত সুখী। |
পরিশ্রমী লােকেরাই উন্নতি করে। | যে লােকেরা পরিশ্রমী তারাই উন্নতি করে। |
মানুষ তার কর্ম অনুযায়ী ফলভােগ করে। | মানুষ যেমন কর্ম করে সে অনুযায়ী ফলভােগ করে। |
তােমার এ অবস্থার কথা কখনাে ভাবিনি। | তােমার এ অবস্থা হবে তা কখনাে ভাবিনি। |
আপনার নির্দেশ মতাে কাজ করব। | আপনি যে নির্দেশ দেবেন সে মত কাজ করব। |
দরিদ্রকে সাহায্য কর। | যে দরিদ্র, তাকে সাহায্য কর । |
আমি তােমাকে নিতে এসেছি। | আমি তােমাকে নেব বলে এসছি। |
সে তার পিতার ঋন পরিশােধ করেছে। | তার পিতা যে ঋণ করেছিল, সে তা পরিশােধ করেছে। |
বিদ্যাহীন মানুষ মানুষই নয়। | যে মানুষ বিদ্যাহীন, সে মানুষই নয়। |
ভাল ছেলেরা গুরুজনের কথা মেনে চলে। | যারা ভাল ছেলে, তারা গুরুজনের কথা মেনে চলে। |
দুর্জন লােক পরিত্যাজ্য। | যে লােক দুর্জন, সে পরিত্যাজ্য। |
চুল পাকলেও তার বুদ্ধি পাকে নি। | যদিও তার চুল পেকেছে, তবু তার বুদ্ধি পাকে নি। |
বিকেল পাঁচটায় কুমিল্লা পৌছলাম। | বিকেল যখন পাঁচটা, তখন কুমিল্লা পৌছলাম। |
ধার্মিকেরা সুখী। | যারা ধার্মিক, তারা সুখী। |
কলম থাকলে লেখা যেত। | যদি কলম থাকত, তাহলে লেখা যেত। |
গুণবান ব্যক্তি বিনয়ী হন। | যিনি গুণবান ব্যক্তি, তিনি বিনয়ী হন। |
সে তার পিতার ঋণ পরিশােধ করেছে। | তার পিতা যে ঋণ করেছিলেন, তা সে পরিশােধ করেছে। |
পরিশ্রমী লােকই সাফল্য লাভ করে। | যে লােক পরিশ্রমী, সে সাফল্য লাভ করে। |
পরােপকারীকে সকলে শ্রদ্ধা করে। | যিনি পরের উপকার করেন, তাঁকে সকলেই শ্রদ্ধা করে। |
মেঘ করলে বৃষ্টি হয়। | যখন মেঘ করে, তখন বৃষ্টি হয়। |
দরিদ্র হলেও তিনি সুখী। | যদিও তিনি দরিদ্র, তবু তিনি সুখী। |
তিনি দরিদ্র হলেও অসাধু নন। | যদিও তিনি দরিদ্র, তবু তিনি অসাধু নন। |
সাবধান না হলে বিপদে পড়বে। | যদি তুমি সাবধান না হও, তাহলে বিপদে পড়বে। |
আমি এ সাক্ষী চাই না। | যে সাক্ষী এরকম, তাকে আমি চাই না। |
কর্মরত ব্যক্তিকে বিরক্ত করাে না। | যে ব্যক্তি কর্মরত আছে, তাকে বিরক্ত করাে না। |
‘সত্যবাদীকে সকলেই ভালবাসে | ‘যে সত্য কথা বলে তাকে সকলেই ভালবাসে। |
মিথ্যা কথা বলার জন্য তােমার পাপ হবে। | যেহেতু তুমি মিথ্যা বলেছ, সেহেতু তােমার পাপ হবে। |
ধনীরা প্রায়ই কৃপণ হয়। | যাদের ধন আছে, তারা প্রায়ই কৃপণ হয়। |
আমি বহু কষ্টে পাশ / শিক্ষা লাভ করেছি। | যেহেতু আমি বহু কষ্ট করেছি, তাই আমি পাশ / শিক্ষা লাভ করেছি। |
সত্য কথা না বলে বিপদে পড়েছি। | যেহেতু আমি সত্য কথা বলি নি, তাই আমি বিপদে পড়েছি। |
আমার হারানাে কলমটি ফিরে পেয়েছি। | আমার যে কলমটি হারিয়েছিল, সেটি ফিরে পেয়েছি। |
নির্বোধেরাই শুধু এ কাজ করে। | যারা নির্বোধ তারাই শুধু এ কাজ করে। |
তার কাছে সকলেই প্রার্থিত বস্তু পেত। | তার কাছে যে যা চাইত, সে তাই পেত। |
গাড়িঘােড়া চড়তে হলে লেখাপড়া কর। | যদি গাড়িঘােড়া চড়তে চাও, তবে লেখাপড়া কর। |
তােমার কথাগুলাে অসত্য। | তুমি যা বললে তা অসত্য। |
বিদ্বান ব্যক্তি সর্বত্র পূজিত হন। | যিনি বিদ্বান, তিনি সর্বত্র পূজিত হন |
কর্মের অনুরূপ ফল পাবে। | যেমন কর্ম করবে, তেমন ফল পাবে। |
মূর্খ লােক অবজ্ঞার পাত্র। | যে লােক মূর্খ, সে অবজ্ঞার পাত্র। |
দোষ স্বীকার করলে তােমার কোনাে শাস্তি হবে না। | যদি দোষ স্বীকার কর, তবে তােমার কোনাে শাস্তি হবে না। |
সূর্যোদয়ে পদ্মফুল ফোটে। | যখন সূর্য উদিত হয়, তখন পদ্মফুল ফোটে। |
বৃষ্টি হলে বের হব না। | যদি বৃষ্টি হয়, তবে বের হব না। |
আমার কেনা বইটি খুব দামি | যে বইটি আমি কিনেছি, সেটি খুব দামি। |
মিশ্র বাক্যকে সরল বাক্যে রূপান্তর করতে হলে মিশ্র বাক্যের অপ্রধান খণ্ডবাক্যটিকে সংকুচিত করে একটি পদ বা একটি বাক্যাংশে পরিণত করতে হয়। যথা -
মিশ্র বাক্য | সরল বাক্য |
---|---|
যাদের বুদ্ধি নেই, তারাই এ কথা বিশ্বাস করবে। | নির্বোধরা/বুদ্ধিহীনরা এ কথা বিশ্বাস করবে। |
যতদিন জীবিত থাকব, ততদিন এ ঋণ স্বীকার করব। | আজীবন এ ঋণ স্বীকার করব। |
যে সকল পশু মাংস ভােজন করে, তারা অত্যন্ত বলবান। | মাংসভােজী পশু অত্যন্ত বলবান। |
যে বাংলা আমার দেশ, এমন দেশ আর পৃথিবীতে নেই। | আমার বাংলার মতাে দেশ আর পৃথিবীতে নেই। |
যারা সৎ ব্যক্তি, তারাই সুখী। | সৎ ব্যক্তিরাই সুখী। |
যে কলমটি কিনেছি তাতে আমার আশি টাকা লেগেছে। | কলমটি কিনতে আমার আশি টাকা লেগেছিল। |
যদি শরীর ভালাে থাকে তাহলে খেলতে যাবাে। | শরীর ভালাে থাকলে খেলতে যাবাে। |
আমি যতটা সাধ্য ততটা চেষ্টা করছি। | আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। |
যে ব্যক্তি আশ্রয় গ্রহণ করেছে, তাকে রক্ষা করা উচিত। | আশ্রিত ব্যক্তিকে রক্ষা করা উচিত |
যে মিথ্যা কথা বলে, তাকে কেউ পছন্দ করে না। | মিথ্যাবাদীকে কেউ পছন্দ করে না । |
যে সত্য কথা বলে সবাই তাকে ভালােবাসে। | সত্যবাদীকে সবাই ভালােবাসে। |
যিনি বিদ্বান, তিনি সর্বত্র আদরণীয়। | বিদ্বান সর্বত্র আদরণীয়। |
আমরা আনন্দিত হয়েছি যে, তিনি উচ্চশিক্ষা লাভ করেছেন। | তাঁর উচ্চ শিক্ষা লাভে আমরা আনন্দিত হয়েছি। |
“যদি তুমি নবমালিকা কুসুমকোমলা, তথাপি তােমায় আলবালজলসেচনে নিযুক্ত করিয়াছেন।' | ‘তুমি নবমালিকা কুসুমকোমলা হওয়া সত্ত্বেও তােমায় আলবালজলসেচনে নিযুক্ত করিয়াছেন। |
শরাসনে যে শর সংহিত করিয়াছেন, আশু তাহার প্রতিসংহার করুন। | ‘শরাসনে সংহিত শর আশু প্রতিসংহার করুন। |
‘যদিচ কেহ কহিয়া দিতেছে না, তথাপি তপােবন বলিয়া বােধ হইতেছে। | কেহ কহিয়া না দিলেও তপােবন বলিয়া বােধ হইতেছে। |
তােমার যিনি বাপ তার নাম কী? | তােমার বাপের নাম কী? |
তার ভাই যে ঋণ করেছিল, সে তা পরিশােধ করেছে। | সে তার ভাইয়ের ঋণ পরিশােধ করেছে। |
যদিও তিনি বিদ্বান, তবু তার বিন্দুমাত্র অহঙ্কার নেই। | বিদ্বান হলেও তার বিন্দুমাত্র অহঙ্কার নেই। |
যদিও তুমি ধনী, তবু উদার নও। | ধনী হলেও তুমি উদার নও। |
যে সৎ লােক সে কখনােই মিথ্যার সঙ্গে আপস করে না। | সৎ লোেক কখনােই মিথ্যার সঙ্গে আপস করে না। |
যখন সে সুসংবাদটা পেল, তখন সে আনন্দিত হল। | সুসংবাদটা পেয়ে সে আনন্দিত হল। |
ইন্দ্রের যেমন ঐরাবত আমার তেমনি পদ্মা | ইন্দ্রের ঐরাবতের মতাে আমার পদ্ম। |
তাদের যে দৃষ্টি তাতে সামান্য বিস্ময়ের ভাব। | তাদের দৃষ্টিতে সামান্য বিস্ময়ের ভাব। |
যে রক্ষক, সেই ভক্ষক। | রক্ষকই ভক্ষক। |
যারা পরিশ্রম করে, তারাই জীবনে সাফল্য লাভ করে। | পরিশ্রমী ব্যক্তিরাই জীবনে সাফল্য লাভ করে। |
যারা ছাত্র, তাদের অধ্যয়নই তপস্যা। | ছাত্রদের অধ্যয়নই তপস্যা। |
যদি পাশ করতে চাও, তাহলে পড়। | পাশ করতে চাইলে পড়। |
আমার এমন কিছু নেই যা তােমাকে দিতে পারি। | তােমাকে দেওয়ার মত আমার কিছুই নেই। |
অনেকেরই জীবনে প্রথম দুঃখ আসে, পরে সুখ আসে। | অনেকেরই জীবনে দুঃখের পর সুখ আসে। |
যিনি জ্ঞানী, তিনিই সত্যিকার ধনী। | জ্ঞানীই সত্যিকার ধনী। |
ঈদের যখন ছুটি হবে তখন আমরা বাড়ি যাব। | ঈদের ছুটিতে আমরা বাড়ি যাব। |
যে অন্ধ তাকে আলাে দাও। | অন্ধকে আলাে দাও। |
পৃথিবীতে এমন কিছু নেই, যা অসম্ভব। | পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কিছু নেই। |
যারা দেশ প্রেমিক, তারা দেশকে ভালোেবসে। | দেশ প্রেমিকেরা দেশকে ভালােবাসে। |
অনেকের যদিও নিবাস থাকে, আমার তা নেই। | অনেকের নিবাস থাকলেও আমার নিবাস নাই। |
শত্রুতা অনেকের সঙ্গে থাকে, বন্ধুত্ব থাকে কম মানুষের সঙ্গে। | শত্রুতা অনেকের সঙ্গে থাকলেও বন্ধুত্ব থাকে কম মানুষের সঙ্গে। |
বাঙালির যে আত্মজাগরণ, তা অভিনন্দনের দাবি রাখে। | বাঙালির আত্মজাগরণ অভিনন্দনের দাবি রাখে। |
যাদের বুদ্ধি নেই, তারাই এ কথা বিশ্বাস করবে। | নির্বোধরাই এ কথা বিশ্বাস করবে। |
যারা ভাল ছেলে, তারা গুরুজনের কথা মেনে চলে। | ভাল ছেলেরা গুরুজনের কথা মেনে চলে। |
যা বার্ধক্য, তাকে সব সময় বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না। | বার্ধক্যকে সবসময় বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না। |
যে ছেলেরা ভালাে, তারা শিক্ষকের আদেশ পালন করে। | ভালাে ছেলেরা শিক্ষকের আদেশ পালন করে। |
সরল বাক্য | যৌগিক বাক্যে |
---|---|
তিনি আমাকে পাঁচ টাকা দিয়ে বাড়ি যেতে বললেন। | তিনি আমাকে পাঁচটি টাকা দিলেন এবং বাড়ি যেতে বললেন। |
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য এখন থেকেই তােমার পড়া উচিত। | এখন থেকেই তােমার পড়া উচিত, তবেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে। |
আমি বহু কষ্টে শিক্ষা লাভ করেছি। | আমি বহু কষ্ট করেছি, ফলে শিক্ষা লাভ করেছি। |
তিনি বিদ্বান হলেও দরিদ্র। | তিনি বিদ্বান কিন্তু দরিদ্র। |
এখন না গেলে পৌছতে পারবে না। | এখন যাও, নতুবা পৌছতে পারবে না। |
নেতার ভাষণ শেষ হলে আমরা বাড়ি ফিরে এলাম। | নেতার ভাষণ শেষ হলাে এবং আমরা বাড়ি ফিরে এলাম। |
তার অনেক টাকা থাকা সত্ত্বেও কোনাে দান-দক্ষিণা করেন না। | তার অনেক টাকা আছে কিন্তু কোনাে দান-দক্ষিণা করেন না। |
তুমি আসবে বলে অপেক্ষা করেছিলাম। | তুমি আসবে, অতএব অপেক্ষা করেছিলাম। |
সারা বছর পড়া ফাকি দিয়েছ বলে পরীক্ষায় ফেল করেছ। | সারা বছর পড়ায় ফাকি দিয়েছ আর সে জন্যই পরীক্ষায় ফেল করেছ। |
দেরি করে স্কুলে আসার জন্য সে প্রতিদিন বকুনি খায়। | সে দেরি করে স্কুলে আসে এবং সে জন্য প্রতিদিন বকুনি খায় । |
তার প্রচুর সম্পদ থাকলেও সে সুখী নয়। | তার প্রচুর সম্পদ আছে বটে কিন্তু সে সুখী নয় । |
সত্য কথা বলাতে তুমি মুক্তি পেলে। | তুমি সত্য কথা বলেছ তাই মুক্তি পেলে। |
লতিফ সাহেব বহু পরিশ্রমে জীবনে উন্নতি করেছেন। | লতিফ সাহেব বহু পরিশ্রম করেছেন ফলে জীবন উন্নতি করেছেন। |
গঙ্গা হিমালয় থেকে উৎপন্ন হয়ে সাগরে পড়েছে। | গঙ্গা হিমালয় থেকে উৎপন্ন হয়েছে তারপর সাগরে পড়েছে। |
জ্ঞানী বলেই তিনি বিনয়ী ছিলেন। | তিনি জ্ঞানী ছিলেন, সে জন্যই তিনি বিনয়ী ছিলেন। |
সে অনেক চেষ্টা করে সাফল্য লাভ করেছে। | সে অনেক চেষ্টা করেছে, তাই সাফল্য লাভ করেছে। |
সূর্যোদয়ে অন্ধকার দূর হয়। | সূর্য উদিত হয়, তবে অন্ধকার দূর হয়। |
সত্য কথা না বলে বিপদে পড়েছ। | সত্য কথা বলনি, তাই বিপদে পড়েছ। |
তার বয়স হলেও বুদ্ধি হয় নি। | তার বয়স হয়েছে, কিন্তু বুদ্ধি হয় নি। |
সত্য কথা স্বীকার না করলে শাস্তি পাবে। | সত্য কথা স্বীকার কর, নতুবা শাস্তি পাবে। |
তিনি ধনী হলেও দাতা নন। | তিনি ধনী, কিন্তু দাতা নন। |
তিনি ধনী হয়েও সুখী ছিলেন না। | তিনি ধনী ছিলেন, কিন্তু সুখী ছিলেন না। |
সৎ ব্যক্তি বলে সকলে তাকে সম্মান করে। | লােকটি সৎ, তাই সকলে তাকে সম্মান করে। |
তার ভাল ফলাফলে আমরা আনন্দিত হয়েছি। | সে ভাল ফলাফল করেছে, তাই আমরা আনন্দিত হয়েছি। |
পড়াশােনা করলে জীবনে উন্নতি করতে পারবে। | পড়াশােনা কর, তবে জীবনে উন্নতি করতে পারবে। |
সে পরিশ্রমী হলেও নির্বোধ। | সে পরিশ্রমী বটে, কিন্তু নির্বোধ। |
পৃথিবীতে অবাস্তব বলে কিছু নেই। | পৃথিবীতে অনেক কিছু আছে, কিন্তু অবাস্তব কিছু নেই। |
বিদ্বান হলেও তার অহঙ্কার নেই। | তিনি বিদ্বান, কিন্তু তার অহঙ্কার নেই। |
কোথাও ধার না পেয়ে তােমার কাছে এসেছি। | কোথাও ধার পাই নি, তাই তােমার কাছে এসেছি। |
কোথাও পথ না পেয়ে তােমার কাছে এসেছি। | কোথাও পথ পেলাম না, তাই তােমার কাছে এসেছি। |
দরিদ্র হলেও তার মন ছােট নয়। | সে দরিদ্র, কিন্তু তার মন ছােট নয়। |
পণ্ডিত হওয়া সত্ত্বেও সে বিনয়ী নয়। | সে পণ্ডিত, কিন্তু বিনয়ী নয়। |
সে তার ভাইয়ের ঋণ পরিশােধ করেছে। | তার ভাই ঋণ করেছিল , আর সে তা পরিশােধ করেছে। |
অনেকেরই জীবনে দুঃখের পরে সুখ আসে। | অনেকেরই জীবনে দুঃখ এবং সুখ একসঙ্গে আসে। |
তিনি বিদ্বান হলেও তার অহঙ্কার নেই। | তিনি বিদ্বান, কিন্তু তার অহঙ্কার নেই। |
দশ মিনিট পর ট্রেন এলাে। | দশ মিনিট অতিক্রান্ত হল, তারপর ট্রেন এলাে। |
যৌগিক বাক্যকে সরল বাক্যে রূপান্তর করতে হলে,
✔ বাক্যসমূহের একটি সমাপিকা ক্রিয়াকে অপরিবর্তিত রাখতে হয়।
✔ অন্যান্য সমাপিকা ক্রিয়াকে অসমাপিকা ক্রিয়ায় পরিণত করতে হয়।
✔ অব্যয় পদ থাকলে তা বর্জন করতে হয়।
✔ কোনাে কোনাে স্থলে একটি বাক্যকে হেতুবােধক বাক্যাংশে পরিণত করতে হয়।
যথা :
যৌগিক বাক্যে | সরল বাক্য |
---|---|
সত্য কথা বলিনি, তাই বিপদে পড়েছি। | সত্য কথা না বলে বিপদে পড়েছি। |
তার বয়স হয়েছে, কিন্তু বুদ্ধি হয়নি। | তার বয়স হলেও বুদ্ধি হয়নি। |
মেঘ গর্জন করে, তবে ময়ূর নৃত্য করে। | মেঘ গর্জন করলে ময়ূর নৃত্য করে। |
বাড়িতে উৎসব ছিল অথচ সে যায়নি। | উৎসব বাড়িতে সে যায়নি। |
এখন যাও নতুবা পৌছতে পারবে না। | এখন না গেলে পৌঁছতে পারবে না। |
তােমাকে ওখানে দেখলাম এবং এগিয়ে গেলাম। | তােমাকে ওখানে দেখে এগিয়ে গেলাম। |
তুমি আসবে, অতএব অপেক্ষা করছিলাম। | তুমি আসবে বলে অপেক্ষা করছিলাম |
তিনি বিদ্যানুরাগী ব্যক্তি, সুতরাং সবাই তাকে সম্মান করে। | তিনি বিদ্যানুরাগী ব্যক্তি বলে সবাই তাকে সম্মান করে। |
তিনি অসুস্থ তাই অফিসে আসতে পারেন নি । | অসুস্থতার কারণে তিনি অফিসে আসতে পারেন নি । |
সূর্য অস্ত গেল এবং চাঁদ হেসে উঠল । | সূর্য অস্ত গেলে চাঁদ হেসে উঠল । |
তিনি ধনী কিন্তু অত্যন্ত কৃপণ । | তিনি ধনী হলেও অত্যন্ত কৃপণ । |
সে মিথ্যা কথা বলে এজন্য তাকে সবাই ঘৃণা করে। | মিথ্যা কথা বলার কারণে তাকে সবাই ঘৃণা করে। |
লােকটি অশিক্ষিত, কিন্তু অভদ্র নয়। | লােকটি অশিক্ষিত হলেও অভদ্র নয়। |
পড়াশুনা কর, নতুবা ভবিষ্যৎ অন্ধকার। | পড়াশুনা না করলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার। |
কাজ কর, না হয় বসে পড়। | কাজ না করলে বসে পড়। |
তার গায়ে একটুও মাংস নেই, কেবল ক’খানা হাড়। | কেবল ক'খানা হাড় ছাড়া তার গায়ে একটুও মাংস নেই। |
অনেক দেখা হল বটে, তবু দেখা শেষ হল না। | অনেক দেখেও দেখা শেষ হল না। |
সে এখানে এল এবং বসে পড়ল। | এখানে এসেই সে বসে পড়ল। |
সে লােকটিকে খুন করেছিল এবং তার মাথা ঠাণ্ডা ছিল। | সে ঠাণ্ডা মাথায় লােকটিকে খুন করেছিল। |
আমি অত্যন্ত দুর্বল, তাই আমি কোন কাজ করতে পারছি না। | অত্যন্ত দুর্বলতাবশত আমি কোন কাজ করতে পারছি না। |
দয়া করুন এবং সব খুলে বলুন। | দয়া করে সব খুলে বলেন। |
তিনি সত্যের পূজারি, এজন্য তিনি জগতের সর্বত্র আদৃত। | সত্যের পূজারি বলে তিনি জগতের সর্বত্র আদৃত। |
তিনি দরিদ্র ছিলেন, কিন্তু সুখী ছিলেন। | তিনি দরিদ্র হলেও সুখী ছিলেন। |
তিনি আসতে পারলেন না, কারণ তিনি অসুস্থ। | অসুস্থতার কারণে তিনি আসতে পারলেন না। |
আকাশে মেঘ ছিল না, কিন্তু বজ্রপাত হল। | আকাশে মেঘ না থাকা সত্ত্বেও বজ্রপাত হল। |
সে মােটা বটে, কিন্তু তার গায়ে শক্তি নেই। | মােটা হলেও তার গায়ে শক্তি নেই। |
এখনই যাও, নচেৎ তার দেখা পাবে না। | এখনই না গেলে তার দেখা পাবে না। |
আর লাভের আশা নেই, তাই বাড়ি ফিরতে হল। | আর লাভের আশা নেই বলে বাড়ি ফিরতে হল। |
ধর্নের ধর্ম আছে, কিন্তু তা অসাম্য। | ধনের ধর্মই অসাম্য। |
তিনি ধনী ছিলেন, কিন্তু সুখী ছিলেন না। | তিনি ধনী হলেও সুখী ছিলেন না। |
দোষ স্বীকার কর, তােমাকে শাস্তি দেয়া হবে না। | দোষ স্বীকার করলে তােমাকে শাস্তি দেয়া হবে না। |
এত সাধনা করলাম কিন্তু তােমার মন পেলাম না। | এত সাধনা করেও তােমার মন পেলাম না। |
পরিশ্রমী ব্যক্তি পরিশ্রম করে এবং সুখী হয়। | পরিশ্রমী ব্যক্তি সুখী হয়। |
তাহাকে আমি সব দিতে পারি, কিন্তু মুক্তি দিতে পারি না। | তাহাকে আমি সব দিতে পারিলেও মুক্তি দিতে পারি না৷ |
তুমি আসবে এবং আমি যাব। | তুমি এলে আমি যাব। |
ছেলেটি গরিব কিন্তু মেধাবী। | ছেলেটি গরিব হলেও মেধাবী। |
লােভ পরিত্যাগ কর, তুমি সুখে থাকবে। | লােভ পরিত্যাগ করলে তুমি সুখে থাকবে। |
তিনি দরিদ্র, কিন্তু ভদ্র | তিনি দরিদ্র হলেও ভদ্র। |
আমার কথা বিশ্বাস কর, তােমার মঙ্গল হবে। | আমার কথা বিশ্বাস করলে তােমার মঙ্গল হবে। |
তুমি অধম, তাই বলে আমি উত্তম হব না কেন? | তুমি অধম বলে আমি উত্তম হব না কেন ? |
আমি এসেছি, কারণ তােমাকে নিয়ে যাব। | আমি তােমাকে নিতে এসেছি। |
যৌগিক বাক্যের অন্তর্গত পরস্পর নিরপেক্ষ বাক্য দুটির প্রথমটির পূর্বে ‘যদি’ কিংবা ‘যদিও’ এবং দ্বিতীয়টির পূর্বে ‘তাহলে’ (তাহা হইলে) কিংবা ‘তথাপি’ অব্যয়গুলাে ব্যবহার করতে হয়। যেমন -
যৌগিক বাক্যে | মিশ্র বাক্যে |
---|---|
দোষ স্বীকার কর, তােমাকে কোনাে শাস্তি দেব না। | যদি দোষ স্বীকার কর, তাহলে তােমাকে কোনাে শাস্তি দেব না। |
তিনি অত্যন্ত দরিদ্র কিন্তু তার অন্তঃকরণ অতিশয় উচ্চ। | যদিও তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, তথাপি তার অন্তঃকরণ অতিশয় উচ্চ। |
সাধনা কর, সিদ্ধিলাভ হবে। | যদি সাধনা কর তবে সিদ্ধিলাভ হবে । |
সে দরিদ্র কিন্তু চরিত্রবান । | যদিও সে দরিদ্র, তথাপি সে চরিত্রবান । |
তপুর বয়স অল্প, কিন্তু বেশ বুদ্ধিমান। | যদিও তপুর বয়স অল্প, তথাপি সে বেশ বুদ্ধিমান। |
সে কাল আসবে এবং আমি যাব। | কাল যখন সে আসবে, তখন আমি যাব। |
তুমি ভালাে হও এবং সকলে তােমাকে ভালােবাসবে। | তুমি যদি ভালাে হও, তবে সকলে তােমাকে ভালােবাসবে। |
কাব্য ম্যাজিক হতে পারে, কিন্তু সমালােচনা লজিক হতে বাধ্য। | যদি কাব্য ম্যাজিক হয়, তবে সমালােচনা লজিক হতে বাধ্য। |
সে দরিদ্র বটে, কিন্তু আত্মসম্মান হারায় নি। | যদিও সে দরিদ্র, তথাপি সে আত্মসম্মান হারায় নি। |
সেসব দিন আর নেই, কিন্তু সেসব স্মৃতি এখনও জেগে রয়েছে। | যদিও সেসব দিন আর নেই, তবু সেসব স্মৃতি এখনওজেগে রয়েছে। |
সে মরবে, কিন্তু/ তবু একথা বলবে না। | যদিও সে মরবে, তবু একথা বলবে না |
লােকটি ধনী, কিন্তু কৃপণ। | যদিও লােকটি ধনী, তথাপি সে কৃপণ। |
দোষ স্বীকার কর, তােমাকে শাস্তি দিব না। | যদি দোষ স্বীকার কর, তাহলে তােমাকে শাস্তি দিব না। |
তার আভাস পেতাম, কিন্তু নাগাল পেতাম না। | যদিও তার আভাস পেতাম, তবু তার নাগাল পেতাম না। |
তুমি ধনী, কিন্তু উদার নও। | যদিও তুমি ধনী, তবু তুমি উদার নও। |
দোষ করেছে অতএব শাস্তি পাবে। | যেহেতু তুমি দোষ করেছে, সেহেতু তুমি শাস্তি পাবে। |
লােকটির সবই আছে, কিন্তু সুখী নয়। | যদিও লােকটির সবই আছে, তথাপি সে সুখী নয়। |
‘কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিতেন, কিন্তু বরের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না। | ‘যদিও কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিতেন, তথাপি বরের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না। |
“আমি ছিলাম বর, সুতরাং বিবাহ সম্বন্ধে আমার মত যাচাই করা অনাবশ্যক ছিল। | ‘আমি যেহেতু বর ছিলাম, তাই বিবাহ সম্বন্ধে আমার মত যাচাই করা অনাবশ্যক ছিল। |
‘শিশিরের বয়স যথাসময়ে যােল হইল, কিন্তু সেটা স্বভাবের সােল। | যদিও শিশিরের বয়স যথাসময়ে ষােল হইল, তবে সেটা স্বভাবের মােল। |
পিতা তাে আছেন, তাই পুত্রকে খোজ কেন? | পিতা যখন আছেন, তখন পুত্রকে খোজ কেন? |
সাপেক্ষ অব্যয়ের সাহায্যেও যৌগিক বাক্যকে মিশ্র বাক্যে পরিবর্তন করা যায়। যথা :
এ গ্রামে একটি দরগাহ আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত হয়েছে। | এ গ্রামে যে দরগাহ আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত হয়েছে। |
কঠোর পরিশ্রম কর নিশ্চয়ই সফল হবে। | যদি কঠোর পরিশ্রম কর, তবে নিশ্চয়ই সফল হবে। |
মিশ্র বাক্যকে যৌগিক বাক্যে পরিবর্তন করতে হলে খণ্ডবাক্যগুলােকে এক একটি স্বাধীন বাক্যে পরিবর্তন করে তাদের মধ্যে সংযােজক অব্যয়ের ব্যবহার করতে হয়। যেমন :
মিশ্র বাক্য | যৌগিক বাক্য |
---|---|
যদি সে কাল আসে, তাহলে আমি যাব। | সে কাল আসবে এবং আমি যাব। |
যখন বিপদ আসে, তখন দুঃখও আসে। | বিপদ এবং দুঃখ এক সময়ে আসে। |
যদিও তার টাকা আছে, তথাপি তিনি দান করেন না। | তার টাকা আছে, কিন্তু তিনি দান করেন না। |
যদিও তিনি অঙ্ক শিক্ষক তবুও মাঝে মধ্যে ইংরেজি পড়ান। | তিনি অঙ্ক শিক্ষক বটে, কিন্তু তবুও মাঝে মধ্যে ইংরেজি পড়ান। |
আমার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন আমি স্কুলে ভর্তি হই । | আমার তখন পাঁচ বছর বয়স, সুতরাং আমি স্কুলে ভর্তি হই। |
যদিও লােকটি দরিদ্র, তা সত্ত্বেও অহংকারী। | লােকটি দরিদ্র কিন্তু অহংকারী । |
যদি তুমি ভালাে হও, তাহলে সবাই তােমায় ভালােবাসবে। | তুমি ভালাে হও, তবে তােমায় সবাই ভালােবাসবে। |
পৃথিবী যে গােলাকার তা আমরা প্রমাণ করতে পারি । | পৃথিবী গােলাকার এবং এটা আমরা প্রমাণ করতে পারি । |
যেহেতু তার ধনসম্পদ আছে এজন সে অত্যন্ত গর্বিত। | তার ধনসম্পদ আছে একজন সে অত্যন্ত গর্বিত। |
যদিও তার শক্তি নেই তথাপি সাহস আছে। | তার শক্তি নেই কিন্তু সাহস আছে। |
যদিও লােকটি মূখ তথাপি তার চরিত্র ভাল । | লােকটি মূর্খ বটে কিন্তু তার চরিত্র ভাল । |
যদিও লােকটি ধনী, তথাপি সে কৃপণ। | লােকটি ধনী, কিন্তু কৃপণ। |
যদিও তার টাকা আছে, তবু তিনি দান করেন না। | তার টাকা আছে, কিন্তু তিনি দান করেন না। |
যদিও সে দরিদ্র, তথাপি সে চরিত্রবান। | সে দরিদ্র, কিন্তু চরিত্রবান। |
যেহেতু সে নিরপরাধ, সেহেতু সে মুক্তি পাবে। | সে নিরপরাধ, অতএব সে মুক্তি পাবে। |
যখন বৃষ্টি থামল, তখন আমরা স্কুলে রওনা হলাম। | বৃষ্টি থামল এবং আমরা স্কুলে রওনা হলাম। |
যদি সাঁতার কাট, তবে স্বাস্থ্য ভাল হবে। | সাঁতার কাট, তবে স্বাস্থ্য ভাল হবে। |
যদি পরিশ্রম কর, তাহলে ফল পাবে। | পরিশ্রম কর, তবে ফল পাবে। |
যদি পানিতে নাম, তবে সঁতার শিখতে পারবে। | পানিতে নাম, তবে সঁতার শিখতে পারবে। |
যদিও তিনি ধনী, তথাপি তিনি অসুখী। | তিনি ধনী, কিন্তু অসুখী। |
যদি সে কাল আসে, তাহলে আমি যাব। | সে কাল আসবে, তার পর আমি যাব। |
যদি পড়াশােনা না কর, তাহলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার। | পড়াশােনা কর, নচেৎ ভবিষ্যৎ অন্ধকার। |
যদিও সে ধনী তথাপি সে গরিবকে ভালবাসে। | সে ধনী বটে, কিন্তু গরিবকে ভালবাসে। |
অর্থানুসারে বাক্য পাঁচ প্রকার। যথা :
১. বিবৃতিমূলক / বর্ণনামূলক বাক্য
২. প্রশ্নবােধক বাক্য
৩. অনুজ্ঞাসূচক বাক্য
৪. ইচ্ছা বা ইচ্ছাসূচক বাক্য
৫. আবেগ বা বিস্ময়সূচক বাক্য
১. বিবৃতিমূলক বাক্য : যে বাক্যে কোনাে ঘটনার ভাব বা অবস্থার বিবৃতি থাকে তাকে বিবৃতিমূলক, বর্ণনাত্মক বা নির্দেশক বাক্য বলা হয়। যেমন-
সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে।
সে রােজ এখানে আসে।
আমি তাকে ভালাে বলেই জানি।
বর্ণনামূলক বাক্যকে দু ভাগে ভাগ করা যায় :
ক. অস্তিবাচক বা সদর্থক বা হ্যাঁ সূচক বাক্য (Affirmative sentence) ও
খ. নঞর্থক
সূচক বাক্য(Negative sentence)
ক. হ্যাঁ-সূচক বর্ণনামূলক বাক্য : যে বর্ণনামূলক বাক্যের দ্বারা কোনাে কিছু স্বীকার করে নেয়া হয়, তাকে হা-সূচক বা সদর্থক বর্ণনামূলক বাক্য বলে। যেমন-
পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘােরে।
আমি আজ সেখানে যাব।
না-সূচক বর্ণনামূলক বাক্য : যে বর্ণনামূলক বাক্যের সাহায্যে কোনাে কিছু অস্বীকার করে।
নেয়া হয়, তাকে না-সূচক বর্ণনামূলক বাক্য বলে। যেমন-
শরীফ মাহমুদ আজ বাড়ি যাবে না।
মিন্টু চুপ করে রইল না।
২. প্রশ্নসূচক বাক্য : কোনাে ঘটনা, ভাব বা অবস্থা সম্বন্ধে কিছু জানবার ইচ্ছা প্রকাশ পেলে, তাকে প্রশ্নসূচক বাক্য বলে। যেমন-
কোথায় গিয়েছিলে সেদিন?
কেন দেশের এই দুরবস্থা?
৩. অনুজ্ঞাসূচক বাক্য : যে বাক্যের সাহায্যে কোনাে কিছু আজ্ঞা, অনুরােধ বা নিষেধ বােঝায়, তাকে
অনুজ্ঞাসূচক বাক্য বলে। যেমন-
সময় কাজে লাগাও।
দয়া করে আমাকে বসতে দিন।
এখন যেয়াে না।
৪. ইচ্ছা বা ইচ্ছাসূচক বাক্য : যে বাক্যের সাহায্যে আশীর্বাদ, প্রার্থনা ও ইচ্ছা প্রকাশ করা হয় তাকে
ইচ্ছাসূচক বাক্য বলে। যেমন—
তুমি দীর্ঘজীবী হও।
আল্লাহ তােমার মঙ্গল করুন।
৫. আবেগ বা বিস্ময়সূচক বাক্য : যে বাক্যে আনন্দ, বিরক্তি, ভয়, দুঃখ, ধিক্কার ইত্যাদি মনের আবেগ বােঝায়, তাকে আবেগসূচক বাক্য বলে। যেমন—
কি আনন্দ! আমাদের টিম জিতেছে।
ওঃ কি গরম!
ছিঃ এমন কাজ করলে?
এ ছাড়াও অর্থানুসারে বাক্যকে আরাে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায় :
কার্যকারণাত্মক বাক্য
যদি কোনাে বাক্যে ক্রিয়ার নিষ্পত্তি কোনাে ও বিশেষ শর্তের অধীন এমন
বােঝায়, তাহলে তাকে কার্যকারণাত্মক বাক্য বলে।
যেমন-
বৃষ্টি হলে ফসল ভালাে হবে।
যদি বল আসব।
তুমি গেলে আমি যাব ।
সন্দেহসূচক বাক্য
যদি কোনাে বাক্যে ক্রিয়ার নিষ্পত্তি সংশয় বা সন্দেহজনক হয় তবে তাকে
সন্দেহসূচক বাক্য বলা হয়।
যেমন—
আজ বােধ হয় বৃষ্টি হবে।
খেলাটা হয়ত বন্ধ হয়ে যাবে।
ভারত খেলায় হয়ত হেরে যাবে।
ক্রিয়াহীন বাক্য
কোনাে কোনাে বাক্যে ক্রিয়া উহ্য থাকতে পারে।
যেমন—
আমি ছাত্র (হই)
তুমি একজন শিক্ষক (হও)
গণ্য করা হয়।
বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তর
→ অস্তিবাচক: বিবাহ সম্বন্ধে আমার মত যাচাই করা
অনাবশ্যক ছিল ।
নেতিবাচক: বিবাহ সম্বন্ধে আমার মত যাচাই করা
আবশ্যক ছিল না।
→ অস্তিবাচক: শ্বশুরের ও তাহার মনিবের উপর রাগ হইল ।
নেতিবাচক: শ্বশুরের ও তাহার মনিবের উপর রাগ না হইয়া
পারিল না।
নেতিবাচক বাক্যকে অস্তিবাচক বাক্যে রূপান্তর-
→ নেতিবাচক: দেশের প্রচলিত ধর্মকর্মে তাঁহার আস্থা ছিল না।
অস্তিবাচক: দেশের প্রচলিত ধর্মকর্মে তাঁহার অনাস্থা ছিল।
→ নেতিবাচক: বইগুলি হৈমর সঙ্গে একত্রে মিলিয়া পড়া অসম্ভব
ছিল না।
অস্তিবাচক: বইগুলি হৈমর সঙ্গে একত্রে মিলিয়া পড়া সম্ভব
ছিল ।
নেতিবাচক বাক্যকে প্রশ্নবাচক বাক্যে রূপান্তর -
নেতিবাচক বাক্যকে প্রশ্নবাচক বাক্যে রূপান্তর করতে হলে
(ক) কি, কী ইত্যাদি প্রশ্নবােধক সর্বনাম, ক্রিয়া বিশেষণ,
অব্যয়পদ যােগ করতে হয়।
(খ) নেতিবাচক বাক্যের ‘না’ সূচক পদটি বাদ দিতে হয়
এবং
(গ) বাক্যের শেষে প্রশ্ন চিহ্ন বসাতে হয়। যেমন -
→ নেতিবাচক: মানুষটা সমস্ত রাত খেতে পাবে না ।
প্রশ্নবাচক: মানুষটা সমস্ত রাত খেতে পাবে কি?
→ নেতিবাচক: এ খবর আমরা কেহই জানিতাম না ।
প্রশ্নবাচক: এ খবর আমাদের কেহই কি জানিত?
প্রশ্নবাচক বাক্যকে অস্তিবাচক বাক্যে রূপান্তর-
এ ক্ষেত্রে প্রশ্নবাচক বাক্য থেকে (ক) প্রশ্নবাচক অব্যয় (খ) প্রশ্নচিহ্ন বাদ দিতে হয়। সেই সঙ্গে (গ) প্রশ্ন করছি, ‘জিজ্ঞাসা করছি’, ‘জানতে চাই’, ‘মনে হচ্ছে’ ইত্যাদি
ক্রিয়াপদ প্রয়ােজন ও সুবিধামতাে ব্যবহার করতে হয় ।
(ঘ) স্বগত প্রশ্নে ‘জানি না’ ক্রিয়াপদ ব্যবহার করা চলে ।
যেমন -
→ প্রশ্নবাচক: তেমন সব দ্রলােকই বা কী সুখে গ্রাম ছাড়িয়া
পলায়ন করেন?
অস্তিবাচক: তেমন সব ভদ্রলােকই বা কী সুখে গ্রাম ছাড়িয়া
পলায়ন করেন জানি না ।
→ প্রশ্নবাচক: একলা যেতে ভয় করবে না তাে?
অস্তিবাচক: একলা যেতে ভয় করবে কিনা জানতে চাই।
প্রশ্নবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তর -
এ ক্ষেত্রে সাধারণত প্রশ্নবাচক বাক্য থেকে (ক) প্রশ্নবাচক
অব্যয় বা ক্রিয়া বিশেষণ (কি, কী ইত্যাদি) বাদ দিতে
হয়। (খ) প্রশ্নচিহ্ন বাদ দিতে হয় এবং নেতিবাচক শব্দ
বর্জন করতে হয় । (না, নয় ইত্যাদি) ও বাক্যের শেষে
(গ) দাঁড়ি বসাতে হয়। যেমন -
→ প্রশ্নবাচক : পুলিশের লােক জানিবে কী করিয়া?
নেতিবাচক : পুলিশের লােক জানিবে না ।
→ প্রশ্নবাচক : তাহারা কি পাষাণ?
নেতিবাচক: তাহারা পাষাণ নয় ।
সংজ্ঞা : বাক্যের বিভিন্ন অংশ পৃথক করে তাদের পারস্পরিক সম্বন্ধ নির্ণয় প্রণালীকে বাক্য বিশ্লেষণ বলে।
ক. সরল বাক্যের বিশ্লেষণ
১. মহারাজ শুদ্ধোদনের পুত্র শাক্যসিংহ যৌবনে সংসার ত্যাগ করেন।
২. ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর (রা) দীন ইসলামের জন্য তার যথাসর্বস্ব দান করেছিলেন।
ওপরে লিখিত বাক্য দুটিকে (১) উদ্দেশ্য, (২) উদ্দেশ্যের সম্প্রসারক, (৩) বিধেয়, (৪) বিধেয়ের সম্প্রসারক
- এ চারটি অংশে বিশ্লেষণ করতে হবে।
উদ্দেশ্যের সম্প্রসারক | উদ্দেশ্য | বিধেয়ের সম্প্রসারক | বিধেয় |
---|---|---|---|
(১) মহারাজ শুদ্ধোদনের পুত্র | শাক্যসিংহ | যৌবনে | সংসার ত্যাগ করেন। |
(২) ইসলামের প্রথম খলিফা | হযরত আবু বকর (রা) | দীন ইসলামের জন্য তার যথাসর্বস্ব | দান করেছিলেন। |
খ. মিশ্র বাক্যের বিশ্লেষণ
মিশ্র বাক্যের বিশ্লেষণ করতে হলে,
১. প্রথমে প্রধান বাক্যটি প্রদর্শন করতে হয়।
২. খণ্ডবাক্য (গুলাে) প্রদর্শন করে তাদের সঙ্গে প্রধান বাক্যের সম্বন্ধ উল্লেখ করতে হয়।
৩. প্রধান, এবং অপ্রধান খণ্ডবাক্যের মধ্যে কোনাে সংযােজক পদ থাকলে তাও দেখাতে হয়।
যেমন-আমি স্থির করলাম যে, এরূপ অল্প বয়স্ক বালককে পাঠাব না।
এখানে প্রধান বাক্য-(১) আমি স্থির করলাম; সংযােজক পদ-যে; বিশেষ্য-স্থানীয় খণ্ডবাক্য – (২) অল্প বয়স্ক বালককে পাঠাব না।
গ. যৌগিক বাক্যের বিশ্লেষণ
যৌগিক বাক্যের বিশ্লেষণ করতে হলে
১. প্রত্যেকটি স্বাধীন বা নিরপেক্ষ বাক্যকে সরল বাক্যের ন্যায় বিশ্লেষণ করতে হবে।
২. কোনাে সংযােজক অব্যয় থাকলে তা প্রদর্শন করতে হবে।
যেমন- ত্যাগ এবং জ্ঞান মানুষকে মুক্তির পথে
পরিচালিত করে।
এখানে দুটি বাক্য আছে।
যেমন –
(১) ত্যাগ মানুষকে মুক্তির পথে পরিচালিত করে।
(২) জ্ঞান মানুষকে মুক্তির পথে পরিচালিত করে। বাক্য দুটির সংযােজক অব্যয় ‘এবং'।
প্রশ্ন : ভাষার মূল উপকরণ কী?
উত্তর: বাক্য।
প্রশ্ন : ভাষার প্রাণ কী?
উত্তর : অর্থবােধক বাক্য।
প্রশ্ন:বাক্যে এক পদের পর অন্য পদ শােনার ইচ্ছাকে কী বলে?
উত্তর: আকাঙ্ক্ষা
প্রশ্ন : বাক্যের গুণসমূহ কী?
উত্তর : বিশ্বনাথ কবিরাজ সাহিত্য দর্পণে
বলেছেন : বাক্যং স্যা
যােগ্যতাকাক্ষাসক্তিযুক্তঃ পদোচ্চয়ঃ ।
অর্থাৎ আকাঙ্ক্ষা, আসত্তি, যােগ্যতা
তিনটি বাক্যের গুণ।
প্রশ্ন : বাক্যের আকাঙ্ক্ষা কাকে বলে?
উত্তর : বাক্যের অর্থ স্পষ্টকরণের জন্য এক পদের
পর অন্যপদের যে সংস্থাপন, বাক্য পূর্ণ না
হওয়া পর্যন্ত শ্রোতার যে না-মেটা কৌতূহল, তাকে বাক্যের আকাঙ্ক্ষা বলে ।
যেমন : কাজল নিয়মিত লেখাপড়া। এই বাক্যে আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয় নি।
প্রশ্ন : আসত্তি কাকে বলে?
উত্তর : বাক্যের পদগুলিকে অর্থসঙ্গতিক্রমে পূর্বাপর সন্নিবিষ্ট করার নাম আসত্তি ।
যেমন : করে ১৯৭১ বাংলাদেশ স্বাধীনতা সালে অর্জন। এই বাক্য আসত্তিহীন ।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। আসত্তিপূর্ণ বাক্য।
প্রশ্ন : আসত্তি অর্থ কী?
উত্তর : আসত্তি অর্থ মিলন বা নৈকট্য বা পরিস্পরিক সংযােগ ।
প্রশ্ন : যােগ্যতা কী?
উত্তর : বাক্যের অন্তর্গত পদসমূহের বিশ্বাসযােগ্য
ভাবসম্মিলনের নাম যােগ্যতা। সাধারণ
গদ্যের ক্ষেত্রে যােগ্যতার বিচার হয়,
কাব্যের ক্ষেত্রে নয়। যেমন : ‘চাদে বসে
মা শিশুকে ছাদ দেখাচ্ছেন। এই বাক্য
গদ্যে যােগ্যতাহীন । তবে কাব্যে ভুল নয় ।
অনুরূপভাবে, হাজার বছর ধরে আমি পথ
হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে’- এ পঙক্তি
কবিতায় মান্য হলেও গদ্যে যােগ্যতাহীন
বলে বিবেচিত
প্রশ্ন : বাক্যে কী কী থাকলে তা যােগ্যতাহীন
বলে বিবেচিত হয়?
উত্তর : রীতিসিদ্ধ অর্থবাচকতা, দুর্বোধ্যতা,
উপমার ভুল প্রয়ােগ, বাহুল্যদোষ,
বাগধারার রদবদল, গুরুচণ্ডালী দোষ
ইত্যাদি ।
প্রশ্ন : গুরুচণ্ডালী দোষ কাকে বলে?
উত্তর : তৎসম শব্দের সঙ্গে দেশীয় শব্দের একত্র
ব্যবহার গুরুচণ্ডালী দোষ সৃষ্টি করে ।যেমন : ‘ঘােড়াশকট' গুরুচণ্ডালী দোষে
দুষ্ট। হবে ঘােড়াগাড়ি বা অশ্বশকট
একইভাবে, “শবপােড়া হবে না। হবে
“শবদাহ' বা 'মড়াপােড়া'।
প্রশ্ন: “শবপােড়া’ শব্দটিতে কী দোষ দেখা যায় ?
উত্তর: গুরুচণ্ডালী দোষ
প্রশ্ন: কোনটি বাগধারার শব্দ পরিবর্তনজনিত ভুলের উদাহরণ?
উত্তর: গােড়ায় গলদ ।বাগধারার পরিবর্তন করলে শব্দ তার যােগ্যতা হারায়, যেমন-
অরণ্যেরােদন না বলে অরণ্যে ক্রন্দন বললে শব্দ তার যােগ্যতা হারাবে।
প্রশ্ন: কোন বাক্যাংশটি গুরুচণ্ডালী দোষযুক্ত?
উত্তর: শবদাহ
প্রশ্ন : বাক্য কত প্রকার?
উত্তর : তিন প্রকার । সরল, মিশ্র বা জটিল,
যৌগিক বাক্য।
প্রশ্ন : সরল বাক্য কাকে বলে?
উত্তর : যে বাক্যে একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া
থাকে এবং যা অন্য কোনাে বাক্যের সঙ্গে
যুক্ত কিংবা সম্পর্কিত নয় । সরল বাক্যকে
সাধারণ বাক্যও বলে। যেমন : বিমল খুব
ভাল ছাত্র।
প্রশ্ন : মিশ্র বা জটিল বাক্য কাকে বলে?
উত্তর : একটি প্রধান বাক্যের সঙ্গে অঙ্গীভূত এক বা
একাধিক খণ্ড বাক্য সাধারণভাবে বা
কোনাে অনুগামী সমুচ্চয়ী অব্যয় বা
সাপেক্ষ সর্বনাম দিয়ে যুক্ত হয়ে পরস্পর
সাপেক্ষভাবে ব্যবহৃত হলে তাকে মিশ্র বা
জটিল বাক্য বলে। যেমন : 'কাকলি বলল
যে, শম্পাই কাজটি করেছে। এখানে
কাকলি বলল যে প্রধান বাক্য আর
অপ্রধান বাক্য হলাে, শম্পাই কাজটি
করেছে ।
প্রশ্ন : যৌগিক বাক্য কাকে বলে?
উত্তর: সম্পূর্ণ পৃথক ও নিরপেক্ষ একাধিক
খণ্ডবাক্য সংযােগবাচক অব্যয়ের সাহায্যে
(যেমন : ও, অথবা, এবং, কিন্তু, অথচ,
কিংবা, বরং, তথাপি প্রভৃতি) যুক্ত হয়ে
পরিপূর্ণ অর্থপ্রকাশ করলে তাকে যৌগিক
বাক্য বলে। যেমন : জয়দেবপুরের
ভাওয়াল রাজারা কার্জন হলের প্রতিষ্ঠাতা
ছিলেন এবং তাঁরা হলের নির্মাণ ব্যয়
সম্পূর্ণ বহন করেন ।
প্রশ্ন: বাক্যে রূপান্তর কর
১. যে ভিক্ষা করতে এসেছে, তাকে ভিক্ষা দাও। (সরল বাক্যে)
২. তাকে দেখা মাত্রই আমরা চলে গেলাম। (মিশ্র বাক্যে)
৩. সত্য কথা বল নি, সুতরাং বিপদে পড়েছ। (সরল বাক্যে)
৪.যখন দুর্দিন আসে তখন দুঃখও আসে। (যৌগিক বাক্যে)
৫. যদিও তার টাকা আছে, তথাপি তিনি দান করেন না। (যৌগিক বাক্যে)
৬. অপরাধ স্বীকার কর, তােমাকে কোনাে শাস্তি দেব না। (মিশ্র বাক্যে)
উত্তর:
১। ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও।
২। যখনি আমরা তাকে দেখলাম, তখনি আমরা চলে গেলাম।
৩। সত্য কথা না বলায় বিপদে পড়েছ।
৪। দুর্দিন এবং দুঃখ একসঙ্গে আসে।
৫। তার টাকা আছে, কিন্তু তিনি দান করেন না।
৬। যদি তুমি অপরাধ স্বীকার কর, তাহলে তােমাকে কোনাে শাস্তি দেব না।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup