আহমদ ছফা একজন বিশিষ্ট কথাশিল্পী, প্রাবন্ধিক, কবি ও অনুবাদক। সাহিত্য সাধনায় ব্যতিক্রমধর্মী বৈশিষ্ট্যের জন্য খ্যাতিলাভ করেছিলেন। বিষয়বস্তু নির্বাচনে, বক্তব্য প্রকাশে ও যুক্তিতর্কের উপস্থাপনায় তিনি নিঃসন্দেহে স্বাতন্ত্রের অধিকারী এবং স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল।
আহমদ ছফার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘ওঙ্কার' (১৯৭৫)। এ উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহ বর্ণিত হয়েছে একজন কথকের উক্তিতে। নায়কই কথক। নায়কের বাবার সংকটকালে ধূর্ত মােক্তার আবু নসরের কূটচক্রে তার বােবা মেয়েকে বিয়ে করতে হয়। আবু নসর মােক্তারের চক্রান্তে নায়কের বাবার ভিটেমাটি হাতছাড়া হয়েছিল। আবু নসর মােক্তারে সঙ্গে আইয়ুব খানের প্রত্যক্ষ যােগাযােগ ছিল। ফলে যেকোন রকম অনাচার করা তার পক্ষে অসম্ভব ছিল না। এই বােবা মেয়ের পরিবর্তনকে বাঙালি জাতিসত্তার পরিবর্তনের রূপক মনে করা হয়েছে। বােবা মেয়ের ধ্বনিহীন জীবন যেন আইয়ুবের স্বৈরশাসনের নিস্তব্ধ বাংলাদেশের প্রতীক।
ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে বাঙালির নবজাগৃতি ঘটে। আন্দোলনের প্রবল অভিঘাতে বাঙালির অসারতা দূর হয়, বাঙালি জেগে ওঠে। পুলিশের গুলিতে আসাদ নিহত হলে ঢাকার রাজপথ বিক্ষুব্ধ মিছিলে বাংলাদেশের আগ্নেয় আত্মার জ্বালামুখ’ হয়ে ওঠে।
গণআন্দোলনে বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিতে সেই বােবা বৌটি যন্ত্রণা ও দ্রোহে একটি ধ্বনি উচ্চারণ করে বাংলা'। বােবা বৌয়ের রক্তাক্ত আত্মঘােষণার প্রতীকীর মাধ্যমে দেশের স্বাধীন সত্তার উত্তরণের ইঙ্গিত ফুটে ওঠে। “ওঙ্কার’ কথাটি হিন্দু পুরাণের অর্থ অনুসারে সকল ধ্বনির মূল বােঝায়। একজন বােবা মেয়ের ধ্বনির প্রতীকে বাংলাদেশের সংগ্রামী চেতনার পরিচয় দেওয়া হয়েছে।
এটি মূলত '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পটভুমিতে লেখা হয়েছে। আহমদ ছফার এ উপন্যাসে সমকালীন উত্তাপই শুধু নয় সমকালের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার শৈল্পিক সাধনাও প্রকাশ পেয়েছে।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup