বাংলা সাহিত্যে উপন্যাস সম্পূর্ণরূপে আধুনিক কালের সৃষ্টি। উপন্যাসের বাহন গদ্য। ১৮০১ থেকে বাংলা গদ্যের যাত্রা শুরু হলেও বাংলা উপন্যাস সৃষ্টিতে বেশ খানিকটা সময় লাগে।
প্যারীচাঁদ মিত্রের আলালের ঘরের দুলাল' (১৮৫৭) উপন্যাসের আদলে গঠিত হলেও সার্থক উপন্যাসের জন্য আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হয় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পর্যন্ত। তার হাত ধরেই বাংলা সাহিত্যে সৃষ্টি হয় সার্থক উপন্যাস। তার দ্বিতীয় শিল্প সফল উপন্যাস 'কপালকুণ্ডলা’ (১৮৬৬)। নিগূঢ় ভাবসঙ্গতির জন্য কপালকুণ্ডলা'কে রােমান্সধর্মী উপন্যাস বলা হয়।
অরণ্যে এক কাপালিক-পালিতা নারী কপালকুণ্ডলাকে কেন্দ্র করে এ উপন্যাসের কাহিনি গড়ে উঠেছে। সামাজিক সংস্কারের সঙ্গে অপরিচিতা এই নারীর নবকুমারের সঙ্গে বিয়ে এবং কপালকুণ্ডলার সমাজবন্ধনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব এই কাহিনির মূল ঘটনা।
কুপালকুণ্ডলার মধ্যে যে রহস্য সেই রহস্য উদ্ঘাটনই উপন্যাসের প্রধান বিষয়। নির্মম প্রকৃতি-প্রীতি ও বিশ্ব প্রকৃতির গভীর গম্ভীর সৌন্দর্য সত্তার অপরূপ পরিচয়ে কপালকুণ্ডলা অনন্য, অসাধারণ মহিমার জন্মদাত্রী । বাংলা সাহিত্যে সর্বপ্রথম বিশ্ব প্রকৃতির রহস্যময় অনুভব কপালকুণ্ডলা' উপন্যাসেই প্রত্যক্ষগােচর।
বিষয়বস্তুর অভিনবত্বে, চরিত্র সৃষ্টির দক্ষতায়, গল্প বলার সাবলীলতা, ঘটনা সন্নিবেশ, পরিবেশ রচনা, ভাষা নির্মাণ ইত্যাদি ব্যাপারে কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাসে যে কৃতিত্ব প্রদর্শিত হয়েছে তা শিল্পীর শিল্প সচেতনতার পরিচয় বহন করে। এ উপন্যাসে শিল্পী রােমান্সকে ব্যবহার করেছেন কিন্তু তাকে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করেননি। গঠন-কৌশলের দিক থেকে উপন্যাসটি অনবদ্য।
উপন্যাসটি গ্রিক ট্র্যাজেডির মত সরল রেখায়, অসর্পিল গতিতে, সবধরনের বাহুল্য বর্জন করে অবশ্যম্ভাবী বিষাদময় পরিণতির দিকে ছুটে চলেছে, প্রত্যেক অধ্যায়ে এক নিগূঢ় কলা-কৌশল নিয়ন্ত্রিত হয়ে কেন্দ্রাভিমুখী হয়েছে।
কপালকুণ্ডলা’য় যে গুণটি খুব তীব্র তা হচ্ছে উপন্যাসটির অন্তর্নিহিত ভাবটির অসামান্য মৌলিকতা । অনেকের মতে এটি বঙ্কিমের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। এ উপন্যাসের উল্লেখযােগ্য চরিত্র- কুপালকুণ্ডলা,নবকুমার, কাপালিক, মতিবিবি প্রমুখ।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup